বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জের অন্যতম দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে অস্বাভাবিকভাবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কাঁচা শাকসবজি থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজের সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় মানুষের আয় বাড়ছে না। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। গত সপ্তাহের চেয়ে পরের সপ্তাহের নিত্যপণ্যের দামের বিস্তর পার্থক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। ১০০ টাকা নিচে শাকসবজি নেই বললেই চলে। ডিমের দাম হালিপ্রতি ৭ টাকারও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিম মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের পুষ্টির বড় অংশ। তাছাড়া মেসের শিক্ষার্থীদের ডিমের উপর বাড়তি নির্ভরতা কাজ করে। সরকার চার কোটির বেশি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়, প্রতিটি ডিম আমদানিতে সর্বসাকল্যে খরচ হয় সাত টাকার মতো। এটি দেখতে হবে, সেই ডিম আমদানিকারকরা কত দামে বিক্রি করছেন। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা কত দামে বিক্রি করছেন। সেই সাত টাকার ডিমও যদি ১৫ টাকায় বিক্রি হয়, তাহলে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রায় ডিম আমদানি করে লাভ কী?
চাল, ডাল, তেল সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম। বাজারে এই অস্থিতিশীল কারণ সাম্প্রতিক সময়ের বন্যা এবং দেশের পুরনো সিন্ডিকেট। অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি লাভের আশায় অনেক পণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যর দাম বাড়িয়ে দেয়। শাকসবজির ক্ষেত্রে ফোনের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ অন্য বাজারে মধ্যস্বত্ব্বভোগীদের দৌরাত্ম্য লক্ষণীয়। সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত দুই বছরে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ৫১ দশমিক ৫২ শতাংশ। জাহাজ ভাড়াসহ পরিবহণ খরচও কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজার ও ডলারের দাম সমন্বয় করলে দেশের বাজারে প্রতি লিটারে ৫১ টাকা কমার কথা। উৎপাদন ও মজুতের হিসাবে চালের মূল্য বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই।
ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের মধ্য দিয়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে, বজার নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হলো এখনো প্রতিটি ক্ষেত্রে আওয়ামী সিন্ডিকেট বসে আছে। আওয়ামী লীগ আমলের আমলা, আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট নানা ধরনের ব্যবসায়িক জোট ও সিন্ডিকেট, টিসিবি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ডিলারসহ আগের সরকারের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী বা পুরনো ব্যবস্থাই বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। মাঝখানে কয়েক দিন কিছুটা থমকে থাকলেও এখন আবার তারা তাদের পুরনো চেহারায় ফিরে আসতে শুরু করেছে। এরই প্রভাব পড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে। তা ছাড়া পণ্য পরিবহণ, বাজার, দোকানপাটে আগের মতোই চলছে চাঁদাবাজি। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, চাঁদাবাজি আগের মতোই আছে, চাঁদাবাজদের মুখ বদল হয়েছে মাত্র।
সরকারের অতিসত্বর কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজরে স্বস্তির ফিরিয়ে আনতে হবে।
শামীম আহমেদ
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ