সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, যখন প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ- তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, গত এক দিনে সাত জেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রে জানা যায়, মাদারীপুরের শিবচরে দুই মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন, দিনাজপুরে পৃথক দু'টি দুর্ঘটনায় ৩ জন, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বাসের ধাক্কায় মামা-ভাগনে, ঝালকাঠির রাজাপুরে মাহিন্দ্রা ও ট্রলির মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। অন্য জেলাগুলোর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, সিলেট ও ঝিনাইদহে একজন করে নিহত হয়েছেন। তথ্য মতে, রোববার রাত ১০টার পর থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুর্ঘটনাগুলো ঘটে।
আমরা বলতে চাই, যখন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, লাশের মিছিল ভারী হচ্ছে- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। এবারের দুর্ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষণীয় যে, মুখোমুখি সংঘর্ষ, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কা, রিকশার সঙ্গে ভ্যানের সংঘর্ষ, রাস্তা পার হতে গিয়ে ট্রাকের ধাক্কার মতো ঘটনা ঘটেছে। ফলে, এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এটাও বিবেচনায় নেওয়া দরকার, এর আগে বারবার এমন বিষয় সামনে এসেছে যে- বিপজ্জনক অভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা, ছোট যানবাহন ক্রমেই বৃদ্ধি, বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সার্ভিস লেন না থাকায় ইজিবাইক, রিকশা, অটোরিকশা মহাসড়কে নেমে আসা, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে, রাস্তার মোড় ও বাস স্টপেজগুলোতে যানজট তৈরি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সঙ্গত কারণেই, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাবসহ বিভিন্ন কারণে বেড়েছে দুর্ঘটনার পরিমাণ- এমনটিও আলোচনায় এসেছে।
আমরা বলতে চাই, এক দিনে সাত জেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে- ফলে, সড়কের ভয়াবহতা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। একইসঙ্গে কেন সড়ক নিরাপদ হচ্ছে না, কেন বাড়ছে লাশের সংখ্যা- এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। স্মর্তব্য, এর আগে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছ যে, সড়ক দুর্ঘটনার ডজন দুয়েক কারণ চিহ্নিত করা হলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় মৃতু্যর মিছিল থামছে না। বরং সড়কে লাশের সারি দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আর তার সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এটাও এড়ানোর সুযোগ নেই, গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন- দায়িত্বহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে সড়কে মৃতু্য কমছে না। একই সঙ্গে পথচারী ও যানবাহন চালকদের অসচেতনতা, যানবাহনের বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি পরিচালনা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে মনে করেন তারা। ফলে, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিতে হবে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই সড়কের ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়, যেখানে প্রতিনিয়তই মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এটাও মনে রাখতে হবে, নানা প্রতিশ্রম্নতি সত্ত্বেও সড়ক নিরাপদ হয়নি। প্রতিনিয়ত দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে- যা কাম্য হতে পারে না। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ। ফলে, একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেন ঘটছে তা আমলে নিতে হবে এবং দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।