দেশে সাড়ে ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও মাত্র সাড়ে নয় হাজার টনের জন্য এলসি খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান। বৃহস্পতিবার দুপুরে খাদ্য ভবনে আমন সংগ্রহ কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এ সময় মূল বক্তব্য দেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। সচিব বলেন, আমরা ১৩৪ জন ব্যবসায়ীকে চাল আমদানির অনুমতি প্রদান করেছি। এসব এলসির বিপরীতে প্রায় সব চাল দেশেও প্রবেশ করেছে। উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম চড়া। যে কারণে সরকারিভাবে চাল আনতেও মিয়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে নেগোসিয়েশন করতে হচ্ছে। তাদেরকে চালের দাম কমানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চাল আমদানিতে জিরো শুল্কে নিয়ে আসা হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে উত্তরাঞ্চলে ধানের বাম্পার ফলনের কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। উৎপাদন ভালো হলে আমরা হয়তো কিছুটা ভালো অবস্থানে থাকব। তবে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এই অবস্থায় কৃষক যাতে ফেয়ার প্রাইস পান সেজন্য আমরা ধানের সংগ্রহ মূল্য বাড়িয়েছি। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে পর্যাপ্ত ধানের ফলন হলেও চাল আমদানি করা কতটা যৌক্তিক।
এটা সত্য, চালের সংকট না থাকলেও বাজারে চালের দামে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) দাম ২০০-২৫০ টাকা বেড়েছে। গত এক মাসে সব ধরনের চালের দাম গড়ে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দামে অস্থিরতার পেছনে রয়েছে মিলার, ধান-চালের মজুদদার, পাইকার ও বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অতি মুনাফালোভী সিন্ডিকেট চালের মজুদ গড়ে তুলেছে। এরাই চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। এ কারণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকারের ইতিবাচক সব উদ্যোগ। ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ ও পাইজাম জাতের চালের। এ ধরনের চালের ভোক্তা সাধারণত মধ্যবিত্ত। ঢাকার বাজারে খুচরাপর্যায়ে এ দুই জাতের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬৪ টাকায়। এ ছাড়া মোটা চালের (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ৫২-৫৫ টাকা ও চিকন চাল (মিনিকেট) বিক্রি হয়েছে কেজি ৭০-৮০ টাকা দরে। মাস তিনেক আগে মোটা চালের কেজি ৪৮-৫০, মাঝারি চাল ৫৪-৫৮ এবং চিকন চাল ৬৮-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে সরু চালের দর প্রায় ৪ শতাংশ, মাঝারি চালের ৮ ও মোটা চালের দর ২ শতাংশ বেড়েছে। তবে এক বছরের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধির এই হার আরও বেশি। এ সময় সব ধরনের চালের দর বেড়েছে গড়ে ১২ শতাংশ। বাজারে চালের অভাব নেই। চালের সংকট সৃষ্টির বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক।
আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে ভাত-প্রধান বাঙালি যদি তাদের চাহিদামতো চাল কিনতে না পারে তবে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে। বিশেষ করে মোটা চালের দাম বৃদ্ধি কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ দেশের স্বল্পআয়ের মানুষ মোটা চালনির্ভর। মনে রাখতে হবে চালের দাম বেড়ে গেলে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। সুতরাং যে করেই হোক চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পাশাপাশি চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিনিরর্ভরতা কমাতে দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।