পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক
প্রকাশ | ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বিশেষজ্ঞরা পলিথিনকে পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান নিয়ামক ও পাইপলাইন হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এছাড়া এই আলোচনায় বারবার সামনে এসেছে যে, নিষিদ্ধ হওয়ার ২০ বছর পরও উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। অথচ অতিমাত্রায় পলিথিন ও পস্নাস্টিক ব্যবহারের কারণে মানব শরীরে বাসা বাঁধছে ক্যানসারসহ নানা রোগ। এক্ষেত্রে বলা দরকার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে কঠোর মনিটরিং চালু করা হবে। পাশাপাশি পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে। শুধু পলিথিনের শপিং ব্যাগ বন্ধ করা হচ্ছে। কোনো সুপারশপ পলিথিন শপিং ব্যাগ সরবরাহ করলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
আমরা মনে করি, এই উদ্যোগ অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক যার যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। উলেস্নখ্য, রোববার বাংলাদেশ সচিবালয়ের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একটি বিশেষ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। সভায় পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ বাস্তবায়ন এবং পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। লক্ষণীয়, উপদেষ্টা বলেছেন, মানুষ যদি পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করে তাহলে উৎপাদনও বন্ধ হবে। এজন্য জনগণকে সচেতন করতে হবে। কেউ ইচ্ছে করে গাফিলতি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া পলিথিন ব্যাগের ক্ষতিকর প্রভাব বুঝে মানুষ যেন এটি থেকে সরে আসে, সে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেছেন, পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পাটের ব্যাগের সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ করা হবে।
আমরা মনে করি, যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা আমলে নিয়ে এর যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। কেননা, মানুষ সচেতন না হলে যেমন পলিথিন বন্ধ হবে না, তেমনি আইনগত পদক্ষেপও জরুরি। ফলে, সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি পাটের ব্যবহার বাড়ানোসহ সার্বিক উদ্যোগ জরুরি। প্রসঙ্গত, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০০২ সালে ১ মার্চ আইন করে বিষাক্ত পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু অপ্রিয় হলেও এটাই জানা যায়, বাজার থেকে পলিথিনের ব্যবহার কমেনি। আইনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ২০ বছর ধরে বেড়েই চলেছে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার। সরকার ২০১০ সালে আরেকটি আইন করে। পলিথিনের বদলে পাটের ব্যবহারের জন্য জারি করা হয় 'পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০'। এ ক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, আইনে ১১টি পণ্যের মোড়ক হিসেবে পস্নাস্টিক বা পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু আইনের প্রয়োগ না থাকার পুরোপুরি সুফল মেলেনি বলেও আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং পলিথিন ব্যবহারের ভয়াবহতাকে সামনে রেখে ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে কঠোর মনিটরিং চালু করার যে বিষয়টি সামনে এসেছে তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে।
বলা দরকার, এর আগে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ এবং পরিবহণে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের বস্তা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে আদেশ জারি করেছিল। মোট ১৭টি পণ্যের মোড়ক হিসেবে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। আইন করার পর বিকল্প হিসেবে পাটের তৈরি ব্যাগের বিষয়ে মানুষ উৎসাহী হন। কাগজের তৈরি নানা ধরনের ঠোঙার ব্যবহার বাড়তে থাকে। কিন্তু এরপর একের পর এক পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাটের ব্যাগের স্বপ্ন অনেকটা হাতছাড়া হয়ে যায়। বন্ধ হয়নি পলিথিন বা পস্নাস্টিক কারখানা। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে এড়ানোর সুযোগ নেই। সার্বিকভাবে পলিথিনের ক্ষতিকর দিকে আমলে নিতে হবে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, পলিথিনের আশঙ্কাজনক ব্যবহার আমলে নিতে হবে এবং পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে- এটিকে সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।