পরিকল্পিত নগরায়ণ ছাড়া যানজট নিরসন কি সম্ভব?

যানজট এখন শুধু রাজধানীতেই নয়, জাতির জন্যও এক বিড়ম্বনার নাম। দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিচ্ছে এই ভয়ংকর সমস্যা। যানজটের কারণে যে সময় ক্ষেপণ ঘটছে, অর্থনীতির বিচারে তার ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ। এই সমস্যা উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা একটি গুরুতর জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর প্রকাশিত হয়। বিষয়টি গভীর শঙ্কার ও উদ্বেগজনক। গুরুতর এই জাতীয় সমস্যাটি সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না; যেন ধরেই নেওয়া হয়েছে যে, সড়ক-মহাসড়কে মানুষের মৃতু্য প্রতিনিয়তই ঘটবে, কারোর কিছু করার নেই। বলতেই হয়, চরম বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে চলছে দেশের পরিবহণ খাত। আইনকানুন মানার বালাই নেই। চালক-হেলপাররা বেপরোয়া, সংঘবদ্ধ মালিক-শ্রমিকদের কাছে যাত্রীরা জিম্মি। এমনকি তাদের চাপের কাছে বারবার নতি স্বীকার করতে হচ্ছে সরকারকেও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সড়কের নৈরাজ্য দেখেও দেখে না। অনিয়ম-অদক্ষতার আখড়া পরিবহণ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ। সড়ক কেন নিয়ন্ত্রণহীন? সড়ক নিরাপদ করতে নয়া আইন হয়েছে ২০১৮ সালে। বাস্তবায়ন শুরু হয় ১ নভেম্বর ২০১৯ থেকে। শুরুতে তর্জন-গর্জন শোনা গেলেও শ্রমিক নেতাদের দেনদরবারে হঠাৎ থমকে গেছে আইন প্রয়োগের কার্যক্রম। সড়ক নিয়ে আন্দোলনে নামা 'নিরাপদ সড়ক চাই'-এর প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন উল্টো শাহজাহান খানের হুমকির মুখে পড়েন। থমকে যায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনও। রাস্তায় আগের চেয়ে বেপরোয়া চালকরা। পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক নেতারা ক্ষমতার প্রশ্রয়েই সড়কে চালাচ্ছে অরাজকতা। এমন অবস্থায় সবার এখন একটাই প্রশ্ন- সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে কবে? কারও কাছেই এর জবাব নেই। থামছে না সড়কে মৃতু্যর মিছিল। যানজটের প্রধান দু'টি কারণ হচ্ছে অবৈধভাবে রাস্তা দখল এবং ট্রাফিক আইন অমান্য করা। একটি মেগাসিটির প্রায় ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকতে হয়, কিন্তু রাজধানীতে এখন মাত্র ৮ শতাংশ রাস্তা রয়েছে। কোনো কোনো সড়ক কিছুটা প্রশস্ত হলেও সড়কের একটি বড় অংশ বেদখল হয়ে আছে। এতে রাস্তার উপর দিয়ে যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হয়। রাস্তার উপর দখলদাররা দোকান, অস্থায়ী বাজার চালু করে বসে আছে। কোথাও কোথাও লোকজন রাস্তার ওপর ছোট ছোট ঘর তৈরি করে বসবাস করছে। এ ছাড়া রাস্তার ওপর যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করতে দেখা যায়। এসবই যানজটের অন্যতম কারণ। ট্রাফিক আইন অমান্য করার ফলে রাস্তার শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। পথচারীদের অসচেতনতার কারণেও যানজট হয়ে থাকে। তারা রাস্তা পারাপার হওয়ার জন্য ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করে না। পথচারীদের রাস্তা পারাপারের সময় দুর্ঘটনা ঘটলেও যানজটের সৃষ্টি হয়। চালকদের অসচেতনতার কারণেও যানজট বাড়ছে। প্রতিদিন রাজধানীর প্রায় দেড় কোটি নগরবাসীর মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যানজটের কারণে ছিনতাই বাড়ছে। যানজটে পড়ে শিক্ষার্থীরা সঠিক সময়ে স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। অফিসগামী মানুষ সঠিক সময়ে অফিসে যেতে পারছে না। ঢাকা মহানগরীতে যানজট বিড়ম্বনার একই চিত্র। প্রসঙ্গত ঢাকা মহানগরীর দু-চারটি জায়গার নাম উলেস্নখ্য-মিরপুর-১০ গোলচত্বর ও তার পার্শ্ববর্তী রাস্তাসমূহ, বসুন্ধুরা যমুনা ফিউচার পার্ক ও তার সামনে/পেছনের রাস্তা, নিউমার্কেট এলাকার ইডেন মহিলা কলেজ এলাকা থেকে টেকনিক্যাল পর্যন্ত নানা শ্রেণির যানজটের এক অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সদিচ্ছায় এ জনদুর্ভোগের অবসান সম্ভব। অনেক সময় রোগী বহনকারী গাড়ি যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে। মুমূর্ষু রোগীর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। প্রত্যেকে সচেতন হলে যানজট অনেকটাই কমবে। পাশাপাশি রাজধানীর যানজট নিরসনে কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষপ নেবে, এটাও প্রত্যাশা। যানজট এখন শুধু রাজধানীতেই নয়, জাতির জন্যও এক বিড়ম্বনার নাম। দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিচ্ছে এই ভয়ংকর সমস্যা। যানজটের কারণে যে সময় ক্ষেপণ ঘটছে, অর্থনীতির বিচারে তার ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ। এই সমস্যা উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে অনিশ্চিত করে তুলছে। বিদেশিরা বাংলাদেশের রাজধানীকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে থাকে যানজটের কারণে। বলা যেতে পারে, যেসব কারণে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বিঘ্নিত হচ্ছে, যানজট তার অন্যতম। প্রায় সোয়া কোটি জনসংখ্যা অধু্যষিত ঢাকা মহানগরী ইতোমধ্যে বিশ্বের অন্যতম মেগাসিটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। 'মেগাসিটি' অভিধানটি গর্বের অনুষঙ্গ বলে বিবেচিত হলেও যানজটসহ নানা সমস্যায় ঢাকা মহানগরী বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সমস্যাবহুল নগরী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় যানজটের কারণে লোকসান আর ভোগান্তির কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। ঠিক কতটা অর্থনৈতিক লোকসানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, কতটা কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, মানুষ কতটা ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে, এ নিয়ে চলছে নানারকম গবেষণা। পাশাপাশি এর সমাধানের উপায় নিয়েও চলছে নানা চেষ্টা। কিন্তু কোনো কিছুতেই সফলতা আসছে না। যানজট সমস্যার রাতারাতি সমাধান হবে না। সমাধান না হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে জনসংখ্যার ঘনত্ব। ঢাকায় প্রতি একরে প্রায় ৫০০ জন বাস করে, নিউ ইয়র্কে যেখানে ২৫-৩০ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব আরও বাড়ছে। যানজটের জন্য মাত্রাতিরিক্ত অভিবাসনও দায়ী। দেশের প্রতিটি এলাকা থেকে রাজধানীতে প্রতিদিন মানুষ আসে কাজের খোঁজে। ঢাকা পুরোপুরি অর্থনীতিনির্ভর শহর হয়ে গেছে। সরকারের যেসব পরিকল্পনা, তাতে এই অভিবাসন ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। অবকাঠামোর উন্নয়ন আর আইনের কথা যতই বলা হোক না কেন, সবকিছুরই সীমাবদ্ধতা আছে। যে কোনো পর্যায়েই যাওয়া হোক, যানজট হবেই, যদি মানুষের সংখ্যা সহনীয় পর্যায়ে রাখা না যায়। এর জন্য বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। যে শহরে লোকসংখ্যা বেশি, সেখানে তিন ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থা দরকার- সারফেস, এলিভেটর ও আন্ডারগ্রাউন্ড। আমাদের এখানে শুধু সারফেসটাই আছে। এটা কোনো বড় শহরের চিত্র নয়। যানজট নিরসনে পাতাল রেলের কথাও ভাবতে হবে। তবে সবকিছু করতে হবে যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই করে। যানজট নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা তেমন কোনো কাজে আসছে না। যানজট নিরসনে প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ। বিচ্ছিন্নভাবে একক পদক্ষেপ নিয়ে এই সর্বগ্রাসী সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। রাজধানীর রাস্তার তুলনায় যানবাহনের আধিক্য যানজটের জন্য অন্যতম দায়ী। এর পাশাপাশি রয়েছে ট্রাফিক নিয়ম না মেনে চলার প্রবণতা। ফুটপাত অপদখল, রাস্তার অব্যবহারও যানজটের অন্যতম কারণ। বিশাল ঢাকা মহানগরীতে ট্রাফিক পুলিশ রয়েছে তিন হাজারের মতো। ২০০৫ সালে রাজধানীর ৫৯টি পয়েন্টে বৈদু্যতিক ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা হলেও যান্ত্রিক ত্রম্নটি তার একটি অংশকে অচল করে রেখেছে। মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের চাপে কোনো কোনো এলাকায় যান্ত্রিক ট্রাফিক সিগন্যাল অকার্যকর হয়ে পড়েছে। রাজধানীর ২১০০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে মোটরযান চলে মাত্র ২৮০ কিলোমিটার রাস্তায়। এর একটি বড় অংশ হকার এবং অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। আমাদের মতে, যানজট নিরসনে রাজধানীর রাস্তাগুলো প্রশস্তকরণ, ব্যাপক হারে ফ্লাইওভার নির্মাণ, রাজপথ থেকে হকার উচ্ছেদ এবং অবৈধ পার্কিংয়ের অবসান ঘটাতে হবে। ট্রাফিক আইন মেনে চলার ক্ষেত্রেও আরোপ করতে হবে কঠোর শৃঙ্খলা। বর্তমান সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা একটি আতঙ্কের নাম। এই আতঙ্ক ও এর ভয়াবহ থেকে নিজেদের প্রাণ রক্ষা এবং নিরাপদে রাখতে সরকারসহ সব জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। এর থেকে সবাইকে প্রথমত ট্রাফিক নিয়মকানুন অবশ্যই মেনে চলতে হবে, রাস্তা পারাপারে তাড়াহুড়ো না করা, রাস্তা পারাপারে ওভারব্রিজ ব্যবহার করা, রাস্তার মাঝখান দিয়ে না হেঁটে ফুটপাত ব্যবহার করা, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো বন্ধ করা, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ড্রাইভার নিয়োগ করা, গাড়ির ফিটনেট সার্টিফিকেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, রুট পারমিট প্রদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিআরটিএ'কে স্বচ্ছতা প্রদর্শন করতে হবে। সড়কগুলো প্রশস্ত করার পাশাপাশি ডিভাইডারের ব্যবস্থা করতে হবে, সর্বোপরি ট্রাফিক আইনকে আধুনিকীকরণ ও কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে, গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ট্রাফিক সপ্তাহ উদযাপন করতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা ডকুমেন্টারি ছবি প্রদর্শন করতে হবে ইত্যাদি। অধিকন্তু যানজট নিরসনের জন্য আধুনিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির ব্যবহার এখন অনেক শহরে কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। কিছু আধুনিক ও কার্যকরী পদ্ধতি এখানে তুলে ধর হলো। ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে রাস্তায় সেন্সর, ক্যামেরা ও রিয়েল-টাইম ডেটা এনালাইসিসের মাধ্যমে যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি ট্রাফিক লাইট, স্পিড লিমিট এবং সিগন্যালিং সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে সড়ক ব্যবস্থাপনা। ফলে, যানজট কমাতে সহায়ক হয়। স্মার্ট ট্রাফিক সিগন্যালিংয়ের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রাফিক লাইটের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। রাস্তার অবস্থান অনুযায়ী গাড়ির পরিমাণ বুঝে সিগন্যাল পরিবর্তন করা হয়। এতে যানজট কম হয় এবং যান চলাচলের গতি বাড়ে। যানজট কমানোর জন্য গণপরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন অপরিহার্য। ট্রেন, মেট্রো, বাস ও অন্যান্য গণপরিবহণের পরিধি বাড়ালে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমে যায়। গণপরিবহণের জন্য বিশেষ লেন বা পথ তৈরি করা হলে মানুষ গণপরিবহণের দিকে আকৃষ্ট হয়। অনেক শহরেই সাইকেল ও পায়ে চলাচলের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে মানুষ ছোট দূরত্বে গাড়ি ব্যবহার না করে সাইকেল বা হেঁটে চলাচল করতে পারে, যা যানজট কমাতে কার্যকর। অনলাইনে রাইড-শেয়ারিং অ্যাপিস্নকেশন ব্যবহার করে মানুষ এক সঙ্গে যাতায়াত করতে পারে। এতে কমসংখ্যক গাড়ি সড়কে চলাচল করে, ফলে যানজট কমে। কারপুলিংয়ের মাধ্যমে কর্মস্থলে যাতায়াতেও সহজতা আসে। যদি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে কর্মঘণ্টা শুরু ও শেষ করা হয়, তাহলে একই সময়ে এক সঙ্গে বেশি সংখ্যক যানবাহনের সড়কে চলাচল হ্রাস পায়। ফলে, ট্রাফিকের চাপ ও যানজট উভয়ই কমে যায়। রাস্তায় গাড়ি পার্কিং কমাতে বিশেষ পার্কিং জোন তৈরি করা যেতে পারে। স্মার্ট পার্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে মানুষ দ্রম্নত খালি পার্কিং স্পট খুঁজে পেতে পারে। এতে রাস্তা দখল করে পার্কিং কমে- যা যানজট নিরসনে সহায়ক। রিয়েল-টাইম ডেটা এবং মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে চালকরা বিভিন্ন রুটের যানজট পরিস্থিতি জানতে পারে এবং যানজটপূর্ণ রুট এড়িয়ে চলাচল করতে পারে। এর ফলে, সড়কের উপর চাপ কমে এবং যানজট কমে। যে এলাকাগুলোতে বেশি যানজট হয়, সেগুলোতে নির্দিষ্ট সময়ে ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল নিষিদ্ধ করা অথবা ফি নির্ধারণ করা যেতে পারে। এতে মানুষ বিকল্প যানবাহন ব্যবহার করতে উৎসাহিত হয়। এমন পরিকল্পনার মাধ্যমে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে যানজট কমানোর পাশাপাশি শহরের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব। বর্তমানে প্রায় দুই কোটি লোকের বসবাস মাত্র ৩০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই মহানগরীতে। দিন দিন নগরীর লোকসংখ্যাও বেড়ে চলেছে। ছোট শহরে বিপুলসংখ্যক লোকের চলাচলে সংকটও বাড়ছে পালস্না দিয়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নগরের আয়তন বাড়লেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। যানজটে প্রতিদিন মানুষের বিপুল পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্টের পাশাপাশি ব্যাপক আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ণই এজন্য দায়ী। একটি শহরে সড়কপথের পাশাপাশি বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা শহরের মধ্যে বা পাশে খাল বা দীর্ঘ লেক থাকলে সড়কে চাপ পড়ে কম। ঢাকায় এ রকম ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুযোগ থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে তা গড়ে ওঠেনি। ফলে, সড়কের উপর চাপ বেড়েছে- যার মূল্য দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, যানজট আর্থসামাজিক বিড়ম্বনাকে প্রকটতর করে তোলেছে। শৃঙ্খলা জ্ঞান ও সচেতনতায় যানজট সমস্যার সমাধান সম্ভব। পরিকল্পিত নগরায়ণ ছাড়া যানজটের নিরসন সম্ভব নয়। আধুনিক নগর পরিকল্পনা হলে যানজটের নিরসন হবে। তবে এটাই স্বতঃসিদ্ধ যে, যানজট ও জন দুর্ভোগ এড়াতে সমন্বিত পদক্ষেপ অপরিহার্য। ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ :সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, কলামিস্ট ও গবেষক