জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। কাঙ্ক্ষিত ভালো রেজাল্ট করতে না পারলে জীবন কখনো বৃথা হয়ে যাবে না। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে, যারা ভালো রেজাল্ট কিংবা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয়নি কিন্তু তারপরও সফল ক্যারিয়ার গড়েছেন। জীবনের সফলতা বা ব্যর্থতাকে কোনো নির্দিষ্ট মানদন্ডে বিচার করা যায় না। সফল হওয়ার রাস্তা অনেক। অনেকে অনেকভাবেই জীবনে সাফল্য নামক সোনার হরিণটাকে খুঁজে পায়। কয়েক বছর ধরে একটা বিষয় লক্ষ করা যাচ্ছে যে, পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হলে, আত্মহত্যা করার প্রবণতা। পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার দিনই গণমাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। প্রতি বছর জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি ফলাফল ঘোষণার পর এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু রেজাল্টের হতাশায় এই আত্মহত্যা শেষ কোথায়! এবার ১১টি বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ পরীক্ষার্থী। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ২৮ হাজার ২৮১ জন। অন্যদিকে আলিম পরীক্ষায় অংশ নেয় মোট ৮৮ হাজার ৭৬ জন। চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এতে গড় পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা গতবারের চেয়ে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ কম। দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী। সেই হিসাবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে তাদের সবাই কি জিপিএ-৫ পাবে? অবশ্যই না। কিন্তু যারা পাবে না তারা কি মেধাবী শিক্ষার্থী না! তাহলে কেন একজন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ কিংবা কাঙ্ক্ষিত ফল না পেলে আত্মহত্যা করবে! আত্মহত্যার এই প্রবণতা কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। না হলে পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে দেশের পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাওয়াটা ক্রমেই বাড়তে থাকবে। শুধু পরীক্ষায় ফেল নয়, জিপিএ-৫ না পেলেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে কয়েক বছর ধরে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হয়তো এটা ভুলে গেছে যে জিপিএ-৫ ছাড়াও সমাজ ও রাষ্ট্রে খুব সহজেই প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়। শুধু কি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নয়, বর্তমান অভিভাবকরাও জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। কার সন্তান ফেল করেছে কিংবা জিপিএ-৫ পেয়েছে এগুলো নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে চলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। অভিভাবকদের এই প্রতিযোগিতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, ফলে আত্মহত্যার পথ খুঁজে নেয়। শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকদের জিপিএ-৫ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণও রয়েছে, কারণ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে জিপিএ-৫ কেউ মেধার মানদন্ড হিসেবে মূল্যায়ন করছে। অর্থাৎ পরীক্ষায় জিপিএ-৫ মানেই ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, চাকরি লাভে অনেকটা অগ্রগতি হিসেবে গণ্য হয়। তাই শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক জিপিএ-৫ অর্থাৎ ভালো রেজাল্টের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু যখনই একজন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায় না তখনই তার মনে বিভিন্ন চিন্তা মাথায় আসতে থাকে, সেটা হতে পারে পারিবারিক কিংবা সমাজিক। ফলে একসময় শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়? আপনার যদি সফল হওয়ার অদম্য ইচ্ছা থাকে এবং অধ্যবসায়ের সাথে আপনার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন, তাহলে সফলতার জন্য আপনাকে বিশেষ রেজাল্ট কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই। আপনি চাইলেই যেকোনো জায়গা থেকেই সফল হতে পারবেন। জীবন অমূল্য সম্পদ, যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না। তাই জীবননকে এভাবে নষ্ট করা উচিত না। এটাকে যথাযথ ব্যবহার করুন। তাহলেই আপনার জীবনের সার্থকতা। ধৈর্যশীল হতে হবে, কারণ আলস্নাহ ধৈর্যশীলকে পছন্দ করেন। তাই কোন পরীক্ষায় জিপিএ-৫ কিংবা ফেল করলে আপনার জীবন বৃথা, এমন চিন্তা করা যাবে না। আপনার জীবনের সফলত-ব্যর্থতা আপনার পরিশ্রম, চেষ্টা অধ্যবসায়ের ওপরই নির্ভর করে। আগে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন অতঃপর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান এবং অবিচল থাকুন একদিন সাফল্যের দরজায় উপনীত হবেন, ইনশাআলস্নাহ।
সাকিবুল হাছান
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা কলেজ, ঢাকা