ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানের পর দেশজুড়ে হঠাৎ করে অপরাধ বেড়েছে। এর মূলে রয়েছে কিশোর-তরুণ গ্যাং। হত্যা, মাদকব্যবসা, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জমি দখল থেকে শুরু করে এসব অপরাধী সুযোগ পেলেই নারীদেরও উত্ত্যক্ত করছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের যে কোনো স্পটে এ ধরনের সমাজবিরোধী কর্মকান্ড ঘটলেই তাদের নামটা শুরুতেই উচ্চারিত হচ্ছে। তারা এখন সমাজের বিষফোঁড়া। পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন করে কয়েক হাজার কিশোর-তরুণ অপরাধীর তালিকা বানিয়ে পুলিশ এরই মধ্যে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযানেও নেমেছে। বিগত সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলের আগে রাজধানীতে অন্তত ১২৭টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় ছিল। সারাদেশে ছিল ২৩৭টি। এসব গ্যাংয়ের সদস্য ছিল দুই হাজারের বেশি। প্রতিটি থানায় তাদের তালিকা ছিল। থানা আক্রমণ হওয়ার পর ওই তালিকা এখন হয়ত আর নেই।
সম্প্রতি কিশোর অপরাধের মাত্রা যেভাবে বাড়ছে, তা নিয়ন্ত্রণে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরিরি। প্রয়োজনে কিশোর কারাগার ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। কিশোর সংশোধন কেন্দ্রগুলোকে আরো সময়োপযোগী করে সংশোধন কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষম করে গড়ে তোলা যেতে পারে। তবে এই কিশোর গ্যাং নির্মূলে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। কিশোর-তরুণ গ্যাং ফের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠায় নতুন তালিকা ধরে পুলিশের সব ইউনিটপ্রধানকে এরই মধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি)।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে তিন মাসে ১০ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে জেনেভা ক্যাম্প অন্যতম। এসব হত্যাকান্ডের বেশিরভাগ ঘটনায় কিশোর-তরুণ। এই কিশোর-তরুণ অপরাধীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। কয়েকদিনেই যৌথ বাহিনীর অভিযানে দেড় শতাধিক অপরাধী ধরা পড়েছে- যাদের বেশিরভাগের বয়স ১৫ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। এদিকে গত ২৮ অক্টোবর চাঁদপুর শহরে অস্ত্র নিয়ে কিশোর গ্যাং মহড়া দেয় এবং তারা দুজনকে কুপিয়ে জখম করে। পরে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আট কিশোরকে আটক করে।
বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর দেশজুড়ে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। সরকার পরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার অবনতি ঘটে। বিশেষত রাজধানীর মোহাম্মদপুরে প্রতিনিয়ত ছিনতাই, ডাকাতি, চুরি ও হত্যাকান্ড বাড়ছে। বিহারি ক্যাম্প ঘিরে মাদক কারবারিরা আধিপত্য বিস্তারে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটিয়েছে। মোহাম্মদপুরে ২০টি গ্রম্নপে এক হাজারের বেশি কিশোর-তরুণ সদস্য রয়েছে।
কিশোর-তরুণ অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সমাজে অপরাধ বাড়বে এবং মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে।
আগেও কিশোর অপরাধীরা বেপরোয়া ছিল, সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিল। এখন আবার তাদের তৎপরতা চোখে লাগছে। বাড়াচ্ছে উদ্বেগও। এটা নিরসন করতে হবে সরকারকেই।
ফারজানা ইসলাম অর্পি : সামাজিক উদ্যোক্তা ও কবি