বর্তমান যুগে চাকরি খোঁজার প্রতিযোগিতা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমান যুগে চাকরি পাওয়া কোনো সহজ বিষয় নয়। বর্তমান সময়ে, এই চাকরির পেছনে ছুটতে গিয়ে আমরা অনেক সময় নিজেদের স্বপ্নগুলোকে উপেক্ষা করি। কিন্তু কী হবে যদি আমরা এই চাকরি খোঁজার চক্র থেকে বেরিয়ে এসে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই? কেন চাকরির পেছনে ছুটতে হবে যখন উদ্যোক্তা হয়ে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব? বর্তমান যুগে যেমন প্রযুক্তি, তথ্য এবং সৃজনশীলতার উন্নতি ঘটছে, তেমন চাকরি খোঁজার প্রবণতা যেন একটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
উদ্যোক্তা হওয়া শুধু ব্যবসা করাই নয়, বরং এটি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন চিন্তাভাবনা, নতুন উদ্ভাবন এবং সমাজের জন্য নতুন কিছু উপহার দেওয়ার প্রক্রিয়া। আজকের তরুণ-তরুণীরা চাকরির নিরাপত্তার প্রতি অন্ধ আবেগের পরিবর্তে নিজেদের দক্ষতা ও আগ্রহের ভিত্তিতে নতুন ব্যবসায়িক ধারণার দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। চাকরি খোঁজার চাপ থেকে বেরিয়ে এসে উদ্যোক্তা হওয়া একটি সাহসী এবং ফলদায়ক পদক্ষেপ। যদি আপনার কাছে একটি অসাধারণ আইডিয়া থাকে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারেন, তবে সফলতা আপনার হাতের নাগালে।
উদ্যোক্তা হওয়া একটি চ্যালেঞ্জিং যাত্রা। উদ্যোক্তা হওয়া শুধু একটি ক্যারিয়ার গড়া নয়, বরং এটি একটি জীবনশৈলী। এই যাত্রায় অস্বস্তি ও অজানা অনেক কিছু থাকে, কিন্তু সঠিক মনোভাব এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। উদ্যোক্তা হতে চাইলে প্রস্তুতি, অধ্যবসায় এবং সৃজনশীলতা একত্র করে কাজ করতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার সাহস থাকলে, এই যাত্রা শেষ পর্যন্ত সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবেই। একজন উদ্যোক্তা হতে হলে প্রথমে একটি মৌলিক ধারণার প্রয়োজন। আপনার পণ্য বা সেবা কী হবে? বাজারে তার চাহিদা কতটুকু? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। এরপর একজন উদ্যোক্তার প্রথম কাজ হলো একটি ভালো ব্যবসায়িক ধারণা নিয়ে বাজারের চাহিদা বোঝা, প্রতিযোগিতা বিশ্লেষণ করা এবং একটি ইউনিক প্রস্তাবনা তৈরি করা। এরপর আসে একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা হলো উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক অর্থায়ন। যেখানে বিভিন্ন ব্যাংকঋণ, বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ, অথবা নিজ অর্থায়নের বিভিন্ন উপায়ে অর্থের ব্যবস্থা করতে হয়। উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। প্রতিদিন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবেই স্বাভাবিক। তবে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং ধৈর্যের সাথে কাজ করায় হলো সাফল্যের চাবিকাঠি। আবার অনেক নারী আছে যারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়, নিজে কিছু করতে চায় তাদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ হলো উদ্যোক্তা হওয়া। অনেকেই আছে যারা ঘরে অযথাই বসে থাকে, তারা চাইলেই একটি সুন্দর পরিকল্পনা নিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে।
অনলাইনের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়া বর্তমানে একটি জনপ্রিয় প্রবণতা। এখন অনলাইনের মাধ্যমেও অনেকেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠছে এমনকি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় করে লাভবান হচ্ছে। শুধু যে উদ্যোক্তা হলেই হবে না বরং একজন উদ্যোক্তার সাথে সাথে তার গ্রাহকদের সাথেও তার সম্পর্ক সুন্দর হওয়া উচিত। ভালো গ্রাহক সেবা কেবল ব্যবসার সাফল্যই নয়, বরং ব্র্যান্ডের চিত্রও উন্নত করে। গ্রাহকরা যখন সন্তুষ্ট হন, তারা পুনরায় আপনার পণ্য কিনতে আগ্রহী হয় এমনকি মৌখিকভাবে আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেন। যা নতুন গ্রাহক আকর্ষণে সাহায্য করে। আবার গ্রাহকদের মতামত থেকেও জানা যায়, কোথায় উন্নতি করতে হবে কিংবা কীভাবে আপনার পণ্য বা সেবা আরও ভালো করা যায়। কিন্তু অনেক উদ্যোক্তাই আছে, যারা গ্রাহকদের সাথে ভালো আচরণ করেন না। বরং তাদের পণ্য লেনদেনের সময় প্রতারণা করে, মিথ্যা প্রতিশ্রম্নতি এবং খারাপ সেবা প্রদান কওে, যার ফলে গ্রাহকদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। এই ধরনের আচরণ দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসার ক্ষতি করতে পারে। তাই গ্রাহকদের প্রতি সদয় আচরণ এবং সময়মতো সেবা প্রদান করতে হবে। তাহলে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হবে। আবার এমন কিছু গ্রাহকও আছে যারা পণ্যের গুণগণ মান নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমনকি একাধিক অর্ডার দিয়ে পরে একটি অর্ডার বাতিলও করে যাতে সেবা বা পণ্য ফ্রিতে পেতে পারে। এমন কিছু প্রতারণার কারণে কর্মীদের মনোবল কমে যেতে পারে, যা সেবার মান কমিয়ে দেয়। গ্রাহকের প্রতারণা একটি জটিল সমস্যা, তবে সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এই বর্তমান যুগে উদ্যোক্তা হওয়া শুধু আপনার জীবনকেই পরিবর্তন করে না, বরং সমাজেও নিয়ে আসে নতুন পরিবর্তন। এমনকি উদ্যোক্তা হওয়ার ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও উন্নতি হবে। উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই সময় এসেছে নতুন উদ্যোগ গ্রহণে আপনার স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাওয়ার।
সৈয়দা ফারিদা আখতার
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী