বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সেশনজট সমস্যা। অনেক নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার স্বপ্ন দেখে যখন অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজেদের স্বপ্নে পূরণ করতে পেরে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পায় তখন তাদের আনন্দের সীমা থাকে না। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই তাদের মধ্যে আনন্দের পরিবর্তনে হতাশায় নিমজ্জিত হতে দেখা যায়। তখন তারা পড়াশোনার নয় বরং অনার্স কয় বছরে শেষ করতে পারবে এই বিষয়ে মনোনিবেশ করতে বাধ্য হয়। ফলে পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল, ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের দুর্ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। যেখানে পাঁচ বছরে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করার কথা সেখানে সময় লেগে যাচ্ছে প্রায় সাত থেকে আট বছর। এমনও দেখা যায় তারই শিক্ষাবর্ষের অন্য বন্ধুরা পড়াশোনা শেষ করে কর্মজীবনের প্রবেশ করে ফেলে অথচ তার চাকরি পরীক্ষায় বসতে পারার সুযোগটা পর্যন্তও হয়ে ওঠে না। এমতাবস্থায় পারিবারিক চাপ এবং মানুষের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, যা একজন শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। এছাড়াও নিম্ন্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে যেখানে পড়াশোনার খরচ বহন করাটাই কষ্টকর সেখানে অতিরিক্ত বছরের খরচ বহন করার সক্ষমতা না থাকায় এবং বিভিন্ন জটিলতার কারণে অনেক শিক্ষার্থী শেষ সময়ে ঝরে পড়তে বাধ্য হয়। আবার কোনো কোনো শিক্ষার্থী বেছে নিতে বাধ্য হয় আত্মহত্যার পথ। যদিও এই সিদ্ধান্তটি কাম্য নয়, কিন্তু চূড়ান্ত হতাশা থেকেই তারা এ সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া তারা তাদের সামনে আর কোনো পথ খুঁজে পায় না। বর্তমান বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আত্মহত্যা সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পূর্ববর্তী তথ্যানুসারে ২০২১ সালে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১০১ জন ও ২০২২ সালে দেশে আত্মহত্যাকারী স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৩২ জন। এসব প্রাণ অকালে ঝরে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট সমস্যা। নিজের এবং পরিবারের আকাশ সমান স্বপ্ন মুহূর্তের মধ্যেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়। কিন্তু এই দায় কার? মূলত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, শিক্ষকদের অবহেলা, সঠিক সময়ে ফলাফল প্রদানের ব্যর্থতা এবং ক্রুটিপূর্ণ অধ্যাদেশ এই সেশনজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ। ইয়ার সিস্টেম চালু এই সমস্যা কিছুটা নিরসন করতে পারে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিস্টেম চালু রয়েছে। সেশন সিস্টেমে মূলত এক বছরে দু'টি সেমিস্টার থাকে। ফলে পরীক্ষা গ্রহণ এবং ফলাফল প্রদানের একটু দেরি হওয়ায় ফলে শিক্ষার্থীদের অনেকটা জটে পড়তে হয়। যদি বছরের একটি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়, তাহলে অতিরিক্ত সময় নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এছাড়াও এই সমস্যা দূরীকরণে আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষকরা কোর্স সম্পন্ন করার পরেও অধ্যাদেশজনিত জটিলতার কারণে পরীক্ষা নিতে পারেন না। যেমন একটি সেশন পরবর্তী ইয়ারে না ওঠা পর্যন্ত পরবর্তী সেশনের কোর্স সম্পন্ন হলেও পূর্ববর্তী সেশনের পরীক্ষা এবং ফলাফল প্রদানের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তারা চাইলেও পরীক্ষায় বসতে পারে না। এছাড়াও সেশনজট সৃষ্টির যে সব সমস্যা রয়েছে সেই সব নিয়মগুলো বর্জন করে শিক্ষার্থীবান্ধব নিয়ম-রীতি প্রণয়ন করা জরুরি। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে এই রকম ত্রম্নটিপূর্ণ নিয়মগুলো প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান; তাই এ ধরনের জটিলতা কমানোর জন্য কিছু অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যাতে এ জাতীয় সমস্যা দ্রম্নত নিরসন করা সম্ভব হয়। এক রাশ স্বপ্ন নিয়ে জীবনযুদ্ধে নানা জটিলতা পার করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এই হতাশার চিত্র কখনোই সমীচীন নয়। তাই সেশনজট নিরসনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
ইসমা খাতুন
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ ও সদস্য বাংলাদেশ
তরুণ কলাম লেখক ফোরাম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা