আবারও বড় ব্যবধানে নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে ওভারনাইট রেপো সুদহার ১০ শতাংশে উন্নীত হবে এবং ঋণসহ সব ধরনের ব্যাংকিং পণ্যের সুদের হার বেড়ে যাবে। বলা দরকার, দেশের মানুষ মূল্যস্ফীতির তীব্র চাপ অনুভব করছে- এর আগে এমন বিষয় আলোচনায় এসেছিল। এছাড়া এটাও স্মর্তব্য, জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। অন্যদিকে, এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর নীতি সুদহার সর্বশেষ বার বাড়ানো হয়েছিল। তখনো ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে নীতি সুদহার ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়। তথ্য মতে, এবারে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, নীতি সুদহার বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত ২৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। মুদ্রানীতিতে সংকোচনমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে বলে জানানো হয়।
আমরা বলতে চাই, সামিগ্রকভাবে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে হবে। এছাড়া এটাও লক্ষণীয়, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুধু নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। এতে হয়তো মূল্যস্ফীতি যাতে আর না বাড়ে, সেক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে অবশ্যই বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। ফলে, আমরা মনে করি, এই বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। উলেস্নখ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, নীতি সুদহার বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করার লক্ষ্যে নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির (এসএলএফ) ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুদহার ১১ শতাংশ থেকে ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশে এবং নিচের সীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৭ থেকে ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে।
আমলে নেওয়া দরকার, নীতি সুদহার বাড়ানোর মূল লক্ষ্য হলো বাজারে অর্থের সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে বাজারে অর্থের সরবরাহ বেশি এবং সে কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, তাহলে অর্থপ্রবাহ কমাতে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করা হয়। নীতি সুদহার বৃদ্ধির অর্থ হলো, ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত সুদ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ করতে হবে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে ঋণ দেয়, তার সুদহারও বাড়ে। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখান বু্যরোর (বিবিএস) হিসাবে, সেপ্টেম্বর মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি কমেছে। এ মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে থাকলেও তা আগের মাসের তুলনায় কমার কথা জানায় বিবিএস। কিন্তু এটাও আমলে নেওয়া দরকার, চলতি মাসে বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ে। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তাতে ডিমের মতো পণ্যের দাম কিছুটা কমে। তবে বাজারে নতুন করে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও পেঁয়াজের এমনটি জানা গেছে। আর এসব পণ্যের দাম আরও বাড়ল এমন সময়ে, যখন বাজারে কোনো স্বস্তি নেই- এই আলোচনাও উঠে আসছে- যা কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, মূল্যস্ফীতি বাড়লে বিশেষ করে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি না থাকলে তা অত্যন্ত উৎকণ্ঠাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। সিন্ডিকেট আছে, আছে মধ্যস্বত্বভোগী- এই আলোচনাও নানা সময়েই সামনে এসেছে। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অভিযোগও উঠেছে- যা বিবেচনায় রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখবেন এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।