নিরাপদ সড়ক চাই
প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
মো. মমিনুল ইসলাম
চলছে আধুনিক বিজ্ঞানের যুগ। আধুনিক বিজ্ঞানের ছোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। মানুষের যাতায়াত সুবিধার জন্য আবিষ্কৃত হয়েছে হরেক রকমের আধুনিক যানবাহন। যার ফলে মানুষ অল্প সময়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করছে। যানবাহনের সুবিধা থাকলেও এর দ্বারা মৃতঘাতী ঘটনাও ঘটে। একটু লক্ষ করলে দেখতে পারি, প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে সড়ক দুর্ঘটনা, ঝরে পড়ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। অনেকেই আবার বেঁচে ফিরছে আজীবন পঙ্গুত্ব নিয়ে, কষ্টে ভুগতে হচ্ছে সারাজীবন। তাইতো বলা হয় 'একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না'। পত্রিকার পাতা খুললে এবং টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখলেই ভেসে ওঠে সড়ক দুর্ঘটনার মর্মান্তিক ঘটনা। ২০১৮ সালে সড়ক আইন সংশোধনের পর মানুষের প্রত্যাশা ছিল সড়কে চলাচল জনসাধারণের জন্য আরও নিরাপদ হবে কিন্তু এখন তার সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুসারে ২০২৩ সালে দেশে মোট সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ হাজার ৯১১টি। নিহত হয়েছে ৬ হাজার ৫২৪ জন এবং আহত হয়েছে ১১ হাজার ৪০৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৯৭৪ জন এবং শিশু ১ হাজার ১২৮ জন। এর মধ্যে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৫৩২টি।
অন্যদিকে ২০২২ সালের অবস্থা আরও ভয়াবহ। ২০২২ সালে ২৯৭৩টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৩০৯১ জন, যা মোট নিহতের ৪০.০৭ শতাংশ।
উপরের পরিসংখ্যানের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, মোট নিহতের ৪০ শতাংশই মৃতু্যবরণ করে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার কারণে। নিহতদের মধ্যে তরুণ ও যুবকদের সংখ্যা বেশি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশেরই বয়স ২১-এর নিচে। যুবকরা আবেগের বশবর্তী হয়ে বেপরোয়া গতিতে মোটর সাইকেল চালায়, বিশেষত ঈদের দিন এবং বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে অপ্রাপ্ত বয়েসের ছেলেরা শখ করে মোটর সাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তাই অভিভাকদের সন্তানদের গাড়ি দেওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
এসব দুর্ঘটনার মূলে রয়েছে চালকের অদক্ষতা, ঘুম ঘুম চোখে গাড়ি চালানো এবং গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলা, চালকের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা, নেশাযুক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো ইণ্যাদি। এছাড়াও তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া গতিতে মোটর সাইকেল চালানো, ত্রম্নটিযুক্ত যান চলাচল, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার, চলাচল অবস্থায় মোবাইল ফোনের ব্যবহার, রাস্তায় গতিসীমা নির্দেশক ও স্পিড ব্রেকার না থাকা এবং প্রয়োজন পরিমাণ ওভার ব্রিজ না থাকা, লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা, জনসাধারণের ট্রাফিক আইন জানা না থাকা, জানা থাকলেও আইন না মানার প্রবণতা। বিশেষ করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম ও দুর্বলতা, ফুটপাত হকারদের দখলে থাকা, পরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
এসব দুর্ঘটনার ফলে দেশের স্বাস্থ্য খাতে অস্বাভাবিকভাবে ব্যয় বেড়েছে। কেউ কেউ বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চিকিৎসার অর্থ জোগান দিতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যে পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃতু্যবরণ করে সে পরিবারে নেমে আসে অর্থনৈতিক ঘোর অমানিশা, হয়ে পড়ে অসহায়।
সড়ক দুর্ঘটনার এই ভয়াভহতা প্রতিরোধ করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত, নিরাপদ সড়কের সুব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তায় বাঁক কমাতে হবে, কারণ অধিকাংশ দুর্ঘটনা রাস্তার বাঁকে ঘটে থাকে। রাস্তার প্রতিটি মোড়ে বড় আকারের উত্তল দর্পণ স্থাপন করতে হবে যাতে করে চালকরা মোড়ের বিপরীত পাশের গাড়িগুলো আগে থেকেই দেখতে পারে এবং সতর্ক হতে পারে। নিয়মিত গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করতে হবে। লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলতে হবে। প্রয়োজন পরিমাণ ওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে, রাস্তায় ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে, ওভারটেকিংয়ের ব্যাপারে চালকদের সতর্ক হতে হবে, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি ও চালককে অপসারণ করতে হবে, বিশেষ করে জনসাধারণকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত করতে হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিটি জীবনের মূল্য অপরিসীম, তাই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে জীবন রক্ষা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। সর্বোপরি সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। আশা করি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা নিরাপদ সড়কের সুব্যবস্থা করে এবং আইনের সঠিক ব্যবহার করে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মো. মমিনুল ইসলাম
শিক্ষার্থী
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া