সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, যখন প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ, তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৪৮৫টি। এতে নিহত হয়েছেন ৫৫৯৮ জন এবং আহত ৯৬০১ জন। এছাড়া, নিহতের মধ্যে নারী ৬৭৭ জন, শিশু ৭২৯ জন। রোববার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
আমরা বলতে চাই, যদি ৯ মাসে দেশে সড়কে ৫৫৯৮ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে, তবে পরিস্থিতি ভয়াবহতা কীরূপ তা অনুধাবন করার যেমন জরুরি; তেমনি এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। তথ্য মতে, নিহতদের মধ্যে ২০৪১টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৯২৪ জন- যা মোট নিহতের ৩৪.৩৬ শতাংশ। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৭.২১ শতাংশ। এছাড়া, দুর্ঘটনায় ১১২১ জন পথচারী নিহত হয়েছেন- যা মোট নিহতের ২০ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৮৮ জন, অর্থাৎ ১২.২৯ শতাংশ। আমরা বলতে চাই, দুর্ঘটনার এমন চিত্র কতটা আশঙ্কা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর শুধু সড়কেই নয়, ঘটছে নৌ ও রেলদুর্ঘটনাও। জানা যাচ্ছে, এ বছরের প্রথম ৯ মাসে ৮৩টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১২৪ জন নিহত, ১২৫ জন আহত এবং ১৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। আর ২৪৩টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২২৭ জন নিহত এবং ২২৩ জন আহত হয়েছেন।
আমরা বলতে চাই, যেভাবে দুর্ঘটনায় একের পর এক মানুষ নিহত হচ্ছে, আহত হচ্ছে, আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ফলে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না। স্মর্তব্য, এর আগে সড়ক দুর্ঘটনার ডজন দুয়েক কারণ সামনে এসেছে। তদুপরি দেখা যাচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনাসহ দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। সড়কে লাশের সারি দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। মনে রাখা দরকার, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, ট্রাফিক আইন অমান্য করাসহ বিভিন্ন কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনার পরিমাণ- এমন আলোচনাও বারবার উঠে এসেছে। এটাও এড়ানোর সুযোগ নেই যে, গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দায়িত্বহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে সড়কে মৃতু্য কমছে না। একই সঙ্গে পথচারী ও যানবাহন চালকদের অসচেতনতা, যানবাহনের বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি পরিচালনা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে মনে করেন তারা। ফলে, এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রেখেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। আমরা মনে করি, সার্বিকভাবে যেমন দুর্ঘটনার চিত্র আমলে নিতে হবে। তেমনি এটাও লক্ষণীয়, তথ্য মতে, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। এ বিভাগে ১১৭২টি দুর্ঘটনায় ১৩৬৪ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৩১৯টি দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত হয়েছেন।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৪৮৫টি। এতে নিহত হয়েছেন ৫৫৯৮ জন এবং আহত ৯৬০১ জন। একইসঙ্গে রেল ও নৌ দুর্ঘটনাও থেমে নেই। যা আমলে নেওয়া জরুরি। মনে রাখা দরকার, বিভিন্ন সময়েই দুর্ঘটনার কারণ আলোচনায় এসেছে। তদুপরি সড়ক নিরাপদ হয়নি। দুর্ঘটনা রোধ হচ্ছে না। ফলে, একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেন ঘটছে তা আমলে নিতে হবে এবং দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। সার্বিকভাবে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।