যুদ্ধের শিকার ৬০ কোটি নারী শিশু যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বের ৬০ কোটি নারী ও মেয়ে শিশু যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠকে এমনটা জানিয়েছেন সংস্থার মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস। গত এক দশকে এ সংখ্যা ৫০ শতাংশ বেড়েছে বলেও জানান তিনি। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি'র প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। গত কয়েক দশকে নারীদের বৈশ্বিক অগ্রগতি ক্রমবর্ধমান সশস্ত্র সংঘাতে অনেকটাই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ২০০০ সালের ৩১ অক্টোবর গৃহীত নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবনা মূল্যায়ন করছিলেন গুতেরেস। ওই প্রস্তাবনার অন্যতম লক্ষ্য ছিল, শান্তি আলোচনায় নারীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। তবে লিঙ্গ সমতার মতো এই লক্ষ্যও অপূর্ণ রয়ে গেছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় নারীর নেতৃত্ব এবং অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা হ্রাস করা হচ্ছে। শান্তি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার এখনো পুরুষদের কাছেই রয়ে গেছে। নিপীড়নমূলক পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো ও লিঙ্গ বৈষম্য যতদিন অর্ধেক সমাজকে পিছিয়ে রাখবে, ততদিন শান্তি অর্জন অধরা থেকে যাবে। 'জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে সশস্ত্র সংঘাতে দ্বিগুণ নারী নিহত হয়েছেন। সংঘাত সম্পর্কিত যৌন সহিংসতার ঘটনা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতির শিকার নারী ও মেয়ে শিশু। ক্ষতিগ্রস্তদের ভীতি দূর করা বিশ্বনেতাদের দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবতা অনেক হতাশাজনক। সংঘাতপ্রবণ দেশগুলোতে প্রতি দুজন নারী ও মেয়ে শিশুর মধ্যে একজন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। বিশ্বব্যাপী মাতৃমৃতু্যর ৬১ শতাংশই সংঘাতপ্রবণ ৩৫টি দেশে সীমাবদ্ধ। এই দেশগুলোতে নীতিমালা প্রণয়ন ও রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ স্থবির হয়ে পড়েছে। এটা সত্য, যুদ্ধবাজ দেশগুলো তাদের অস্ত্রের মহড়া দেখাতে যুদ্ধ ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্বব্যাপী। অস্ত্র ও গোলাবারুদ মানবজীবনের পাশাপাশি বৈশ্বিক পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। আর এর সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে শিশুরা। এই বিশ্বে এমন একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠছে যাদের জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন। তাদের মধ্যে অন্যতম শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্যহীন শিশু-কিশোর। যারা যুদ্ধ করে বা করায়, যারা যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, যে যুদ্ধের কারণে অগুণিত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেসব মানুষের কথা বিশ্বনেতারা কি কখনো ভাবেন? অনেক শিশু যুদ্ধকালীন বাবা-মা, ভাইবোন, বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনকে হারিয়েছে। অথচ শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের যত্ন-আত্তি সহানুভূতির ওপর বেড়ে ওঠে। যুদ্ধের সময় পিতা-মাতাকে হারিয়ে এসব শিশুরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হয়। শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা শারীরিক ও মানসিক বিকাশের মধ্যে থাকা অবস্থায় যদি যুদ্ধ বাঁধে তখন তাদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। যুদ্ধে কোনো শিশু-কিশোর আক্রমণ বা নির্মম নির্যাতনের শিকার হলে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াই স্বাভাবিক। কখনো কখনো শিশুরা পঙ্গুত্ব বরণ করে থাকে। অপর্যাপ্ত খাদ্য, সেনিটেশন, দুর্বল জীবনমানের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে শিশুরা। ধ্বংসযজ্ঞ, দারিদ্র্য ও সহিংসতার কারণে যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায় একটি দুষ্টচক্রের আবির্ভাব ঘটে। জীবনযাত্রার অবকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে, শিশুদের পড়ালেখা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এসব তাদের নিরাপত্তার ওপরও প্রভাব বিস্তার করে। আমরা আশা করি, বিশ্ব নেতারা নারী ও শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ আবাস তৈরিতে এগিয়ে আসবেন। পাশাপাশি যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।