বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম কঠোর পদক্ষেপ জরুরি
প্রকাশ | ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বাজারে দুই সপ্তাহ ধরে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমায় পণ্যটির দাম বাড়ছে। বিক্রেতারা জানান, মৌসুম শেষে কৃষকের ঘরে এখন পেঁয়াজের মজুত কম। ফলে, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। আবার অতিবৃষ্টির কারণে নতুন পেঁয়াজ বপনে দেরি হচ্ছে। অন্যদিকে, আমদানি করা পেঁয়াজের দামও কিছুটা বাড়তি। এসব কারণে বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম বেশি। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বাজারভেদে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সপ্তাহ দুই আগে দেশি পেঁয়াজ ১১৫-১২৫ ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকা ছিল। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, রসনাবিলাসের জন্য পেঁয়াজের গুরুত্ব অপরিসীম। রন্ধনশিল্পে পেঁয়াজ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতিদিনের রান্নায় পেঁয়াজের জোগান জরুরি। তাছাড়া, পেঁয়াজের রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। ঐতিহাসিকভাবে পেঁয়াজের রয়েছে ঔষধি ব্যবহার। প্রাচীন আমলে কলেরা এবং পেস্নগের প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হতো পেঁয়াজ। রোমান সম্রাট নিরো ঠান্ডার ওষুধ হিসেবে পেঁয়াজ খেতেন বলেও জনশ্রম্নতি রয়েছে। পেঁয়াজে থাকা এলিসিন নামের উপাদান অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। অনেক সময় এটি কিছু কিছু ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস, রক্তে গস্নুকোজের মাত্রা ঠিক রাখা, বস্নাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে পেঁয়াজের ব্যবহার দেখা যায়। পেঁয়াজ কাঁচা খেলে সর্দি-কাশি খুব কম পরিমাণে হয়। এটা মানুষের শরীরকে রোগ-প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। পেঁয়াজের এই স্বাস্থ্যগুণই বলে দেয় এর উপযোগিতার কথা। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চাহিদা রয়েছে পেঁয়াজের। পেঁয়াজ আসলে কোনো সবজি নয়। এটি একটি মশলা জাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম এলিয়াম সেপা। এই বর্গের অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে রসুন, শ্যালট, লিক, চাইব এবং চীনা পেঁয়াজ। রসুনের মতোই এর গোত্র হচ্ছে লিলি। এটি এমন একটি উদ্ভিদ- যা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই উৎপাদিত হয়। তবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় ভারত ও চীনে। যেসব দেশগুলোতেই প্রধানত পেঁয়াজ হয় যেখানে বেশি বৃষ্টি হয় না। পাশাপাশি হাল্কা শীত থাকে। সেজন্যই বাংলাদেশে পেঁয়াজ হয় শীতকালে। পেঁয়াজে যেহেতু সালফার উপাদান থাকে, তাই এটি রান্নায় এক ধরনের ঝাঁজালো স্বাদ যোগ করে। তবে নিজস্ব স্বাদ যোগ করার ছাড়াও রান্নায় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে, রান্নার অন্যান্য উপকরণের স্বাদ অনেক বাড়িয়ে দেয়। এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ পণ্যটি নিয়ে অনেকদিন ধরে চলছে কারসাজি। এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত মূলত অসৎ ও অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। তারাই পরস্পর যোগসাজশে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই দাম বাড়ার সঙ্গে পেঁয়াজের সরবরাহ সংকটের কোনো সম্পর্ক নেই।
দেশীয় পেঁয়াজের সংকট রয়েছে, এই কারণে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। এর অর্থ এই নয় যে, পেঁয়াজের দাম বাড়বে। এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।