বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

দুর্দশায় নিম্নআয়ের মানুষ

সঠিক পদক্ষেপ নিন
  ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দুর্দশায় নিম্নআয়ের মানুষ

যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তাতে নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। গণ-অভু্যত্থানে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের এক উলেস্নখযোগ্য অংশ ছিলেন শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য। কাজেই এই অভু্যত্থানের মধ্যে ক্ষমতায় আসা অন্তর্র্বর্তী সরকারের বিশেষ দায়িত্ব হলো, শ্রমজীবী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিরুদ্ধে চলমান অর্থনৈতিক বৈষম্য ও নিপীড়নের অবসান ঘটানো, তাদের জীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি আনার চেষ্টা করা।

অন্তর্বর্তী সরকার শ্রম খাত সংস্কার কমিশন গঠন, পোশাক খাতে নূ্যনতম মজুরি পুনর্বিবেচনা ও শ্রম আইন সংশোধনের মতো ইতিবাচক কতকগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি অন্তর্র্বর্তী সরকার এমন কিছু তৎপরতা চালিয়েছে, যেগুলোর মধ্যে অভিজাত শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন মোকাবিলা, ফুটপাতের হকার উচ্ছেদ ও ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণে সরকারের আচরণকে ঠিক শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্তবান্ধব বলা যাবে না। সেই সঙ্গে রয়েছে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা।

১৮ দফার ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে ১০ অক্টোবরের মধ্যে সব বকেয়া পরিশোধ করার কথা থাকলেও দেখা গেল, কোনো কোনো পোশাক কারখানার মালিক ওই সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করেননি। ফলে, শ্রমিকদের আবার রাস্তা নামতে হয়। দেখা গেল, অন্তর্র্বর্তী সরকার মালিকপক্ষকে প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী বকেয়া পরিশোধে বাধ্য করতে পারছে না; বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন থামানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতেই মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে নিরুপায় হয়ে বিক্ষোভে নামা কারখানার শ্রমিকদের ওপর গত ২৩ অক্টোবর গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গুলিতে আহত হয়ে ২৫ বছর বয়সি পোশাকশ্রমিক চম্পা খাতুন ২৭ অক্টোবর মারা যান। এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ম্যাঙ্গোটেক্স কারখানার শ্রমিক কাউসার আহমেদ খান (২৬)। এছাড়া, পুনর্বাসন ছাড়াই কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও গুলিস্তান থেকে হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে।

বিগত সরকারের সময় ব্যাপক জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথা বলা হলেও বাস্তবে দেশে আনুষ্ঠানিক খাতে মানসম্মত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। ফলে, দেশের শ্রমজীবীদের ৮৫ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এদের একটি উলেস্ন্যখযোগ্য অংশ হলো ফুটপাতের হকার বা রিকশাচালক। দেশে কর্মসংস্থানের সমস্যার সমাধান না করে এদের রাস্তা থেকে উচ্ছেদ করা ভীষণ অমানবিক আচরণ। হকার উচ্ছেদ ছাড়াও আরও একটি অমানবিক আচরণের দৃষ্টান্ত হলো ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করে নিলামে তুলে বেচে দেওয়া।

সরকার বিভিন্ন নিত্যপণ্যের শুল্ক কমিয়ে আমদানি উৎসাহিত করে মূল্য কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এই কৌশল কতটা কার্য হয়েছে সেটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে সরকার আলু আমদানির শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে এবং ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে। এরপর কিছু পরিমাণ আলু আমদানিও হয়। কিন্তু এর ফলে, আলুর দাম কমেনি। গত দুই সপ্তাহে আলুর দাম কেজিতে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কমেনি পেঁয়াজের দামও। চালের দামও বৃদ্ধি। ফলে, দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে দুর্দশা থেকেই যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের সঠিক পদক্ষেপ জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে