৪৬ বছরে বিপুল অর্থ পাচার কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি
প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
অর্থ পাচার সংক্রান্ত উদ্বেগ নানা সময়ই আলোচনায় এসেছে- যা আমলে নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। বিদেশে অর্থ পাচারসহ সার্বিকভাবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার সংক্রান্ত অপরাধ আমলে নেওয়ারও বিকল্পও নেই। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত- ৪৬ বছরে দেশ থেকে পাচার হওয়ার টাকার পরিমাণ ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৭ কোটি। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অর্থ পাচারের পরিমাণ কমপক্ষে ৭৫ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা- যা একই অর্থবছরের সৃষ্ট মোট কালো টাকার ৯ শতাংশের সমপরিমাণ। আর এই দাবি অর্থনীতি সমিতির।
এ প্রসঙ্গে এটাও বলা দরকার, দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে অন্তর্র্বর্তী সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। একইসঙ্গে অর্থ পাচারের উৎসগুলো বন্ধে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টাকে সর্বোতভাবে সমর্থন জানিয়েছে। সোমবার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ সমর্থনের কথা জানানো হয়। এটাও উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি মনে করছে- দেশের অর্থনীতিতে ক্যানসার ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়া কালো টাকা, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির মতো মৌলিক সমস্যা নির্মূলে বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকার সমর্থ হবে। ফলে, এই বিষয়গুলো আমলে নেওয়া এবং অর্থ পাচারের যে তথ্য উঠে এসেছে তা বিবেচনায় রেখে অর্থ পাচার সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
স্মর্তব্য, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে টাস্কফোর্স গঠন করার বিষয়টি জানা গেছে সাম্প্রতিক সময়েই। যা জানিয়েছিলেন অর্থ উপদেষ্টা। ফলে, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে একটি টাস্কফোর্স গঠন ও কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদেশে অর্থ পাচার অন্যতম প্রতিবন্ধক, এতে কোনো সন্দেহও নেই। ফলে, অর্থ পাচার হলে তা কতটা উদ্বেগজনক সেটা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ই এ তথ্য উঠে এসেছে, দেশ থেকে প্রতি বছর নানাভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। সঙ্গত কারণেই অর্থ পাচার রোধ করা কতটা জরুরি তা সহজেই অনুমেয়। বিদেশে অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ ও পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে সামগ্রিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
বলা দরকার, অর্থনীতিতে পেশাদারদের সংগঠন অর্থনীতি সমিতি মনে করছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অন্তত ৩ শতাংশের সমপরিমাণ মতো অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, যা দেশে বহুমাত্রিক বৈষম্য ও দারিদ্র্যের বিস্তার ঘটাচ্ছে এবং সর্বগ্রাসী দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে। তাদের হিসাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে অর্থ পাচারের পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৭৫ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা- যা একই অর্থবছরের সৃষ্ট মোট কালো টাকার (৮ লাখ ৪১ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা) ৯ শতাংশের সমপরিমাণ এবং একই অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১৬.৩ শতাংশের সমপরিমাণ। এ হিসাবে ৪৬ বছরে (১৯৭২-৭৩ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে) দেশের মোট অর্থ পাচারের পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। যেখানে প্রতি বছর বাজেট সংকুলানের জন্য সরকারকে দেশি-বিদেশি বিপুল ঋণ নিতে হচ্ছে, সেখানে মোট বাজেটের প্রায় এক-পঞ্চমাংশের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাওয়া জাতি হিসেবে অত্যন্ত উদ্বেগের এটাও উঠে এসেছে।
সর্বোপরি বলতে চাই, অবৈধভাবে অর্থ পাচার করা যেমন অপরাধ তেমনিভাবে অত্যন্ত উৎকণ্ঠার। ফলে, অর্থ পাচারকারীদের যেমন শাস্তির আওতায় আনতে হবে, তেমনিভাবে অর্থ পাচারের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সতর্ক থাকা এবং সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে অন্তর্র্বর্তী সরকারের টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে তারা মনে করে, যেহেতু দুর্নীতি-কালো টাকা-অর্থ পাচার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টেকসই ও উন্নত করার পথে অন্যতম প্রতিবন্ধকে পরিণত হয়েছে, সেহেতু 'দুর্নীতি, কালো টাকা ও অর্থ পাচার কমিশন' শীর্ষক একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। এটি সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নিতে হবে। অর্থ পাচার সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।