সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেওয়ায় ব্যাপকভাবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার দাবি করেছিল বিজিএমইএ। এছাড়া কারখানা বন্ধ, শ্রমিক বিক্ষোভসহ বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। আর এমন অবস্থায় যখন জানা যাচ্ছে যে, বছরের প্রথম আট মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভাটা দেখা গেছে। আর এতে বাংলাদেশ, চীন ভিয়েতনাম ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় কমেছে তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। জানা যাচ্ছে, অন্য বছরগুলোতে তৈরি পোশাক ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি বছরের জানুয়ারি-আগস্টে কমেছে। তথ্য মতে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীন, দ্বিতীয়তে থাকা ভিয়েতনাম ও তৃতীয়তে থাকা বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে। আমরা মনে করি, এটি আমলে নিয়ে দেশের সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
উলেস্নখ্য, রপ্তানিতে ভাটা পড়ার এসব তথ্য উঠে এসেছে ইইউরোস্ট্যাট ও ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) জানুয়ারি-আগস্টের প্রতিবেদনে। তথ্য বলছে, তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট- এই আট মাসে রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার কমেছে ৪ দশমিক ০৪ শতাংশ। দুই বড় বাণিজ্য বলয়ে রপ্তানি আয় কমেছে যথাক্রমে ২২৩ কোটি ৬৩ লাখ ডলার এবং ২১৫ কোটি ৪৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার। সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব বলে মনে করছেন রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে।
উলেস্নখ্য যে, জানুয়ারি-আগস্টে ইউরোপে পাঁচ হাজার ৯৩২ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আর আগের বছর একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ছয় হাজার ১৫৫ কোটি ৭৭ লাখ ৭০ হাজার ডলারের। জানুয়ারি-আগস্টে চীনের রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ভিয়েতনামের ৪ দশমিক ১০ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এর বাইরে তুরস্কের কমেছে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ আর কম্বোডিয়ার কমেছে ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অন্যদিকে, তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে বছরের প্রথম আট মাসে পাঁচ হাজার ১৩০ কোটি ২১ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আগের বছরে একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল পাঁচ হাজার ৩৪৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের। জানুয়ারি-আগস্টে চীনের রপ্তানি কমেছে ২ দশমিক ৭০ শতাংশ, ভিয়েতনামের ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, দেশের সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেওয়া দরকার, একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে উলেস্নখযোগ্যভাবে। তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উলেস্নখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি কমে যাওয়া দেশ। জানুয়ারি-আগস্ট আট মাসে বাংলাদেশ সে দেশে ৪৭০ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। আগের বছরের একই সময়ে রপ্তানি করেছিল ৫১৮ কোটি ৫১ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, রপ্তানিকারকরা বলছেন, বছরের শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানি কমলেও সেপ্টেম্বর থেকে রপ্তানিতে আবারও ইতিবাচক ধারা ফিরেছে। আশা করা যাচ্ছে, পরবর্তী প্রতিবেদন যখন আসবে, তখন দেখা যাবে- তৈরি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, পোশাক রপ্তানিতে ভাটা পড়লে তা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগের। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর অর্থনীতির অবস্থা খারাপ ছিল। ধীরে ধীরে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, এখন বাড়বে। এছাড়া রপ্তানি শুধু আমাদের দেশের কমেছে, এমন নয়। প্রায় সব দেশের রপ্তানিই কমেছে উলেস্নখ করে, সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে এসব দেশে রপ্তানি বাড়াতে পারার আশা প্রকাশ করেছেন। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধিতে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।