সম্প্রতি রাজধানীতে ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি থামিয়ে চাপাতি-ছুরি দেখিয়ে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ১৭ হাজার টাকার একটি চেক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকাল ১০টার দিকে মোহাম্মদপুর হাউজিং লিমিটেড এলাকায় নেসলে কোম্পানির একটি গাড়িতে করে টাকা নিয়ে ব্যাংকে যাওয়ার সময় এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
অপরাধীদের ধরতে আশপাশের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, এই ঘটনায় এখনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি, তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিল ছিনতাইকারীরা, রাজধানী ঢাকায় তারা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এর আগে রাজধানীর বাসাবোতে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে ব্যাটারিচালিত রিকশার এক চালক নিহত হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক।
বেশ কিছু দিন আগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাই মামলায় ৬৭৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় মোট ৩০৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে। নানা কারণে পুলিশ সে দিকে মনোযোগ দিতে পারেনি।
এটা সত্য, ছিনতাইকারীরা সাধারণত গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। তবে ভোরের দিকে ছিনতাই বেশি হয়ে থাকে। দিনের বেলায়ও রাজধানী ঢাকায় ছিনতাই হয়ে থাকে। ছিনতাইকারীরা মহিলাদের ভ্যানিটিব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয় সহজেই। এ জন্য ছিনতাইকারীরা মোটর সাইকেল ব্যবহার করে থাকে। কখনো কখনো তারা প্রাইভেট কারও ব্যবহার করে থাকে। এই শহরে চালককে হত্যা করে গাড়ি, সিএনজি চালিত বেবিট্যাক্সি ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে।
পুলিশের হিসাবেই রাজধানী ঢাকায় ছয় হাজারের বেশি ব্যক্তি ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৭৩৭ জন ছিনতাই এবং ৪ হাজার ৪৬১ জন ডাকাতিতে জড়িত। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তৈরি করা কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডারে এসব অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ বৃত্তান্ত রয়েছে। এতে ঢাকার ৫০টি থানা এলাকায় ছিনতাই-ডাকাতিতে জড়িত ব্যক্তিদের তথ্য ছিল। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অপরাধীদের নিয়ে গড়ে তোলা তথ্যভান্ডার অপরাধী শনাক্ত ও ঘটনা প্রতিরোধের একটি মাধ্যম। পুলিশকে এখন এ ব্যাপারে সক্রিয় হওয়া জরুরি।
আমরা মনে করি, কেবল এর ওপর নির্ভর করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কারণ, অনেক সময় অপরাধীরা তাদের এলাকা থেকে সরে যায়। তখন এই জায়গায় আবার নতুন অপরাধী যুক্ত হয়ে অপরাধ ঘটায়। তাই পুলিশকে নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে ঘটনা ঘটার আগেই অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করতে হবে। পাশাপাশি সেসব এলাকা টহল ও নজরদারির মধ্যে রেখে অভিযান চালাতে হবে। আমরা মনে করি, পুলিশ সক্রিয় হলেই রাজধানী থেকে ছিনতাই ডাকাতির মতো অপরাধ কমে যাবে। নিশ্চিত হবে নাগরিকদের যাতায়াতজনিত নিরাপত্তা।