শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

দুর্বল ব্যাংক সুরক্ষা এ উদ্যোগ ইতিবাচক

  ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
দুর্বল ব্যাংক সুরক্ষা এ উদ্যোগ ইতিবাচক

দুর্বল ব্যাংক সুরক্ষার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা ছয় দুর্বল ব্যাংককে মোট ১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে তুলনামূলক সবল তিন ব্যাংক। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন ব্যাংক, গেস্নাবাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে ওই তহবিল জুগিয়েছে সোনালী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ডাচ বাংলা ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার তহবিল স্থানান্তর করা হয়। এর বাইরে ইসলামী ব্যাংকও তারল্য সহায়তা চেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব দুর্বল ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আবেদন যাচাই-বাছাই করে সামনে আরও ব্যাংককে এ সহায়তা দেওয়া হবে।

এটা সত্য, ক্ষমতার পালাবদলের পর ব্যাংক খাতের অনিয়মের চিত্র সামনে আসে। বিশেষ করে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গ্রম্নপ এস আলম ইসলামী ধারার এসব ব্যাংক নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। যে ব্যাংকগুলো তারল্য সহায়তা পাচ্ছে, সবগুলোতে ইতোমধ্যে প্রশাসক বসিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ছাড়া বাকি ছয়টি ব্যাংক এস আলম গ্রম্নপের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

নানা উদ্যোগ ও তৎপরতার পরও বেশ কিছু ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। ইতোমধ্যে ১০টি সবল ব্যাংক এসব দুর্বল ব্যাংককে নগদ অর্থ দিতে রাজিও হয়েছে। তাতে আশা করা যায়, গ্রাহকদের খালি হাতে ব্যাংক থেকে ফিরে যেতে হবে না।

এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট রাষ্ট্র ক্ষমতার পালাবদলের পর আর্থিক খাতের নেতৃত্বেও পবির্তন আসে। শুরুতে ইসলামী ব্যাংককে 'এস আলম মুক্ত' করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন কর্মীরা। পরে অন্য ব্যাংকগুলোতেও আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ ডেপুটি গভর্নর, আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ও পলিসি উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন। বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে আগস্টেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ইসলামী ধারার শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে অবৈধভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দেন। এরপর ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে শুরু হয় তারল্য সংকট। এ পরিস্থিতিতে গভর্নর সবল ব্যাংক থেকে দুর্বল ব্যাংকের নগদ টাকা ঋণ নেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেন।

এটা সত্য, সরকার পতনের পর থেকে তারল্য সংকটের চূড়ায় পৌঁছে যায় এসব দুর্বল ব্যাংক। গ্রাহকরা পড়েন ভোগান্তিতে। এখনো ব্যাংকগুলো স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরতে পারেনি। এক সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাংকগুলোর একটি ছিল ইসলামী ব্যাংক। এস আলম গ্রম্নপের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর মন্দ ঋণ ও বাড়তে থাকা লেখাপি ঋণে জর্জরিত ব্যাংকটিও তারল্য সংকটসহ নানা অব্যবস্থাপনায় ডুবতে থাকে।

অনেক দিন থেকেই দেশের ব্যাংক খাতে অস্থিরতা চলছে। বাংলাদেশে ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ৯২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে বলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি জানিয়েছে। গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে ২৪টি বড় কেলেঙ্কারির মাধ্যমে এ অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে সংস্থাটি বলছে। আত্মসাৎ হওয়া অর্থের পরিমাণ চলতি অর্থবছর মানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ এবং দেশের মোট জিডিপির দুই শতাংশের সমান। গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে দেশের আর্থিক খাতের অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনার কারণেই এমনটি হয়েছে। দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সুরক্ষা দেওয়ার এ উদ্যোগ ইতিবাচক। আশা করছি, এবার দুর্বল ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কেটে যাবে এবং গ্রাহকরাও শঙ্কামুক্ত হবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে