রোহিঙ্গা শিশুর নিরাপত্তা ও আঞ্চলিকতার প্রভাব
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যতদিন থাকবে ততই সংকট ঘণীভূত হবে। প্রভুরাষ্ট্র ও পূঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো নানা অজুহাতে অনুসন্ধানী কার্যক্রম করবে। তাদের টার্মকার্ড হিসেবে কাজ করবে। স্থানীয় পরিস্থিতি ভঙ্গুর হয়ে সীমানাজুড়ে নানা অপকর্ম দেখা যাবে। স্থায়ী সমাধানের জন্য চাপ প্রয়োগ করেও কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না, বরং মায়ানমার দানবীয় আচরণ করছে। ঠেকাতে সমর্থ হবে কিনা বাংলাদেশ দুশ্চিন্তার বিষয়।
প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শাহমুব জুয়েল
ভূখন্ডের নাগরিক সব সময় অস্তিত্বের মায়া নিয়ে বেঁচে থাকে। মাতৃত্বের মায়া জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচতে শেখায়, কিন্তু নির্বাসিত জীবন মানুষকে হিংস্র ও বিধ্বংসী করে তোলে। জন্ম থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী জানে তাদের দেশ মিয়ানমার কিন্তু সামরিক সরকার কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে তারা শঙ্কিত হয়ে ওঠে। নিজ ভূমি সম্পর্কে অচেতন ও অনির্ধারিত জীবনের পথে ধাবিত হয়। অসহায় হয়ে তারা বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় প্রদান করতে বাধ্য হয়, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য তারা শুধু বোঝা নয়- হুমকিস্বরূপও। ধীরে ধীরে তাদের জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশুরা জন্মগ্রহণ করে দেখে বাংলাদেশের ভূখন্ড। তাতে ভূখন্ডের অধিকার দাবি ওঠা স্বাভাবিক কিন্তু তারা এটাও যদি জানে পৈত্রিকভাবে নির্বাসিত তাহলে হবে হিংস্র ও বিধ্বংসী মানুষ। নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে তারা বসবাস করছে। বড়ো হয়ে ধীরে ধীরে দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে। নির্বাসিত জীবনে কোনো প্রত্যাশা থাকে না বরং বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করবে- যাচ্ছেতাই করবে। সামাজিকতা, দেশপ্রেম, সহনশীলতা পরস্পর শ্রদ্ধা তোয়াক্কা করবে না। ইতোমধ্যে তারা অভ্যন্তরীণ অসাধু ও দালালচক্রের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছে এবং অপকর্ম করে ধরা পড়ে বাংলাদেশের সুনাম ও খ্যাতি নষ্ট করছে। অথচ তারা বাঙালি নয়, কিন্তু দায় নিতে হচ্ছে বাংলাদেশের।
অপরিকল্পিত জনসংখ্যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাসস্থান, খাদ্য, শিক্ষা এবং চিকিৎসা সংকট দেখা যায়। ফলে, দূষিত হয় পরিবেশ। প্রতিনিয়ত জন্মগ্রহণ করছে হাজার হাজার শিশু। তাদের বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা কোনো মৌলিক চাহিদাই পূরণ করা সম্ভব হবে না। বড় কারণ, তারা জীবিকা ও জীবন ধারণের সব কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত। বছরে গড় বৃদ্ধি পাচ্ছে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। ঘনবসতি হওয়ার কারণে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া ফ্যাসাদ হাঙ্গামা লেগে আছে। কখনো কখনো হত্যাকান্ডের ঘটনাও ঘটে। মানুষকে বাধা দিয়ে রাখা যায় না, বিস্ফোরণ ঘটবে। যা হবে জনবিস্ফোরণ। এ ধোঁয়ায় কেবল বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয়। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও বিপাকে পড়বে। ছড়িয়ে পড়বে তারা। বাধা প্রদান করলে ঝাঁপিয়ে পড়বে দেশের অভ্যন্তরে। ইতোমধ্যে পাহাড়ের অভ্যন্তরে দাঙ্গার খবর পাওয়া যাচ্ছে- যা ছড়িয়ে পড়বে প্রথমত সীমানাভুক্ত দেশে। পরবর্তী সময়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তারা বসবাস শুরু করবে। জন্মগতভাবে সভ্য ও সামাজিক দায়বদ্ধতা না থাকায় হিংস্রতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে- যা নিয়ন্ত্রণ করা হবে খুব কঠিন।
আর্থিক সংকটই মানসিক উচ্ছৃঙ্খলতার জন্য দায়ী। আর্থিকভাবে অসচ্ছল জনগোষ্ঠী নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে থাকে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীও তার ব্যতিক্রম মনে হয় না। সার্বিক চাহিদা পূরণ ব্যর্থ হলে তখন হতাশাগ্রস্ত হবে এবং নিত্যনতুন উপায় খুঁজবে। অবরুদ্ধ জীবন কখনো ভালো হয় না। বাঘ যখন খাঁচায় থাকে তখন কেমন করে তা বন্দি বাঘ না দেখলে অনুমান হবে না। রোহিঙ্গা শিশুরা বন্দি হয়ে বড় হচ্ছে। পৃথিবীর আলো বাতাস ও প্রকৃতি অনুধাবনের সুযোগ নেই। যা ঝুঁকি মনে করা হচ্ছে, কিন্তু দীর্ঘ সময় তাদের আটকিয়ে রেখে আদৌ কোনো যৌক্তিক সমাধান অসম্ভব। শিশুরা আদৌ তাদের ভাগ্য ও জীবন সম্পর্কে সচেতন নয়- আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় বড়ো হচ্ছে। বর্ধিত জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ বিপাকে পড়বে শুধু তাই নয় বরং ছড়িয়ে পড়বে বিভিন্ন দেশে। এশিয়ার অন্যান্য দেশে ইতোমধ্যে তারা বাংলাদেশি পরিচয়পত্র নিয়ে প্রবাসী হিসেবে অবস্থান নিয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকার পথে পাড়ি দেওয়া তাদের সম্ভব নয় কিন্তু এশিয়াভুক্ত দেশগুলোতে যাওয়া সহজ ও ব্যয়সল্পতা।
অত্যাচারী ও ছন্নছাড়া জনগোষ্ঠীর কোনো নীতি বা ধর্ম থাকে না। তারা জীবনে বেঁচে থাকাকে বড় ধর্ম মনে করে। দুমুঠো খাবার ও স্বাচ্ছন্দ্য জীবন পেলে যে কোনো কাজ করতে পিছ পা হয় না। ধর্মীয় বিশ্বাস ও উন্মাদনা থেকে স্বতন্ত্র উন্মাদনা তৈরি হয়। নিষিদ্ধ দল বা জনগোষ্ঠী সব সময় এ ধরনের মানুষকে খোঁজে এবং আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়। বিশ্বের অনেক দেশেই নিষিদ্ধ সংগঠন ও গোষ্ঠী রয়েছে। যাদের দমনে রাষ্ট্রের নানামুখী পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়। নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো নিজেদের অনুসারী সংগ্রহ করে এবং ধীরে ধীরে জোটবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালায়। জনসম্মুখে ও নিজস্ব মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা না দেওয়ায় তারা যথেষ্ট মারমুখী ও সহিংস। তাদের মতামতগুলো বিক্ষিপ্ত ও আধ্যাত্মিক এবং আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা- যা জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করে। দেশের জাতীয় ঐক্য একটি সামষ্টিক অর্থনীতি শক্তি। মানুষের মৌলিকতা রক্ষায় উন্নয়ন সঙ্গীও বটে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে এ ধরনের সংগঠনগুলো তাদের অনুসারী করার চেষ্টা করা স্বাভাবিক। তাদের বিভিন্ন টোপ দিয়ে নিজেদের মতাদর্শে মনোনীত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। টোপ মানুষের পছন্দ, টোপে যদি বিলাসিতা, লালসা ও আয়েশী ইনার থাকে তাহলে গেলানো সহজ। দু'ভাবে গেলানো হতে পারে। এক, ধর্মীয় বিশ্বাস, দুই, বিলাসিতা ও আয়েশী জীবন। দুটোই প্রয়োজন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। সুতরাং, গলাদকরণ করা খুব-ই স্বাভাবিক। দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক বিবর্তন বিদ্যমান।
দেশের অভ্যন্তরে পারস্পরিক সম্পর্ক নেই। গণতন্ত্র হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পাকিস্তান রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি বিকলাঙ্গ ও ভঙ্গুর রাজনীতি এবং অর্থনীতির দেশ। বিশ্বাসভঙ্গ করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা হচ্ছে এবং জনরোষ ও বিরোধী দলের মাধ্যমে ক্ষমতাচু্যত হচ্ছে। ধীরে ধীরে দেশটি অকার্যকর রাষ্ট্রে উপনীত হয়েছে। ফলে, উগ্রতা ও সন্ত্রাসবাদীগোষ্ঠীর উত্থান ও আক্রমণ হচ্ছে। হত্যা করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ভারতে বিজেবি এলিটগোষ্ঠীর সঙ্গোপন নির্বাচন করে কূটকৌশলের মাধ্যমে বারবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হচ্ছে। বিরোধী মতামতকে দমন পীড়ন করা হচ্ছে। জনসম্পৃক্ততা কম থাকায় জনমনে অসন্তোষ বিরাজ করছে। কদিন আগেও চিকিৎসক অদিতিকে নির্যাতন ও হত্যা নিয়ে তুমুল হইচই হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্য সরকারের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। খুন, নির্যাতন, নিপীড়ন ও মদতে দিন দিন পুষ্ট হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্র্রদায় ভয় ও আতঙ্কে দিনযাপন করছে। কট্টরপন্থি সরকার হওয়ায় মুসলিম সমাজ ও উদার মতাদর্শের লোকজন আক্রান্ত হচ্ছে। নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো নয়- কট্টরপন্থি চিন্তাই আগ্রাসী করে তুলেছে। মিয়ানমারের জান্তা সরকার অং সাং সুচিকে বন্দি করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দমন, হত্যা ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করছে। গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে খালি করেছে আরাকান প্রদেশ। জনঢলের মতো বাংলাদেশে পুশ করেছে রোহিঙ্গাদের। তারা এখানে নিরাপদ আছে তা কিন্তু নয়, তাদেরও বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা মোটিভেট করছে। তাদের মধ্যে সভ্যতা ও সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের যথেষ্ট অভাব বিদ্যমান। আন্তর্জাতিক সংস্থা পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করলেও দুর্দশায় পড়বে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ। রোহিঙ্গারা কারো কথা শুনবে না, জন্মগতভাবে তারা নিজস্ব চিন্তা থিওরি নিয়ে বড় হয়। শুধু বেঁচে থাকা জীবন জীবিকার জন্য তারা কথার গুরুত্ব দেয়। তখনই তাদের মস্তিষ্ক ওয়াশ হয়ে দলভুক্ত হয়।
ত্রিদেশীয় সংকট সংঘাত ও অশুভশক্তির উত্থানের কারণ হবে রোহিঙ্গা। প্রধান কারণ হচ্ছে বিষাক্ত রাজনীতি। বিভিন্ন বুর্জোয়া ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিও সে ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাশা করে। চীন রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে স্নায়ুবুদ্ধি কাজে লাগায়। বাংলাদেশের কাঁধে বিশাল জনগোষ্ঠী অনুপ্রেবেশ হওয়া সত্ত্বেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করেছে। তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার, ভারত ও বাংলাদেশের বাণিজ্য করা এবং চাপে রেখে পরাশক্তির উত্থান ব্যাহত করা। তারা এশিয়ায় প্রভাবশালী হলেও বিশ্বে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা। তারা ইতোমধ্যে বিশ্বের বড়ো বাজার দখলে নিয়েছে। হতে পারে তারা চেয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের মাঝখানে একটি বড় জনগোষ্ঠী তৈরি হলে তারা উভয় দেশের জন্যই বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। যাতে তাদের সুফল পেতে সুবিধা হয়। পরাশক্তি বহুদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক শক্তি তৈরির চেষ্টা করছে। তাদেরও একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। বিশ্বের অর্ধেক গোলার্ধ দখলে তবুও বিশ্ব আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পুরো বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা রয়েছে। বিশ্বের দুর্বল ও অনুন্নত রাষ্ট্রে অস্ত্র ব্যবসা করছে দীর্ঘদিন। আরও বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের বিনিয়োগ করছে। সেন্টমার্টিন নিয়ে তাদের আগ্রহ আছে। সেন্ট মার্টিনে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে তারাও একটা ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু গণতন্ত্রকামী ও জাতীয়তাবাদ সম্পন্ন দলগুলো তা কখনো ছাড় দেবে মনে হয় না- এ নিয়ে নানা সংশয় রয়েছে। রাষ্ট্রে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট প্রদান করে রাষ্ট্র কতটুকু লাভবান হবে নাকি কারো নাকখতের শিকার হবে তা কিন্তু ভাবনার বিষয়। বাংলাদেশর সঙ্গে ভারতীয় সীমানা খুব বেশি। সমুদ্রে অঞ্চলটুকুই প্রতিরক্ষার পথ কিন্তু তা কারো অধীনে কিংবা ট্রান্সশিপমেন্টে চলে গেলে প্রতিবন্ধকতা চরম আকার ধারণ করবে। মাঝখানে রোহিঙ্গাদের অবস্থান যা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ত্রিদেশীয় ভাবনা ও চক্রান্তে তারা হয়ে উঠবে এক ধরনের বস্নাকশিপ জাতিগোষ্ঠী। পুনর্বাসিত জনগোষ্ঠী ব্যবহার হওয়া স্বাভাবিক। তারা ব্যবহার হবে সন্দেহ নেই। তাতে দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক মন্দা রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। যেখানে মধ্যবিত্ত জনসংখ্যার আধিক্য বিদ্যমান। মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন তাদের শোষণ ও নিপীড়নে পর্যদুস্ত। সংকটাপন্ন হবে রাষ্ট্রের জনগণ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তারা প্রভু রাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত। আর্থিক অনুদান বুদ্ধি পরামর্শ দ্বারাও পরিপূর্ণতা পায়। যে কারণে স্বকীয়তা হারিয়ে মোহান্ধ জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত হয়। রাজনৈতিক স্বার্থ ও ক্ষমতালিপ্সুতার কারণে পরাশক্তির সঙ্গে আঁতাত করে। নিজেদের সুবিধামতো বলয় তৈরি করে এবং তাদের কথামতো পরিচালিত হয়। দেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও বুদ্ধিজীবীদের পাত্তা দেয় না, পক্ষপাতদুষ্ট বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রভুরাষ্ট্রের চাহিদা ও মনোআকাঙ্ক্ষা পূরণ করে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অনুপ্রবেশের সময় দুটো তাত্ত্বিকতা ছিল ধর্মতত্ত্ব ও পুঁজিতত্ত্ব। সহানুভূতি দৃষ্টিতে আশ্রয় প্রদান করা এবং চাপে রাখার কৌশল হিসেবে ধরা হয়। দেশকে ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের সার্বিকতাবাদী প্রদর্শন মুখ্য নয়- ক্ষমতা ও দখলদারিত্ব। ধর্মীয় সহানুভূতি পেয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, প্রভুত্বস্বীকৃতি হিসেবেও সহানুভূতির মাত্রা বৃদ্ধি পায় কিন্তু সমস্যায় পড়ল একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। যাদের হাতিয়ার হিসেবে কাজে ব্যবহৃত করবে প্রভুরাষ্ট্রগুলো। সে হিসাব কষে তারা জাল বুনন করছে।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যতদিন থাকবে ততই সংকট ঘণীভূত হবে। প্রভুরাষ্ট্র ও পূঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো নানা অজুহাতে অনুসন্ধানী কার্যক্রম করবে। তাদের টার্মকার্ড হিসেবে কাজ করবে। স্থানীয় পরিস্থিতি ভঙ্গুর হয়ে সীমানাজুড়ে নানা অপকর্ম দেখা যাবে। স্থায়ী সমাধানের জন্য চাপ প্রয়োগ করেও কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না, বরং মায়ানমার দানবীয় আচরণ করছে। ঠেকাতে সমর্থ হবে কিনা বাংলাদেশ দুশ্চিন্তার বিষয়। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন করছে যাতে বাকিরাও পালিয়ে আসে। মাঝে মাঝে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। স্থানীয় মানুষও তাদের ভয় করা শুরু করেছে, কারণ তারা স্থানীয়দের সঙ্গে হিংস্র আচরণ করছে প্রতিনিয়ত। বর্তমানে স্থানীয়রা তাদের কাছে কোণঠাসা। স্থানীয়রা কাজ পায় না, সস্তাশ্রম দিতে অভ্যস্ত রোহিঙ্গারা তাই রোহিঙ্গাদের কদর বিভিন্ন কাজে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাতে কর্মহীন হয়ে পড়ছে স্থানীয় জনগণ। শ্রমবাজারে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা যায়, কিন্তু তাদের আচরণগত পরিবর্তন না হলে তা সম্ভব নয়। নিজ দেশে পুনর্বাসন না হলে কোনোদিনই তাদের আচরণগত দিক পরিবর্তন হবে না। বিশ্ব সংস্থা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ও খাদ্য সংকট দূরীকরণে কাজ করলেও নিজ দেশে প্রেরণের ক্ষেত্রে কোনো চাপ প্রয়োগ করেনি। তা থেকে অনুমেয় হয় যে, তারাও চায় সংকট বিদ্যমান থাকুক।
উদ্ভূত পরিস্থিতি হামলে পড়ার আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন দরকার। আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশের মনে হলেও ঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দক্ষিণ এশিয়া। দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়ে সবকিছু লন্ডভন্ড হবে। একটি বিকল্পশ্রেণির উত্থান হয়ে ক্রমশই বিবাদ তৈরি হবে। শ্রেণিকরণ, ধর্মীয়ভাব, সামাজিকীকরণ, সবকিছু মুষড়ে দেবে। রাষ্ট্রীয় দাবি উত্থান ক্রমশই বৃদ্ধি পেতে পারে। যতদিন যাবে ততদিন তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তারা সক্রিয় হয়ে সব বাধা অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়বে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট হলেও দক্ষিণ অঞ্চলেও প্রভাব পড়বে। রাজনীতির পরাশক্তির হাতিয়ার হয়ে ওঠার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না, যদিও তা কাম্য নয় কিন্তু সুদৃষ্টি বিবেচনা কতটা ফলপ্রসূ। বাংলাদেশ ভূখন্ডে আঘাত আসাসহ প্রভাব পড়বে এশিয়া মহাদেশেও।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনৈতিক অবস্থান ও ধরন একই। নব্যশিল্পাঞ্চল হিসেবে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। জনগণের জীবনযাত্রার মান একই ধরনের। রপ্তানি ও আমদানির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক চুক্তি ও অংশিদারত্ব বটে। যদিও বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার তুলনামূলক কম। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের ওপর নির্ভর করে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পালাবদলের কারণে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন ব্যাহত হয়। কারণ পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসে। উন্নত বিশ্ব ক্ষমতার পালাবদল হলেও পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন ঘটে না। বরং আঞ্চলিক সহযোগিতার বৃদ্ধি পায়। আঞ্চলিক শান্তিশৃঙ্খলা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো তা অনুসরণ করে না বরং দ্বিধাবিভক্ত থাকে। যদিও আঞ্চলিক সহযোগিতার বৃদ্ধির কথা বহুবার আলোচনা হয়েছে। সার্ক সনদে পরস্পর আঞ্চলিক অখন্ডতার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ায় সংঘাতমুক্ত ছিল। এখনো বড়ো ধরনের কোনো বিপর্যয় ঘটেনি। ভারতের সঙ্গে গঙ্গা বিরোধ, কাশ্মির প্রশ্নে পাকিস্তানের সঙ্গে বিরোধ, নেপালের সঙ্গে মতদ্বৈততা, বর্তমানে রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ। যা চরম আকার ধারণ করতে পারে। বিরোধ মীমাংসার ভূমিকা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকেই নিতে হবে- নচেৎ অবিশ্বাস ও সন্দেহের উৎপত্তি হয়ে সম্প্রীতি বিনষ্ট হবে। প্রভাব বিস্তার করবে দক্ষিণ এশিয়ায়। রাজনৈতিক অস্থিরতা, দ্বিপক্ষীয় অবিশ্বাস দূর করে রোহিঙ্গা সংকট দূরীকরণ খুবই প্রয়োজন। নচেৎ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে। আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে আদর্শিক জনগণই রাষ্ট্র রক্ষার জন্য সহায়ক।
শাহমুব জুয়েল : শিক্ষক ও কলাম লেখক