বায়ুদূষণ
রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিন
প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
কোনোভাবেই দূষণমুক্ত হচ্ছে না রাজধানী ঢাকা- এমন খবর বারবার সামনে এসেছে। এছাড়া এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য উঠে এসেছে তা উদ্বেগজনক। ফলে, বায়ুদূষণ কমাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বায়ুদূষণে বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। এ সময় আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে ঢাকার স্কোর ছিল ১৯৫। মূলত বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে। ফলে, যখন জানা যাচ্ছে, বায়দূষণে বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়- তখন এটি আমলে নিতে হবে। এটাও উলেস্নখ্য, বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে বায়ুদূষণে প্রথম অবস্থানে ছিল ভারতের দিলিস্ন। এই শহরের স্কোর ছিল ২৮৩।
আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে বায়ুদূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে বলা দরকার, এর আগে জানা গিয়েছিল যে, শীত মৌসুম শুরুর আগেই সরকার ঢাকার বায়ুদূষণ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে উলেস্নখ করে পরিবেশ ও পানি উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, এক্ষেত্রে ঢাকার চারপাশের অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করাসহ বায়ুদূষণ রোধের ব্যবস্থা না করে নতুন ভবন নির্মাণের লাইসেন্স দেওয়া হবে না। খোলা ট্রাকে বালু বা ইট বহন করা যাবে না। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন জরুরি। এছাড়া, রাস্তায় গাড়ির যত্রতত্র হর্ন বন্ধ করাসহ যেসব কারণে বায়ুদূষণ হয় তা আমলে নিয়ে উদ্যোগী হতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন সময়ে দেশের বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যে পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। ফলে, বায়ুদূষণ কমাতে উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
স্মর্তব্য যে, এর আগে এমনটি জানা গিয়েছিল, বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ইটভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের এক গবেষণায় উঠে এসেছিল যে, সারাদেশে ইটভাটা আছে প্রায় ৮ হাজার। আর ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে রয়েছে সাড়ে ৭০০টির বেশি। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, ইটভাটাগুলো প্রতি মৌসুমে ২৫ লাখ টন কয়লা ও ২২ লাখ টন জ্বালানি কাঠ পোড়ায়। ইটভাটার দূষণে ৮৮ লাখ ৮৬ হাজার টন গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা প্রায় ৫৮ শতাংশ দায়ী বলেও তথ্য উঠে এসেছিল। অন্যদিকে, বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে নির্মাণকাজ, যানবাহন, সড়ক ও মাটি থেকে সৃষ্ট ধুলার কারণ, বিভিন্ন জিনিসপত্র, পস্নাস্টিক পোড়ানোসহ নানা কারণ উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, দূষণের কারণগুলো আমলে নিয়ে দূষণ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।
প্রসঙ্গত, আইকিউএয়ারের মানদন্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে মাঝারি বা গ্রহণযোগ্য মানের বায়ুদূষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। সংবেদনশীল গোষ্ঠীর মধ্যে আছেন বয়স্ক, শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি ও অন্তঃসত্ত্বা। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা অস্বাস্থ্যকর বাতাস। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে খুবই অস্বাস্থ্যকর বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে দুর্যোগপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, একদিকে জানা যাচ্ছে ঢাকার বায়ু বৃহস্পতিবার ছিল অস্বাস্থ্যকর। অন্যদিকে, এই বায়ু সেবন যে কোনো মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। ঢাকায় বৃহস্পতিবার বায়ুদূষণের যে অবস্থা, সেখান থেকে সুরক্ষায় বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে আইকিউএয়ার। এর মধ্যে আছে বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা, খোলা স্থানে ব্যায়াম না করা এবং জানালা বন্ধ করে রাখা। ফলে, এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। এছাড়া মনে রাখা দরকার, বায়ুদূষণে নানা ধরনের অসুখ-বিসুখসহ জনসাধারণের জীবনে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সঙ্গত কারণেই বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে বায়ুদূষণ কমাতে উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।