মুনতাহা হত্যাকান্ড দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক
প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
একের পর এক খুন, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে থাকলে আশঙ্কাজনক বাস্তবতাই স্পষ্ট হয়। আরও ভয়ানক বিষয় হলো- একেকটি ঘটনার ভয়াবহতা যেন আরেকটিকে হার মানায়। এমনকি নিষ্পাপ শিশুও রক্ষা পাচ্ছে না ঘৃণ্য, বর্বর ও নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড থেকে। ফলে, সার্বিকভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত, ঘৃণ্য ও বর্বর ঘটনা একের পর এক ঘটতে থাকলে তার ভয়াবহতা আমলে নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের জানা গেল, শিশু মুনতাহা হত্যাকান্ডের ঘটনা। যার ভয়াবহতা যেন আদিম বর্বরতাকেও হার মানায়! তথ্য মতে, সিলেটের কানাইঘাটের আলোচিত নিখোঁজ শিশু মুনতাহা হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। আটক চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ ও তিনজন নারী। এর মধ্যে একজন হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলেও খবরের মাধ্যমে জানা গেছে।
উলেস্নখ্য, খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন ৩ নভেম্বর দুপুরে তাদের পাশের বাড়িতে খেলতে যায়। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেও যখন জেরিন ঘরে ফিরছে না, তখন তার বাবা ছুটে যান ওই বাড়িতে। না পেয়ে পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও খোঁজাখুঁজি করেন তারা। কিন্তু সন্ধান মেলেনি কোথাও। উপায় না পেয়ে বাবা শামীম আহমদ যান থানায়। করেন নিখোঁজের জিডি। এ নিয়ে খবর আসে গণমাধ্যমে। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও। সন্ধান চেয়ে অনেকেই আবেগঘন পোস্ট দেন। অবশেষে আসে দুঃসংবাদ।
জানা যায়, রোববার ভোরে এক নারী মুনতাহার লাশ প্রতিবেশীর পুকুরে ফেলার চেষ্টাকালে দেখে ফেলেন স্থানীয়রা। মূলত হত্যা করে একটি ডোবায় কাদার মধ্যে পুঁতে রাখা হয়েছিল শিশুটির লাশ। লাশের গলায় রশি পেঁচানো ছিল। এছাড়া বলা দরকার, এর আগে কানাইঘাট থানা পুলিশ শনিবার গভীর রাতে আলিফজান বিবির মেয়ে নিখোঁজ মুনতাহার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শামীমা বেগম মার্জিয়াকে আটক করেছিল। মার্জিয়াকে থানা পুলিশের হেফাজতে নিয়ে আসার পর পুলিশের ভয়ে আলিফজান বিবি বসতঘরের পাশে ডোবায় পুঁতে রাখা মুনতাহার লাশ ভোরে তুলে পার্শ্ববর্তী আব্দুল ওয়াহিদের পুকুরে ফেলার চেষ্টা করছিলেন বলে জানা যায়। আমরা বলতে চাই, একটি নিষ্পাপ শিশুকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করার ঘটনা কতটা ভয়াবহ তা অবর্ণনীয়। এর মধ্য দিয়ে মূলত মানুষ কতটা হিংস্র হয়ে উঠছে, হয়ে উঠছে অমানবিক সেটি যেন প্রকাশ পায়। অন্যদিকে, মূল্যবোধের অভাব ও সামাজিক অবক্ষয়ের এক চূড়ান্ত রূপ যেন প্রকাশ পায় এমন ঘটনার মধ্য দিয়ে।
মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ জানিয়েছেন, মুনতাহার এক সময়ের গৃহ শিক্ষিকা ছিল আলিফজান বিবির মেয়ে শামীমা আক্তার মার্জিয়া। কিন্তু মার্জিয়ার খারাপ আচরণের কারণে তার কাছে মুনতাহাকে আর পড়তে দেয়নি পরিবারের সদস্যরা। এতে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে মার্জিয়া। মুনতাহার বাবা-মা'র ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য গত ৩ নভেম্বর মুনতাহাকে কৌশলে মার্জিয়া এবং তার মা আলিফজান বিবি তাদের বসতঘরে নিয়ে যায়। সেখানে মুনতাহার মুখের মধ্যে ওড়না ঢুকিয়ে এবং গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। পরে লাশ বস্তাবন্দি করে ঘরের মধ্যে রাখা হয়। ওইদিন গভীর রাতে হত্যাকারীরা মুনতাহার লাশ পলিথিনে মুড়িয়ে ডোবায় পুঁতে রাখে।
আমরা মনে করি, এই ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, পারিবারিক কলহ, বড়দের নানা বিরোধের জেরে বিভিন্ন সময়েই নিষ্পাপ শিশুকে বলি হতে হয়েছে- যার ভয়াবহতা প্রকাশের জন্য ভাষা যথেষ্ট নয়। সমাজে এই ধরনের ঘটনা কেন ঘটছে সেই দিকগুলোসহ সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। এমন ঘৃণ্য ও নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প থাকতে পারে না।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এমন নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনার ভয়াবহতাকে বিবেচনায় রেখে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। মুনতাহার হত্যাকারী চারজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের প্রত্যেককে দ্রম্নত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে এমনটিও জানা যাচ্ছে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং এই ধরনের ঘৃণ্য ও বর্বর ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।