জনগণ ও রাষ্ট্র এক অবিচ্ছেদ্য বিষয়। সরকার একটি স্বল্পস্থায়ী প্রতিষ্ঠান মাত্র এবং জনগণের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কই রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডের মধ্যে নিহিত। তাই জনগণের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক অতিগুরুত্বপূর্ণ এবং এই সম্পর্ক সুদৃঢ় ও স্বচ্ছ হওয়া একান্ত প্রয়োজন। সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ওই দৃঢ়তা ও স্বচ্ছতা বিধানের মাধ্যম। সরকারের রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ড জনগণকে সম্পৃক্ত করে, জনগণকেন্দ্রিক এবং সব জনগণের জন্য সমভিত্তিক হতে হয়। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পদ্ধতিই জনগণ, রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক ও জবাবদিহি অধিকতর নিশ্চিত করে বলে বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত ধ্যানধারণা রয়েছে। যদিও গণতন্ত্র বর্তমানে দলতন্ত্রে এবং পরিবারতন্ত্রে পরিণত হয়েছে, বিভিন্ন দূষণে দুষ্ট এবং বিশ্বব্যাপী এখন অনেকটা ব্যর্থতায় পর্যবসিত। জনগণ এখনো শোষণের শিকার। এই শোষণে রাষ্ট্র ও সরকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে- বিশেষত, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। অসম বণ্টন ও সুযোগ-সুবিধার অসম ব্যবহার বর্তমান বিশ্বের বড় একটি সমস্যা। এটি একটি দুষ্টচক্রে পরিণত হয়েছে। জনগণ ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এই রাহুগ্রাস থেকে নিষ্কৃতি নিশ্চিত করা জরুরি। রাজনীতি জনগণের জন্য, জনসেবার জন্য। আর অর্থনীতি জনজীবনকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে। তাই রাজনৈতিক বলয়ে অর্থনীতির স্বরূপ অনুধাবন প্রয়োজন। অন্য কথায় একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক অর্থনীতি সম্পর্কে আমাদের কমবেশি সচেতনতা আবশ্যক। এটি ছাড়া নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা কঠিন বৈকি।
রাজনীতি এবং অর্থনীতি পরস্পর প্রযুক্ত বা একে অন্যের পরিপূরকও বলা যেতে পারে। যেমন রাজনীতি করতে গেলে অর্থনীতির একটা ভূমিকা এসেই যায়, আবার অর্থনীতি পরিচালনার জন্য ক্ষমতা বা নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়- যা কিনা রাজনীতির একটা বাই-প্রডাক্ট। অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ, এর প্রবৃদ্ধি ঘটানো, ব্যবহার ও উপযোগিতা বৃদ্ধি রাজনৈতিক ইচ্ছা বা ক্ষমতার ব্যবহার ব্যতিরেকে ঘটে না। নাগরিকের কাছ থেকে কর রাজস্ব আহরণ এবং সেই নাগরিকের কল্যাণে তা ব্যয় করার জন্য আইন কানুন তৈরি ও প্রয়োগের মাধ্যমে জবাবিদিহিতার পরিবেশ যাতে সৃষ্টি হয়। এখানে রাজনীতি অর্থনীতির মেলবন্ধনের প্রাসঙ্গিকতা চলে আসে। আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, অর্থনৈতিক পরিবর্তন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রেরই পরিবর্তনের চাবিকাঠি। আর্থিক ক্ষমতা একটি পরিবারকে নিশ্চিত ভবিষ্যৎই দেয় না, একটি শিক্ষিত এবং স্বাস্থ্যবান পরিবার নির্মাণে সব ধরনের জোগান দিয়ে থাকে। দেশের প্রতিটি পরিবারে যখন অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটবে তখন সমগ্র দেশটার চেহারাই পাল্টে যাবে। অর্থনৈতিক পরিবর্তন না ঘটাতে পারলে অন্য কোনো ক্ষেত্রেরই পরিবর্তন ঘটবে না। আর এ পরিবর্তন ঘটানোর দায়িত্ব সর্বাগ্রে বর্তায় আমাদের রাজনীতিবিদদের তথা জনপ্রতিনিধিদের ওপর। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিশ্বজুড়েই এখন চলছে উন্নয়নের রাজনীতি। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে রাজনীতি করছেন রাজনীতিবিদরা। সরকারি আর বিরোধী- সব পক্ষই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথার অঙ্গীকার করে যাচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, উন্নয়নের রাজনীতি না হয়ে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের রাজনীতি হলে ভালো হয়।
ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়ার পথে থাকা দেশ অর্থনীতি ও সমাজে প্রায়শ কয়েকটি পরস্পর প্রযুক্ত প্রশ্নের সম্মুখীন। প্রথমত, মাত্রাহীন দুর্নীতি কি শুধু নৈতিক ব্যর্থতা নাকি তা রাজনৈতিক অর্থনীতির অবশ্যম্ভাবী অনুষঙ্গ? দ্বিতীয়ত, সংস্কারে অনীহা কি অদক্ষতার প্রশ্ন না দুর্নীতিগ্রস্ত স্বার্থকে আড়ালে রাখার প্রয়োজনে? তৃতীয়ত, বাস্তবায়নগত দুর্বলতা কি সক্ষমতার অভাব না ক্ষেত্র বিশেষে মেধার নিরন্তর অবমূল্যায়নের ফল? এসব দেশ বা অঞ্চলে অর্থনীতি সুষ্ঠু পরিচালনার ক্ষেত্রে ঘাটতিতে দায় দায়িত্বহীনতা ও সুশাসনের অভাব এবং এ ব্যাপারে চির প্রতিদ্বন্দ্বী নিকট প্রতিবেশীদের কলকাঠি নাড়ার ভূমিকা সব সময় ছিল বা আছে। তবে তিন, চার কিংবা পাঁচবার একটানা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার সুবাদে স্বৈরাচারী সরকারসমূহে রাজনৈতিক অর্থনীতির নীতি প্রণয়নে একটি মৌলিক রূপান্তর ঘটে চলেছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রবণতা বা চ্যালেঞ্জের পরিণতি বিশ্লেষণে দেখা যায়- একমাত্রিক উন্নয়ন ধারণায় অবকাঠামোই সব সামাজিক উন্নয়ন দর্শনকে পাশে ঠেলে দিয়েছে। যেমন- শিক্ষার মানের চেয়ে শিক্ষালয়ের ভবন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যসেবার মানের চেয়ে হাসপাতাল ভবন এখন অধিক গুরুত্বপূর্ণ। নগর অবকাঠামো ইন্টিগ্রেটেড ও বাসযোগ্যতাকে প্রাধান্য না দিয়ে বিচ্ছিন্ন অবকাঠামোর সমাহারে রূপান্তরিত হয়েছে। একমাত্রিক উন্নয়ন দর্শনে কঠিন শর্তের ধার-কর্জে আত্মসাৎ, অপচয়, দুর্নীতি দ্বারা নির্মিত অবকাঠামোর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান হয়ে ওঠছে। যেমন সড়ক নিরাপত্তার শঙ্কাজনক ঘাটতি এবং নিরাপদ ভ্রমণের অনিশ্চয়তা, শিক্ষার মানের নিম্নগতি, কাঙ্ক্ষিত ফলাফল ছাড়াই স্বাস্থ্যসেবা অত্যধিক ব্যয়বহুল হয়ে যাওয়া, অতিমাত্রায় সড়কে সেতু অবকাঠামো নির্মাণে জলাধার ও নদী ও নিসর্গ নির্জীব হয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ ঘটাচ্ছে।
আইন এবং তা বাস্তবায়নের মাঝে চোখে পড়ে বিপুল দূরত্ব। আইনের ভালোটুকু পালিত হয় না, পালিত হয় মন্দটুকু। আইনে যা বলা আছে তা পালনে বিস্তর অনীহা- যা বলা নেই সেটি পালনের মহোৎসবই যেন সর্বত্র দৃশ্যমান। জাল যার জলা তার নয়, যিনি কৃষক তিনি ভূমিহীন। ভূমির সঠিক ব্যবহার আজো নিশ্চিত হওয়ার অপেক্ষায়। বেঠিক ব্যবহারই যেন প্রশ্রয় পাচ্ছে। অনিয়ম নিয়ম হয়ে যাচ্ছে। শোষণ বঞ্চনা বৈষম্যের বিরুদ্ধে মরণপণ সংগ্রামে জয়ী তৃতীয় বিশ্বের বহু মানুষ আর্থসামাজিক রাজনীতির ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে অধিকার বঞ্চিত। বিশেষ করে, যারা অর্থনৈতিক বিচারে দরিদ্র, পেশার নিরিখে সংখ্যালঘু তাদের বঞ্চনা ও অধিকারহীনতার অভিযোগ বাড়ছে। সুসংহত আইনি ব্যবস্থা ব্যতিরেকে মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখা পুরোপুরি সম্ভব নয়। অনেক দেশেই এখনো এমন একটি মানবিক আইনি কাঠামো স্থিতিশীল হয়নি যা মানুষের সার্বিক ও মানবিক বিকাশকে সহজ করবে। পুরো আইনি ব্যবস্থার পরতে পরতে এখনো রয়ে গেছে তাদের পূর্বেকার ঔপনিবেশিক মানসিকতার হীন অভিপ্রায়। ফলে, অগুনতি আইনি অসঙ্গতি থেকে 'মুক্তির সংগ্রাম' শেষ হয়নি। এসব দেশে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় রাজনৈতিক, অর্ধরাজনৈতিক, ছদ্ম রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক অবস্থা-ব্যবস্থা নানান রঙে, নানান মোড়কে আচ্ছাদিত। প্রশাসনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে সরকারি কিংবা দলীয়করণ করে সরকারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন-দূরদৃষ্টিহীন- জনসংযোগহীন আইনি পরিবর্তনের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। তেমনি, রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং সদিচ্ছার অভাবে একটি ভালো আইনের মন্দ প্রয়োগও যেন অতি সাধারণ বিষয়। প্রতীয়মান হয়, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক এবং সামাজিক কাঠামোটাই এমন যে, তা জনমানুষের দুর্ভোগে বিচলিত তো নয়ই, বরং ভোগান্তি উৎপাদন এবং পুনরুৎপাদনকারী আইনি এবং প্রশাসনিক কাঠামোই চিরকাল হাত ধরে পাশাপাশি হেঁটেছে, হাঁটছে। মানুষকে অজ্ঞতায় রেখে কোনো উন্নয়নই টেকসই হয় না।
অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের ওপর গোষ্ঠী বা সিন্ডিকেট স্বার্থের আধিপত্য। অতিমারী কিংবা পূর্ব ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সমর এর অভিঘাতের অজুহাতে উঠতি অর্থনীতির নিম্নগামী হওয়ার ক্ষেত্রে অলিগার বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে- যা উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতাকে নিরুৎসাহিত করছে এবং মেধা, উদ্যোক্তা ও সম্পদ পাচারকে উৎসাহিত করছে। সংকীর্ণ ও সংকুচিত বেসরকারি স্বার্থ রক্ষার নামে যে ধরনের অনৈতিক নিয়ম সাজানো হয় তা উদ্বেগজনকভাবে আর্থিক সংস্থান, ব্যাংক খাত, বিদু্যৎ, পরিবহণ ব্যবস্থা, আইসিটি এবং অবকাঠামো খাতের ধস ও ধ্বংস স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কোনো কোনো দেশে উন্নয়নের নানা মাত্রায় সে দেশের ভূমিকা এবং অর্জন দেশ এবং সারা বিশ্বে যথাযথভাবে পরিচিতি পেয়েছে। তবে এসব দেশে পরিবর্তনের পাশাপাশি আকাঙ্ক্ষা ও চ্যালেঞ্জের জগৎ পাল্টেছে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে অর্থনীতিতে কিছু উদ্বেগের জায়গা ঘনীভূত হয়েছে। দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক হতাশা বর্তমানে সংকটের শীর্ষবিন্দুতে অবস্থান করছে। এসব হতাশা তৈরি হচ্ছে ত্রম্নটিপূর্ণ ও দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থনীতি পরিচালনার রাজনৈতিক অর্থনীতি থেকে। এটাও ঠিক কোন কোন দেশ উন্নয়ন যাত্রার বাঁকবদলের পর্যায়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে সফলতার মুখ দেখা অন্য দেশগুলো মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়েছে, কারণ তারা সতর্ক সংকেতগুলো মানেনি এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলোকে মূল্যায়ন করেনি। সাব-সাহারা ও মধ্যপ্রাচ্যের আন্তঃকলহে লিপ্ত দেশসমূহের মতো এমন কি শ্রীলঙ্কার মতো এসব দেশে পারস্পরিকভাবে এমন নীতির প্রবণতাকে শক্তিশালী করে তুলছে- যা দেশসমূহের অর্থনীতিতে ব্যাপক স্থিতিশীল উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রে কাঠামোগত বাধায় রূপান্তরিত হতে চলেছে। বাস্তবে পরিকল্পিত অকার্যকারিতা এবং দুর্নীতি বিস্তারের যোগসাজশের বিষয়টি স্পষ্টতর হয়ে উঠতেও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, সার্বিক বিষয়টি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি ও সুশাসনের পথে না গেলে, বরং 'গোষ্ঠীস্বার্থ' রাজনৈতিক অর্থনীতির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক এজেন্ডায় অর্থনৈতিক মুক্তির কথা, দেশের উন্নয়নের কথা বা জনগণের কল্যাণের কথা হরহামেশা রাজনৈতিক প্রতিটি দলই নানাভাবে বলে যাচ্ছে। এসব শুধু এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত থাকলে চলবে না। খোদ রাজনীতিকেই অর্থনৈতিক পরিবর্তনের স্রোতধারায় নিয়ে এসে নতুন রাজনৈতিক প্রবাহ সৃষ্টি করতে হবে এবং সেটি হবে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের রাজনীতি। আমাদের দেশে এখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতির চর্চা কতটা বিদ্যমান? গণতন্ত্রে বিশ্বাসী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের পুরনো দৃষ্টিভঙ্গি ও ধ্যান-ধারণার রাজনীতিতে বিবর্তন ঘটিয়ে বর্তমানের বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দিয়ে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের রাজনীতি প্রবর্তন করতে হবে। রাজনীতির স্বার্থে অর্থনীতি নয়, বরং অর্থনীতির স্বার্থেই রাজনীতিকে সাজাতে হবে। আর এ উদ্যোগটা নিতে হবে স্বয়ং রাজনীতিবিদদেরই।
দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার আলোকে এ ধারার রাজনীতিতে প্রথমেই করণীয়গুলো নির্ধারণ করতে হবে। দেশের প্রতিটি পরিবারকে উপার্জনক্ষম পরিবারে রূপান্তর করাই হবে এ রাজনীতির মূল লক্ষ্য। অর্থাৎ প্রতিটি কর্মক্ষম মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
আর সে জন্য বাড়াতে হবে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ। আমাদের সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ভিত্তি করে, অফুরন্ত মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহার করে, প্রশাসনিক দক্ষতা সৃষ্টি করে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বিস্তৃত এবং শক্তিশালী করার নীতি ও তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করতে হবে। আর এ সবকিছুকেই কেন্দ্র করে রাজনীতির চাকাকে ঘুরাতে হবে, সচল রাখতে হবে। সর্বোপরি, রাজনৈতিক ব্যক্তির বা দলের উদ্দেশ্য আর লক্ষ্য ও প্রতিশ্রম্নতিতে হবে অর্থনৈতিক পরিবর্তন, দেশের মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করে সুন্দর ও উন্নত জীবনযাপনের নিশ্চয়তা প্রদান করা।
দক্ষিণ এশিয়ার কোনো না কোনো দেশে ভূমি ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় অর্থনীতি ও রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের কাঠামোতে দুর্বৃত্তায়নের প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে। সামগ্রিক দুর্বৃত্তায়নের কাঠামোতে দুর্নীতিগ্রস্ত ও অকার্যকর আইনশৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থায় শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় তারা- যারা জোরপূর্বক জমি, জলা, বন দখল করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভূ-রাজনীতির মোড়লরা। পরিশেষে একথা বলতে পারি যে, ভূ-রাজনৈতিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ এবং রাজনৈতিক অর্থনীতি বাংলাদেশের সাম্য ও সুশাসনকে বাধাগ্রস্ত করছে। এ প্রবন্ধের বিশ্লেষণ থেকে নিম্নের প্রশ্নসমূহ সাধারণ মানুষকে বরাবরই শঙ্কিত করছে। সেগুলো হচ্ছে- বিবর্তনের ধারায় রাজনৈতিক অর্থনীতির কতটা ভারসাম্যতা রক্ষা পাচ্ছে? ভূ-রাজনীতির মোড়লিপনা বঞ্চনা ও অধিকারহীনতার জন্য কতটা দায়ী? রাজনৈতিক অর্থনীতি কি শোষণ ও বঞ্চনার অভিনব হাতিয়ার? তাই আসুন রাজনীতি অর্থনীতির বির্বতনমূলক মতবাদ বা তত্ত্বে বিভোর না হয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি এবং রাষ্ট্রের সংস্কারে মনোযোগী হয়ে রাষ্ট্র কাঠামোর পুনর্গঠন ও মেরামত করতে হবে।
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, কলামিস্ট ও গবেষক