বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গত কয়েক বছরে উলেস্নখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে। বিশেষ করে, দৈনন্দিন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং মুদ্রাস্ফীতির সমস্যা দেশের জনগণের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি হলো একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া যেখানে অর্থের মূল্য কমে যায় এবং দ্রব্যের মূল্য বাড়তে থাকে। এটি সাধারণত একাধিক কারণের ফলাফল হিসেবে ঘটে, যার মধ্যে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, চাহিদা-অর্থনীতির পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব অন্তর্ভুক্ত। মুদ্রাস্ফীতি বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি গত কয়েক বছরে বেড়েছে, যা সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ত্রিমাসিকে, মুদ্রাস্ফীতি হার ৭%-এর অধিক পৌঁছেছে। এটি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে সংকুচিত করেছে এবং সমাজের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। অতিরিক্ত টাকা সরবরাহ- কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন অর্থ সরবরাহ বাড়ায়, তখন বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহের অভাব- খাদ্য এবং অন্যান্য মৌলিক পণ্যের সরবরাহ কমে গেলে দাম বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশে খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি একটি গুরুতর সমস্যা। ২০২২ সালের পর থেকে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২০-৩০% এরও বেশি। এই ঊর্ধ্বগতির পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। বাংলাদেশের খাদ্যপণ্যের বাজার মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- পরিবহণ খরচের বৃদ্ধি, উৎপাদন খরচের বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে, চালের দাম ১৫-২০% বেড়েছে, যা কৃষকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (ইইঝ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ত্রিমাসিকে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ১০%-এর বেশি হয়েছে। বিশেষ করে চাল, আটা, তেল এবং মাংসের দাম উলেস্নখযোগ্য হারে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবস্বরূপ বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহণ ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের স্বরূপ খরা, অতিবৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতি।
বাংলাদেশ সরকার মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
মুদ্রানীতি পরিবর্তনস্বরূপ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়েছে।
মূল্য নিয়ন্ত্রণস্বরূপ সরকারের পক্ষ থেকে কিছু খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা।
সাবসিডি ব্যবস্থা হিসেবে কৃষকদের জন্য সাবসিডি প্রদান।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। নিম্নআয়ের মানুষ খাদ্য ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এর ফলে সামাজিক অস্থিরতা এবং জনবিক্ষোভেরও আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সাহায্য এবং সহযোগিতার প্রয়োজন হতে পারে। উন্নত দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এই সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করতে হবে। বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতে কীভাবে পরিবর্তিত হবে, তা অনেকাংশে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করছে। তবে সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।
বাংলাদেশে দৈনন্দিন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং মুদ্রাস্ফীতি একটি জটিল সমস্যা। এর সমাধানে সরকার, জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায়ের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। ভবিষ্যতে এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, যাতে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
মাহবুবুল ইসলাম
শিক্ষার্থী
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়