রেমিট্যান্স বাড়ছে

অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে রেমিট্যান্সের উলেস্নখযোগ্য অবদান রয়েছে। ফলে, রোমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে তা যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি রেমিট্যান্স বাড়লে সেটি আশাব্যঞ্জক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বাড়ছে রেমিট্যান্স। যেন রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া লেগেছে- যা ইতিবাচক। তথ্যমতে, গত তিন মাসে প্রবাসী নাগরিকদের কাছ থেকে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজের হিসাব খতিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রবাসীরা গত তিন মাসে ৭.০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। এছাড়া এটাও উলেস্নখ্য, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাড়ে চার মাসেই ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে রেমিট্যান্স। জুলাই মাস থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১০ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৭ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন বা ৭৮৮ কোটি ডলার। একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। রেমিট্যান্সের পাশাপাশি ভালো রপ্তানি আয়ের কারণে ডলার বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরছে বলেও জানা যাচ্ছে। লক্ষণীয় যে, রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে তা যেমন উদ্বেগের, তেমনি যখন রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে, তখন এই অগ্রগতি ধরে রাখাসহ সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া, বলার অপেক্ষা রাখে না, দক্ষ শ্রমিক বাড়লে বিশ্বে দেশের সুনাম বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন নতুন শ্রমবাজার তৈরি হবে। ফলে, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির দিকেও নজর দিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, অবৈধ পথে বিদেশে অর্থ পাচার সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নিয়েও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বলা দরকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শুধু গত ১৩ নভেম্বর প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৩ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। চলতি মাসের ১৩ দিনে এসেছে ১০৯ কোটি ডলার। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, গত বছরের নভেম্বর মাসের ১৩ দিনে যেখানে ১০০ কোটি ডলার এসেছিল। এ হিসাবে চলতি মাসের এ কয়েকদিনে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি ডলার বা ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৯৮৪ কোটি ডলার দেশে এসেছে। অর্থাৎ চার মাসে বেড়েছে ২৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ৫৭৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। যে কারণে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে ডলারের দর ১২০ টাকায় স্থিতিশীল আছে বলে জানা যাচ্ছে। আবার দুই দফায় আকুতে ২৮৭ কোটি ডলার এবং আগের সরকারি দেনা ১৫০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। এর পরও রিজার্ভ রয়েছে ১৮ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। গত জুলাই শেষে যা ২০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার ছিল বলে জানা যায়। সর্বোপরি বলতে চাই, বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নেই জরুরি। দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং অগ্রগতিতে রেমিট্যান্স ভূমিকা রাখছে। ফলে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে উদ্যোগী হতে হবে। স্মর্তব্য, নানা সময়ে রেমিট্যান্সে ধস নামার বিষয়টি সামনে এসেছে। ফলে, প্রবাসী আয়ে ধস নামলে বিষয়টি যেমন এড়ানো যাবে না, তেমনি রেমিট্যান্সের অগ্রগতি ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। মনে রাখতে হবে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই ইতিবাচক। ফলে, প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা জরুরি। আর সেই লক্ষে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও।