পলিথিন নিষিদ্ধ

আইনের সঠিক প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে

ব্যক্তি উদ্যোগে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন ব্যবহারে নিজ থেকে বিরত থাকতে হবে সচেতন ভাবেই। ভয়ংকর ক্ষতিকারক পলিথিন থেকে বাঁচতে পলিথিন নিষিদ্ধের আইন যথাযথ প্রয়োগ, মান্য করা, বিকল্প ব্যাগ, পাটজাত ব্যাগ ব্যবহারে জোর দেওয়া এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি অতীব জরুরি।

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

সফিউলস্নাহ আনসারী
পলিথিন নিষিদ্ধ অথচ বিক্রয় ও ব্যবহারকারী সেটা কতটুকু জানেন? জানলেও মানছেন কতটুকু? পরিবেশ ও জনজীবনের জন্য ক্ষতি করছে পলিথিন, সে বিষয়ে সচেতনতাই বা কতটুকু? গুরুত্বহীন জাতি আমরা অস্বীকার করবার জো নেই; তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, পরিবেশ ধ্বংসকারী এই পলিথিন বর্জনে ব্যক্তি ও সামাজিকভাবে জনসচেতনতায় আমরা এত উদাসীন কেন? প্রথমেই যে কারণটা সামনে আসে তা হলো আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত আইনের বাস্তবায়ন না হওয়া এবং ব্যবহারকারী সচেতন না হওয়া। বিভিন্ন সময় সরকারিভাবে পলিথিন নিষিদ্ধ হয়েছে, আবারও চলতি বছর ১ অক্টোবর থেকে বাজারে ক্ষতিকর পলিথিন নিষিদ্ধের ঘোষণা এসেছে। ঘোষণার পনেরো দিন পেরিয়ে গেলেও হাটবাজার, শপিংমল, ফুটপাত, দোকানপাট, কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁয় দেদারসে পলিথিনের অবাধ ব্যবহার লক্ষণীয়। মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পলিথিন ব্যাগের অবাধ ব্যবহার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যাগ উৎপাদন হলেও তা রপ্তানি হচ্ছে দেশের বাইরে, দেশে ব্যবহারে জনপ্রিয় হচ্ছে না বা গুরুত্ব পাচ্ছে না। নিত্য ব্যবহারে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে কিছুটা দেখা গেলেও তা কালেভদ্রে এবং বিশেষ কোনো আনুষ্ঠানিকতায়। আমরা এতটাই উদাসীন যে, বাজারে গেলে মনেই হয় না পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ, আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়, কারণ নিষিদ্ধ হওয়ার আগে ও পরের চিত্রে নেই খুব একটা পার্থক্য। অথচ সবাই জানে পলিথিন ব্যাগে রাখা খাদ্যে ক্যানসারসহ জটিল রোগ হতে পারে। ক্ষতিকর জানার পরও বাজার থেকে পলিথিনের ব্যবহার কমেনি। ইচ্ছা অনিচ্ছায় পলিথিনে সয়লাব শহর থেকে গ্রামীণ জনজীবন। এক রিপোর্টে প্রকাশ, শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন দুই কোটিরও বেশি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলা হয়। এই ব্যবহৃত পলিথিন দ্বারা ড্রেন, নালা-নর্দমা, নদী, খাল, ডোবা, ম্যানহোল ইত্যাদি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে, যত্রতত্র স্বল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বাড়ে নাগরিক অস্বস্তি, জনদুর্ভোগ। আতঙ্কের আরো বিষয় হচ্ছে প্রতিদিন পলিথিন ব্যাগ ভূমিতে পতিত হয়ে মাটির উর্বরা শক্তিও নষ্ট হচ্ছে। এতে খাদ্য উৎপাদনের পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে বৈ কমছে না। ক্ষতিকারক পদার্থ হওয়ার পরও পলিথিন যে অবৈধ এবং নিষিদ্ধ, সেটি বোঝার কোনো লক্ষণ নেই যে, বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাতে হাতে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার দেখে। পাইকারি আর খুচরা দোকানগুলো প্রকাশ্যেই বিক্রি ও সদাইয়ের সঙ্গে ফ্রি সরবরাহ করছে এসব ব্যাগ। আরো দুঃখের বিষয় হলো- অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতা সাধারণ বেশিরভাগই জানেন না, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ। না জেনেই নিজের এবং দেশের পরিবেশ ধ্বংসে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার করে যাচ্ছেন তারা। কারখানাগুলোও গোপনে পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। পলিথিন নিষিদ্ধ মানে শুধু ব্যবহারকারী নয় উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি ও কারখানা সিলগালা করাও জরুরি। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং সরকারের প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্ব সহকারে ১ অক্টোবর থেকে পলিথিন নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিয়েছেন। যা কার্যকর হলে পরিবেশের সঙ্গে বেঁচে যায় দেশের মানুষ। পাটের তৈরি ব্যাগ না হলেও বিকল্প এক ধরনের ব্যাগ দেশে উৎপাদন হচ্ছে- যা কিছুটা হলেও বিকল্প হিসেবে পরিবেশ রক্ষায় সুফল বয়ে আনছে। এসব ব্যাগের ব্যাপক ব্যবহারে উৎসাহী করা প্রয়োজন। নিত্য ব্যবহার্যে এবং জীবনের প্রায় সব কাজে, প্রয়োজনে ব্যাগের ব্যবহার সেই আদিকাল থেকেই। এক সময় চট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহৃত হতো। সময়ের বিবর্তনে সহজলভ্য পলিথিন হয়ে উঠে বেশ জনপ্রিয়। কে জানতো এই জনপ্রিয় পলিথিনই হয়ে উঠবে পরিবেশ এবং মানব দেহের জন্য ভয়ংকর বস্তু। পলিথিন ব্যবহার থেকে ফেরাতে কাপড়, পাট ও বিকল্প স্বাস্থ্যসম্মত তৈরি ব্যাগের বাণিজ্যিক উৎপাদন এবং তা ব্যবহারে জনগণকে সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করার বিকল্প নেই। আশা করা যায় ধীরে ধীরে অভ্যাস পরিবর্তন করে এক সময় দেশের মানুষ পলিথিন বর্জন করে পাট, কাপড় ও বিকল্প ব্যাগ ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠবে। পলিথিনের সময় শেষ হয়ে আসবে। পলিথিনের বিদায়ের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারি, কার্যকর চলমান অভিযান। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যম বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার, সারাদেশে পলিথিন ব্যবহারে অনাগ্রহী করতে ক্যাম্পেইন, মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ এবং পলিথিনের কাঁচামাল আমদানি বন্ধ এবং উৎপাদন নিষিদ্ধ করা। তবে বিশেষ প্রয়োজনে পলিথিন জাতীয় সামগ্রী অনুমোদন সাপেক্ষে সংরক্ষিত সীমিত ব্যবহার করার ব্যবস্থা রাখার বিষয়টি চিন্তা করতে হবে। সর্বক্ষেত্রেই পস্নাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার অনুৎসাহিত করতে হবে। ব্যক্তি উদ্যোগে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন ব্যবহারে নিজ থেকে বিরত থাকতে হবে সচেতন ভাবেই। ভয়ংকর ক্ষতিকারক পলিথিন থেকে বাঁচতে পলিথিন নিষিদ্ধের আইন যথাযথ প্রয়োগ, মান্য করা, বিকল্প ব্যাগ, পাটজাত ব্যাগ ব্যবহারে জোর দেওয়া এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি অতীব জরুরি। সফিউলস্নাহ আনসারী : কবি, গণমাধ্যমকর্মী