বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

সমাজে সত্য-মিথ্যার মূল্যায়ন কেমন?

সত্য-মিথ্যার বিভ্রান্তির এই যুগে আমাদের উচিত বদনামের চেয়ে প্রশংসাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং প্রতিটি তথ্য যাচাই করা। এতে সমাজে শান্তি ও পারস্পরিক সম্মান বৃদ্ধি পাবে।
ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
  ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সমাজে সত্য-মিথ্যার মূল্যায়ন কেমন?

মানুষের মনোভাব ও আচরণের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো নেতিবাচক তথ্যের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ। যখন কেউ কোনো প্রশংসা করে, তখন তা খুব কম ক্ষেত্রেই আন্তরিক বলে বিশ্বাস করা হয়, বরং সন্দেহ জাগে যে হয়তো এর পেছনে কোনো স্বার্থ আছে। তবে, যখন বদনাম বা সমালোচনা করা হয়, তখন প্রায় সবাই সেটিকে নির্দ্বিধায় সত্য বলে ধরে নেয়। এই আচরণের পেছনে মানুষের প্রাকৃতিক প্রবণতা ও সমাজের কিছু প্রচলিত ধারণা কাজ করে- যা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক মূল্যবোধে গভীর প্রভাব ফেলে।

নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব

মানুষের মনের স্বভাব হলো নেতিবাচক তথ্যকে বেশি গুরুত্ব দেয়া। প্রশংসা প্রায়ই স্বার্থ বা কৃত্রিমতার সঙ্গে মেশানো মনে হয়, যেখানে সমালোচনা বা বদনামের মধ্যে সত্যের সন্ধান করার প্রবণতা বেশি। এর মাধ্যমে সমাজে গড়ে ওঠে এমন একটি চর্চা, যেখানে খারাপ খবর সহজেই প্রচার পায় এবং দ্রম্নত জনপ্রিয়তা লাভ করে। এটি মানুষের মধ্যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে এবং পারস্পরিক বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ন করে।

সামাজিক বিশ্বাসের অভাব

আমাদের সমাজে নেতিবাচক খবর বা বদনাম দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা আছে। মানুষ বিশ্বাস করে যে, বদনামের পেছনে কিছু বাস্তব সত্য লুকিয়ে থাকতে পারে, যা ভালো দিকগুলোর চেয়ে বেশি প্রভাবশালী। এর পেছনে সামাজিক মূল্যবোধের অভাব, এবং সমাজের কিছু প্রচলিত কুসংস্কার ও গুজব বড় ভূমিকা রাখে। সঠিক তথ্য যাচাইয়ের অভাবে মানুষ নেতিবাচক তথ্যকে সহজেই সত্য বলে ধরে নেয়।

আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মনোভাবের গুরুত্ব

এই নেতিবাচক মনোভাবের পরিবর্তন আনতে হলে, আমাদের উচিত নিজের আত্মবিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গিকে ইতিবাচক রাখা। কারো প্রশংসা বা ইতিবাচক দিকগুলোকে যদি আমরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারি, তাহলে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং সামাজিক বন্ধন আরো দৃঢ় হবে। সমাজের ব্যক্তিরা একে অপরকে সম্মান এবং আস্থা দিয়ে বিচার করলে সমাজের বন্ধন আরো মজবুত হয়।

\হভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে তোলা

নতুন প্রজন্মের কাছে সত্যের মূল্য ও প্রশংসার প্রকৃত গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে পারব- যেখানে নেতিবাচকতা নয়, বরং সত্যের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রশংসার যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নৈতিক শিক্ষায় গড়তে তুলতে পারলে সমাজের মানসিকতা এবং চর্চা দুইই পরিবর্তিত হবে।

সত্য-মিথ্যার বিভ্রান্তির এই যুগে আমাদের উচিত বদনামের চেয়ে প্রশংসাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং প্রতিটি তথ্য যাচাই করা। এতে সমাজে শান্তি ও পারস্পরিক সম্মান বৃদ্ধি পাবে।

বদনাম ও নেতিবাচক চিন্তা সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি করে, যেখানে প্রশংসা ও ইতিবাচক মূল্যবোধ একটি সমৃদ্ধ সমাজের মূল ভিত্তি। তাই আমাদের উচিত সঠিক মূল্যবোধের চর্চায় সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, যেখানে মানুষ একে অপরকে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার চোখে দেখবে।

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম : কলামিস্ট, সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে