শ্রমিক অসন্তোষে ক্ষয়ক্ষতি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির খবর সামনে এসেছে- যা উদ্বেগের। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, শ্রমিক অসন্তোষ বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, যেখানে উৎপাদন কমে যাওয়া, আর্থিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ্য, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পোশাক খাতে যে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, তাতে অন্তত ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে বলে দাবি করেছে বিজিএমইএ। শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানানোর পাশাপাশি কিছু দাবিও তুলে ধরেছে সংগঠনটি। আমরা বলতে চাই, ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ব্যাহত হলে তা যেমন উদ্বেগের, তেমনি বিজিএমইএ যেসব দাবি তুলে ধরেছে সেগুলো আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করা।
উলেস্নখ্য, বিজিএমইএর সভাপতি বলেছেন, শ্রমিক অসন্তোষের ফলে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এর পাশাপাশি লক্ষণীয়, প্রতিনিয়ত ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে বলে জানতে পারার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন তিনি। প্রসঙ্গত, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজীপুর; ঢাকার সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে পোশাক শ্রমিকরা নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। কোথাও কোথাও সড়ক অবরোধের পাশাপাশি সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। আর এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে পোশাক খাত বর্তমানে স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির সভাপতি। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কিছু কার্যাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন। যদিও বর্তমানে স্থিতিশীলতা 'পুনরুদ্ধার হওয়ায়' আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো আবার ফিরে আসছে বলে দাবি করেছেন।
আমরা মনে করি, পোশাক খাতের অস্থিরতা এবং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এটা স্মর্তব্য যে, তৈরি পোশাক খাত দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস। ফলে, এই খাতে যে কোনো ধরনের আনকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা দ্রম্নত নিরসন করার বিকল্প নেই। এটাও আলোচনায় এসেছে যে, বিজিএমইএ বোর্ডের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সরকারের নির্দেশনায় পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী গঠন হয়েছে এবং যৌথবাহিনী গার্মেন্টস অধু্যষিত অঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিতভাবে টহল পরিচালনা করেছে। বিজিএমইএ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কমিউনিটি পুলিশিং চালু করেছে।
আমরা বলতে চাই, এর আগে শিল্প খাতের অস্থিরতা নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ফলে, সংকট তৈরি হয়েছিল কেন তার প্রকৃত কারণ নির্ণয় করে সেই মোতাবেক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। কেননা, কোনোভাবেই শিল্প খাতে অস্থিরতা তৈরি হলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। শ্রমিক অসন্তোষ উৎপাদন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে, রপ্তানি কমে যাওয়া, ক্রেতা হ্রাস পাওয়াসহ নানাবিধ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এটাও উলেস্নখ্য, শ্রম অসন্তোষে আশুলিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৯টি পোশাক কারখানার সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের ক্ষমতা ছিল না জানিয়ে সভাপতি বলেছেন, ওই সব কারখানা যাতে বিপদে না পড়ে, সেজন্য তাদের সুদহীন সহজ শর্তের ঋণ দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া, পোশাক শিল্পের ৪০ লাখ শ্রমিক যাতে ন্যায্যমূল্যে পণ্য পান, সেজন্য তাদের টিসিবির কর্মসূচিতে নেওয়া হয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিন মাস যাতে কোনো কারখানায় গ্যাস-বিদু্যতের লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা হয়, সেজন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংক সুদের হার একক অংকে নামিয়ে আনারও আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ব্যাহত হওয়াসহ কিছু দাবিও তুলে ধরেছে বিজিএমইএ। ফলে, এগুলো বিবেচনায় নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। কেননা, অস্থিতিশীলতা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। দেশকে এগিয়ে নিতে, অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে পোশাক খাতের স্বাভাবিকতা জরুরি। সঙ্গত কারণেই যে বিষয়গুলো উঠে আসছে তা সুষ্ঠুভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। স্বাভাবিকতা ফেরাতে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।