পৃথিবী রক্ষায় কার্বন নিঃসরণ শূন্যের ঘরে নামিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া, তিনি বলেছেন, 'শূন্য বর্জ্যের নীতি মানুষের ভোগে লাগাম দেবে- যা একান্ত জরুরি, কেবল তাই মানুষ ব্যবহার করবে। তাতে কোনো বর্জ্য অবশিষ্ট থাকবে না। এটা সেই জীবনধারা, যেখানে কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি মানুষ ব্যবহার করবে না। মানুষের চাহিদা মেটাবে কেবল নবায়নযোগ্য জ্বালানি। নতুন এই অর্থনীতি গড়ে উঠবে প্রাথমিকভাবে শূন্য ব্যক্তিগত লাভের নীতিতে, অর্থাৎ সামাজিক ব্যবসা হবে এর ভিত্তি।' আমরা মনে করি, পৃথিবী রক্ষায় কার্বন নিঃসরণ শূন্যের ঘরে নামিয়ে আনার যে আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা- তার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করতে হবে বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টদের। একইসঙ্গে এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটিও কাম্য।
প্রসঙ্গত, বুধবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ সম্মেলনে ভাষণে ড. ইউনূস বলেছেন, সভ্যতার গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে থাকার বিষয়টি। একইসঙ্গে একটি নতুন সভ্যতার স্ব-সংরক্ষিত ও স্ব-শক্তিশালী সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের জন্য তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক এবং যুবশক্তিকে সংগঠিত করার বিষয়ে আলোকপাত করেন। বলা দরকার, রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। আগের সম্মেলনগুলোতে যে প্রতিশ্রম্নতি বিশ্ব নেতারা দিয়ে আসছিলেন, তার বাস্তবায়ন কোন পথে হবে, সেই আলোচনা বাকুতেও ঘুরে ফিরে আসছে বলেও জানা যায়। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি; একইসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন সেগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে বিশ্ব নেতৃত্বকে কাজ করতে হবে।
উলেস্নখ্য, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ঠিক হয়েছিল, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে দেওয়া হবে না। সেজন্য ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে কার্বন ও গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ ৫০ শতাংশ কমানো হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলো যাতে অভিযোজনের সুযোগ পায়, সেজন্য উন্নত দেশগুলোর বছরে ১০ কোটি ডলার দেবে। কিন্তু এটা লক্ষণীয় যে, এরপর পেরিয়ে গেছে পাঁচ বছর, সেসব প্রতিশ্রম্নতি বাস্তবায়নের অগ্রগতি খুব বেশি নেই। ফলে, সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই।
বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া দরকার, জলবায়ু সংকট যখন মানব সভ্যতার ধ্বংস ডেকে আনার হুমকি দিচ্ছে, তখন পুরো বিষয়টিকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেছেন, মানব সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে হলে গ্রহণ করতে হবে ভিন্ন জীবনধারা, গড়ে তুলতে হবে ভিন্ন এক সংস্কৃতি। আর সেটা হতে পারে তার দীর্ঘদিনের লালিত 'থ্রি জিরো' বা 'তিন শূন্য' ধারণা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। তার শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য দারিদ্র্য আর শূন্য বেকারত্ব অর্জনের পথ ধরে মানুষ পৌঁছাতে পারে সেই নতুন জীবনধারায়- যা আত্মবিধ্বংসী নয়, বরং নিজেই নিজের আবাসভূমিকে রক্ষা করবে। এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে জলবায়ু বিপর্যয়কে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কথা বলেছেন। যেখানে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য একটি নতুন পথে নিয়ে যাবে। এছাড়া, জলবায়ু সংকট তীব্রতর হচ্ছে। আর আত্মবিধ্বংসী মূল্যবোধের প্রচার চালিয়ে যাওয়ায় আমাদের সভ্যতা গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে- এই দিকগুলো তুলে ধরেন।
সর্বোপরি বলতে চাই, ড. ইউনূস তার ভাষণে যে বিষয়গুলো আলোকপাত করেছেন তার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করতে হবে বিশ্ব নেতৃত্বকে। মানুষের চাহিদা মেটাবে কেবল নবায়নযোগ্য জ্বালানি এটি উলেস্নখ করে ড. ইউনূস বলেছেন, নতুন এই অর্থনীতি গড়ে উঠবে প্রাথমিকভাবে শূন্য ব্যক্তিগত লাভের নীতিতে, অর্থাৎ সামাজিক ব্যবসা হবে এর ভিত্তি। এটা সেই ব্যবসা কাঠামো যার উদ্দেশ্য থাকবে সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যার সমাধান করা, ব্যবসা থেকে লাভ করা নয়। সামাজিক ব্যবসার একটি বড় অংশ নজর দেবে পরিবেশ ও মানবজাতির সুরক্ষার দিকে। ফলে, এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত হবে- এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।