দেশে একের পর এক বিস্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের মতো ঘটনা ঘটছে। গ্যাসলাইন লিকেজ, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণসহ নানাভাবে অগ্নিকান্ড এবং দগ্ধ হওয়ার ঘটনাই শুধু নয়, এই ধরনের ঘটনায় অনেক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। ফলে, এই ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটলে তা কতটা উদ্বেগের বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ডহরগাঁও এলাকার এক বাসায় জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণ থেকে আগুন লেগে নারী ও শিশুসহ এক পরিবারের ৬ জন দগ্ধ হয়েছে। তথ্য মতে, শুক্রবার রাতে এ ঘটনার পর দগ্ধদের হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য যে, চিকিৎসক জানিয়েছেন দগ্ধদের কারো ৬৬ শতাংশ, কারো ৩০ শতাংশ আবার কারো ৭০ শতাংশও পুড়ে গেছে। লক্ষণীয়, সাধারণত কারও শরীরের ৩০ শতাংেশের বেশি পুড়ে গেলেই আশঙ্কাজনবক অবস্থা বিবেচনা করা হয়। ফলে, এই হিসাবে চারজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
বলা দরকার, এমনটি জানা যায় যে, গ্যাসর লিকেজের ফলে নির্গত গ্যাস যদি বদ্ধ জায়গায় আবদ্ধ না থেকে বাতাসে মিশে যায় তাহলে তেমন সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় যখন গ্যাস বের হতে না পেরে জমে থাকে। কেননা, নির্দিষ্ট স্থানে জমে থাকা গ্যাস ও বাতাসের অক্সিজেনের মধ্যে বিক্রিয়া হয়। এ ধরনের বিক্রিয়া যদি কোনোরকম আগুনের উৎস বা স্ফুলিঙ্গ পায় তাহলে অত্যাধিক তাপ, চাপ ও গতির কারণে বৃহৎ আকারের বিস্ফোরণ হয়। সে বিস্ফোরণ মুহূর্তের মধ্যে ভয়াবহ রূপও নিতে পারে। ফলে, গ্যাস লিকেজ সংক্রান্ত বিগত দিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রূপগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জানিয়েছেন, শ্রমিক পরিবারটি ডহরগাঁও এলাকার একটি টিনশেড বাড়িতে থাকে, রাতে কয়েল জ্বালিয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়েন, আর সেই কয়েল থেকে আগুন লেগে যায়। স্থানীয়রা তাদের বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে যায়। এমন ধারণাও সামনে এসেছে যে, কোনোভাবে ওই বাসায় গ্যাস জমেছিল, সেটাই আগুনের স্পর্শে আসার পর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এছাড়া এমনও মনে করা হচ্ছে, লাইনের গ্যাস লিকেজ থেকে ওই ঘরে আগেই গ্যাস জমেছিল যা পরে মশার কয়েল ধরাতে গেলে বিস্ফোরণ হয়। ফলে, ঘটনাটির প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান এবং সেই মোতাবেক উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
আমরা বলতে চাই, গ্যাসের লাইন লিজেকের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেওয়া দরকার। কেননা, বিভিন্ন সময়েই লাইন লিকেজ হয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। বাসাবাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর আগে দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এমন আশঙ্কাও উঠে এসেছে, পাইপলাইন নিয়ে জরিপ করা হলে অনেক লিকেজ পাওয়া যাবে। এটাও জানা গিয়েছিল পাইপলাইন জরিপ করা হলেও গ্রাহকের বাসায় বাসায় গ্যাস সংযোগে লিকেজ আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয় না। ফলে বিগত দিনে বাসাবাড়িতে গ্যাস লিকেজের কারণে অগ্নিদুর্ঘটনা আমলে নিলে এবং আবারও যখন দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গ্যাস লিকেজের বিষয়টি আলোচনায় আসছে- তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জররি।
বলা দরকার, এর আগে এটাও আলোচনায় এসেছিল- লাইনের পাইপলাইনে সরবরাহকৃত গ্যাসের ক্ষেত্রে ত্রম্নটিপূর্ণ সংযোগই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে এর আগে জানা গিয়েছিল, রাজধানী ঢাকায় অগ্নিদুর্ঘটনার এক-তৃতীয়াংশ গ্যাসের পাইপলাইনের লিকেজ থেকে হয়। এছাড়া গ্যাসের যে লাইনগুলো আছে এর বেশিরভাগই পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব লাইন থেকে গ্যাস বের হয়ে বাতাসে মিশে বিস্ফোরকের মতো কাজ করে। কোনোরকমের স্পার্ক (স্ফুলিঙ্গ) পেলেই দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে, এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, একের পর এক গ্যাস সংক্রান্ত দুর্ঘটনা ঘটছেই। গ্যাসের লাইন লিকেজ, সিলিন্ডার বিস্ফোরণসহ নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে থাকলে তা কতটা শঙ্কার সেটা এড়ানোর সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।