দাম বেড়েছে ভোজ্যতেলের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
নিত্যপণের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসছে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে যে, ডিমের পর সবজি, এরপর পেঁয়াজ, তারপর চাল আর এবার ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে সয়াবিন ও পাম তেল, আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে খোলা তেল, রান্নার জন্য যে তেলে ভরসা করে নিম্ন আয়ের মানুষ। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে সবচেয়ে ভোগান্তি ও দুর্বিষহ পরিস্থিতির শিকার হয় নিম্ন আয়ের মানুষ। ফলে, যখন জানা যাচ্ছে, রান্নার জন্য যে তেলে ভরসা করে নিম্ন আয়ের মানুষ সেটির দাম বাড়ল তখন এটি আমলে নেওয়া জরুরি।
তথ্য মতে, খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম এক মাসের ব্যবধানে লিটারে বেড়েছে ২০ টাকার মতো। সয়াবিন তেলের লিটার ১৭২ টাকা, পাম অয়েল ১৬২। এই দর বৃদ্ধিতে ভোজ্যতেলের বাজারে তৈরি হয়েছে এক অস্বাভাবিক চিত্র- যেখানে বোতলজাত তেলের চেয়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেশি। জানা যাচ্ছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার এখন ১৬৭ টাকা, কিছু দোকানে গায়ের মূল্যের চেয়ে বেশিতে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, এই অবস্থায় বোতলের তেল ড্রামে ঢেলে বিক্রির ঘটনাও ঘটছে। আমরা মনে করি, দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিক্রেতারা বলছেন, খোলা তেলের দাম বাড়ায় বোতলজাত তেলের সরবরাহ বন্ধ রেখেছে কোম্পানিগুলো, এটা দাম বাড়ার 'ইঙ্গিত' হিসেবে ধরে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া সয়াবিন তেলের পাইকারি দোকানদার একজন বলছেন, কোম্পানিগুলো বলতেছে তেলের নাকি সংকট অনেক। তাই অর্ডার দিয়েও আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না।
উলেস্নখ্য, মালয়েশিয়ায় পাম তেলের মজুত কমার তথ্য আসছে সংবাদ মাধ্যমে। বিশ্ববাজারে এই তেল সরবরাহের অন্যতম উৎসে এই সংকটে দামও গেছে বেড়ে। পাম তেলের বাড়তি দর সয়াবিন তেলেও প্রভাব ফেলছে বলেও খবরে উঠে এসেছে। লক্ষণীয়, দাম সহনীয় রাখতে ১৭ অক্টোবর পাম ও সয়াবিন তেলের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া, উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির তথ্য বলছে, এক মাসে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বেড়েছে ১৭ থেকে ১৮ টাকা। এক্ষেত্রে বিবেচন্য যে, খোলা তেল ও পাম তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে একজন বিক্রেতার ভাষ্য, এখন আন্তর্জাতিক বাজারে নানা কারণে দাম এখন বেশি। সেটা আমদানি করতে গিয়েও একটা ভোগান্তি পেতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারেই কিছুটা অস্থিরতা আছে।
আমরা বলতে চাই, দাম বৃদ্ধির কারণ এবং জনসাধারণের সামর্থ্যকে বিবেচনায় রেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজারে একের পর এক পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে জনসাধারণের কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে সেটি এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া, বলা দরকার, এর আগে দেশে সয়াবিন তেলের বাজারে নৈরাজ্য শুরুর বিষয়টি নানা সময়ে সামনে এসেছে- যেখানে অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লক্ষ্যে তেলের মূল্যবৃদ্ধি করে জনগণের পকেট কেটেছে। ফলে, এই দিকগুলো আমলে নেওয়া এবং বাজার মনিটরিং করতে হবে। নানা সময়ে বাজারে সয়াবিন তেলের কোনো ঘাটতি না থাকলেও অসৎ ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাজারে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করার অভিযোগও এসেছে। ফলে, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়টি বহুল আলোচিত এবং পরিস্থিতি এমন যেন তা বাজার সংস্কৃতিরই অংশ! ফলে, যখন ডিমের পর সবজি, এরপর পেঁয়াজ, তারপর চাল আর এবার ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে ভোজ্যতেল- তখন তা এড়ানো যাবে না। কেননা, দাম বৃদ্ধিতে চাপ পড়ছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। সঙ্গত কারণেই ভোজ্যতেলসহ সার্বিকভাবে বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।