শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

এইচপিভি টিকা 'সেকোলিন' অনুমোদন জরায়ুমুখের ক্যানসার মোকাবিলায় অগ্রগতি

  ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
এইচপিভি টিকা 'সেকোলিন' অনুমোদন জরায়ুমুখের ক্যানসার মোকাবিলায় অগ্রগতি

জরায়ুমুখের ক্যানসারে বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একজন নারী মারা যায় এবং এই মৃতু্যর ৯০ শতাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে ঘটে। ফলে এ তথ্য কতটা আশঙ্কার বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই জরায়ুমুখের ক্যানসার মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী চলমান প্রচেষ্টায় নতুন ভ্যাকসিনের অনুমোদন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে মনে করা হচ্ছে। তথ্য মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একক ডোজের চতুর্থ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) ভ্যাকসিন 'সেকোলিন' জনসাধারণের মাঝে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য যে, এই ভ্যাকসিন অনুমোদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আইসিডিডিআর,বি'র গবেষণা। আমরা মনে করি, এই বিষয়টি ইতিবাচক যা আমলে নিয়ে জরায়ুমুখের ক্যানসার মোকাবিলায় আরও অগ্রগতি হবে।

প্রসঙ্গত, আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাথ, আইসিডিডিআর,বি এবং ঘানার বিজ্ঞানীরা একসঙ্গে সিভিআইএ ০৮৭ ট্রায়াল পরিচালনা করে। এই ট্রায়ালের মাধ্যমে চীনের ইনোভ্যাক্সের তৈরি বাইভ্যালেন্ট এইচপিভি ভ্যাকসিন 'সেকোলিন' সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত পাওয়া যায়। এ তথ্য পর্যালোচনা করার পর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 'সেকোলিন'কে একক ডোজ ভ্যাকসিন হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। অন্যদিকে লক্ষণীয়, আইসিডিডিআর,বি'র গবেষণা কীভাবে বিশ্বব্যাপী টিকানীতি প্রণয়নে ভূমিকা রাখছে এটি তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও। বলা দরকার, আইসিডিডিআর,বি'র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট এবং এই গবেষণার অন্যতম প্রধান গবেষক ড. কে জামান। তিনি বলেছেন, 'আমাদের গবেষণা একক ডোজ ভ্যাকসিন হিসেবে সেকোলিন-এর নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। এর ফলে ভ্যাকসিন সরবরাহে ঘাটতি আছে এমন দেশগুলোর জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি হলো।' অন্যদিকে এ রকম যুগান্তকারী কাজের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা একটি গর্বের মুহূর্ত বলেও জানান।

আমরা বলতে চাই, এরকম যুগান্তকারী কাজের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা একটি গর্বের মুহূর্ত এবং সুখকর, যা দেশের সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে, নারীদের ক্যানসারজনিত মৃতু্যর অন্যতম প্রধান কারণ জরায়ুমুখ ক্যানসার এমনটিও জানা যায়। এছাড়া বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮ হাজার ২৬৮ জন নারী জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং তার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৯৭১ জন নারী মারা যান। ফলে এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে দেশের সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্বে বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত যে তিনটি এইচপিভি টিকা পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো হলো- বেলজিয়ামের জেএসকে কোম্পানির তৈরি সারভিক্স, যুক্তরাষ্ট্রের মার্ক অ্যান্ড কোম্পানির তৈরি গার্ডাসিল-৪ ও একই কোম্পানির গার্ডাসিল-৯। আর সেকোলিন অনুমোদন পাওয়া একক ডোজের চতুর্থ টিকা। এটাও জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ১০-১৪ বছর বয়সি বা ৫ম-৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত মেয়েদের বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা দেওয়া হচ্ছে। নতুন আরেকটি টিকার অনুমোদন জরায়ুমুখের ক্যানসার থেকে মেয়েদের রক্ষা করার জন্য খুবই ভালো একটি সুযোগ। ফলে সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

উলেস্নখ্য, সেকোলিন অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে এটাও সামনে এসেছে যে, এই গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকটি চিহ্নিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেছেন, 'অন্যান্য বেশির ভাগ ক্যানসারের তুলনায় জরায়ুমুখের ক্যানসার আলাদা। কেননা, আমাদের এটি নির্মূল করার সক্ষমতা রয়েছে। তাই জরায়ুমুখের ক্যানসার মোকাবিলায় আরেকটি একক ডোজের এইচপিভি ভ্যাকসিন অনুমোদন দেওয়ার মাধ্যমে আমরা জরায়ুমুখের ক্যানসার চিরতরে নির্মূল করার ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম।' ফলে এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৬ লাখ ৬০ হাজারের বেশি জরায়ুমুখের ক্যানসার শনাক্ত হয়, যার ৯৫ শতাংশই এইচপিভিতে সৃষ্ট। আর দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রতি দুই মিনিটে একজন নারী এই প্রতিরোধযোগ্য রোগে মারা যায়। তাই এই বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। জানা যাচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই ঘোষণা বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। কেননা এর ফলে আরও বেশি দেশ, বিশেষত যেসব দেশে ভ্যাকসিনের তীব্র ঘাটতি রয়েছে, তারা এখন আরও সহজে সাশ্রয়ী মূল্যের এবং কার্যকর এইচপিভি ভ্যাকসিন পাবে, যা অত্যন্ত আশাপ্রদ। সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে