হত্যাকান্ড পুনরাবৃত্তি রোধে উদ্যোগ জরুরি

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একের পর এক খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, হত্যা, আত্মহত্যাসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে থাকলে তা সন্দেহাতীতভাবে আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। আরও ভয়ানক বিষয় হলো- একেকটি ঘটনার ভয়াবহতা যেন আরেকটিকে হার মানায়। ফলে সার্বিকভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত, ঘৃণ্য ও বর্বর ঘটনা একের পর এক ঘটতে থাকলে তার ভয়াবহতা আমলে নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের পূর্বাচল লেক থেকে উদ্ধার হওয়া পলিথিনে মোড়ানো ৭ টুকরা মরদেহের বিষয়ে জানা যাচ্ছে তা নিখোঁজ থাকা ব্যবসায়ী জসিমউদ্দিন মাসুমের। এটি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মাসুম হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রুমা আক্তার নামে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তথ্য মতে, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতি, হ্যাকস বেস্নড ও নিহতের পরিধেয় সাফারি সু্যটও উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উলেস্নখ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার। এছাড়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুমা এই হত্যাকান্ডের কথা স্বীকারও করেছেন। এটা লক্ষণীয় যে, জানা যাচ্ছে, রুমার সঙ্গে শিল্পপতি মাসুমের অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্ককে কেন্দ্র করে গত ১০ নভেম্বর মিরপুর শেওড়াপাড়া রুমার ভাড়া বাসায় মাসুমকে প্রথমে দুধের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হত্যা করা হয়। এরপর তার মরদেহ চাপাতি ও হ্যাকস বেস্নড দিয়ে খন্ড খন্ড করে পাঠাওয়ের গাড়িযোগে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেন রুমা। তার আগে বুধবার দুপুরে রূপগঞ্জে কুড়িল-কাঞ্চন সড়কের উত্তর পাশে পূর্বাচলের ৫ নম্বর সেক্টর থেকে ৭ টুকরা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আমরা বলতে চাই, এই ধরনের ঘটনা কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে তা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। আর শুধু এই ঘটনাই নয় নানাভাবে ঘটছে হত্যা, আত্মহত্যার ঘটনা। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বগুড়ায় চার বছরের মেয়েকে হত্যা করে তার মা আত্মহত্যা করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের ডেপোলি পূর্বপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এমন তথ্য উঠে আসছে শিশু মুশফিকাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। একটি চিরকুট পাওয়া গেছে সেখানে। তাতে মৃতু্যর জন্য কাউকে দায়ী করা হয়নি। এ ছাড়া প্রাথমিক অবস্থায় দাম্পত্য কলহের ব্যাপারেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আমরা বলতে চাই, প্রতিনিয়ত এই ধরনের ভয়াবহ এবং নৃশংস হত্যকান্ড, আত্মহত্যাসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তার ভয়াবহতা কীরূপ সেটি এড়ানো যাবে না। এর আগে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। দিনদুপুরে ফিল্মি স্টাইলেও মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেছে নানা সময়ে। ফলে সামগ্রিক ঘটনা পর্যবেক্ষণসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। সাম্প্রতিককালে শিশু মুনতাহা হত্যাকান্ডের যে ঘটনা ঘটেছে তার ভয়াবহতাও যেন আদিম বর্বরতাকে হার মানায়! আমরা বলতে চাই, যখন একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটছে, আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে এমনকি একটি নিষ্পাপ শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যা করার ঘটনা ঘটছে- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা অবর্ণনীয়। এর মধ্য দিয়ে মূলত মানুষ কতটা হিংস্র হয়ে উঠছে, হয়ে উঠছে অমানবিক সেটি যেন প্রকাশ পায়। অন্যদিকে, মূল্যবোধের অভাব ও সামাজিক অবক্ষয়ের এক চূড়ান্ত রূপ যেন একেকটি হত্যাকান্ড। আমরা মনে করি, প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না, পারিবারিক কলহ, বড়দের নানা বিরোধের জেরে বিভিন্ন সময়েই নিষ্পাপ শিশুকে বলি হতে হয়েছে- যার ভয়াবহতা প্রকাশের জন্য ভাষা যথেষ্ট নয়। সমাজে এই ধরনের ঘটনা কেন ঘটছে সেই দিকগুলোসহ সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। ঘৃণ্য ও নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই খুন, ধর্ষণ, হত্যাকান্ডসহ যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটবে, এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা তৎপর থাকবে এবং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে- এমনটি কাম্য।