অর্থনীতির অধিকাংশ সূচক নিম্নমুখী সঠিক পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ | ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
দুটি বাদে অর্থনীতির প্রায় সব সূচক এখন নিম্নমুখী। উচ্চ মূল্যস্ফীতি দীর্ঘদিন ধরে বজায় রয়েছে, এতে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে। রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি রয়েছে। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পে অস্থিরতা বিরাজ করছে। রপ্তানি আয়ে সামান্য প্রবৃদ্ধি হলেও, আমদানিতেও ভাটা চলছে। একমাত্র স্বস্তির সূচক প্রবাসী আয়। এ ছাড়া অর্থনীতির আর কোনো সূচকেই ভালো নেই দেশের অর্থনীতি। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। ব্যাংক খাতের অবস্থা নাজুক। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থবির হয়ে আছে। পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়টি বক্তৃতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েই চলেছে। দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমে এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) নেমে এসেছে। নতুন বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান নির্দেশক মূলধনি যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও কমেছে। ফলে, শিল্প স্থাপনের নতুন উদ্যোগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ স্থবির হয়ে আছে। টানা দরপতনে ডুবতে বসেছে শেয়ারবাজার।
মনে রাখতে হবে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। পরিসংখ্যান বু্যরোর সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে নেমেছে। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে (ডাবল ডিজিট) ১০ দশমিক ৪০ শতাংশে অবস্থান করছে। আগের মাস আগস্টে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছিল। ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছর।
এছাড়া, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সরকারের রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, এই তিন মাসে সার্বিকভাবে শুল্ক ও কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর কোনো মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি এনবিআর। জ্বালানি তেল আমদানির এলসি কমেছে ২৬ শতাংশ; নিষ্পত্তি কমেছে ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ। এই তিন মাসে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি কমেছে ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব নেয়ার পর বলেছিলেন, 'বিভিন্ন কারণে দেশের অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। আমাদের লক্ষ্য হবে অর্থনীতিকে যত দ্রম্নত সম্ভব গতিশীল করা। কারণ, অর্থনীতি স্তব্ধ হয়ে গেলে সেটা চালু হওয়া বেশ কঠিন। আমরা অর্থনীতিকে স্তব্ধ হতে দিতে চাই না।' তবে গত বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টা দাবি করেছেন, দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তিনি বলেছেন, 'দেশীয় শিল্পের বিকাশে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে।' তবে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা দেশের অর্থনীতির অনিশ্চয়তার কথা শুনিয়েছেন। তারা বলেছেন, ভালো নেই দেশের অর্থনীতি; দিন যত যাচ্ছে সংকট ততই বাড়ছে। অনিশিচত গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে অর্থনীতি। এই মুহূর্তে প্রধান কাজ হচ্ছে, যে করেই হোক মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা। আর এ জন্য যা যা করা প্রয়োজন- সবই করতে হবে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে।
মনে রাখতে হবে সঠিক ও পরিকল্পিত উদ্যোগ না নিতে পারলে দেশের অর্থনীতি আরো খারাপের দিকে যাবে। সুতরাং, সময় থাকতে সঠিক পদক্ষেপ নেয়াই সমীচীন।