সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

মাহবুবুল ইসলাম
সড়ক দুর্ঘটনা একটি গেস্নাবাল সমস্যা- যা প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তোলে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় গ্রামীণ জনপদ থেকে শুরু করে মহাসড়কের জনবহুল সড়কেও দুর্ঘটনার হার ক্রমশ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর হার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে- যা আমাদের রাষ্ট্রের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। সরকারের বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে- যার মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তিরা ১৮-৩৫ বছরের মধ্যে রয়েছে। সাম্প্র্রতিক সময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী আইরিন ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জীবন কতটা তুচ্ছ। দু'টি বাসের প্রতিযোগিতামূলক দৌরাত্ম্যের কারণে সড়কে অকালেই একটি স্বপ্নবাজ মানুষের মৃতু্য হয়। অবশ্য এগুলোকে হত্যার সঙ্গেই তুলনা করা যায়- যার যথেষ্ট কারণও আছে। তবে সড়কে প্রাণহানির মতো উদ্বেগজনক বিষয়ের অনেক কারণ আছে তন্মধ্যে উলেস্নখযোগ্য কয়েকটি কারণের প্রথমটি হচ্ছে অপর্যাপ্ত সড়ক অবকাঠামো; সড়কগুলোর অবকাঠামো উন্নত না হওয়া, সঠিক সিগন্যাল ব্যবস্থা না থাকা, ওভারক্রাউডিং ইত্যাদি। দ্বিতীয়টি বলতে গেলে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কথা বলা যায়। মহাসড়কের দূরপালস্নার বাসগুলোর অবস্থা একদম নাজেহাল একপলক তাকালে অনুমান করা যাবে এসব যানবাহনের বেশিরভাগের ফিটনেস নেই। তৃতীয় কারণটি সবচেয়ে উলেস্নখযোগ্য এবং চরম উদ্বেগের বিষয়। আর সেটি হচ্ছে চালকদের অসতর্কতা। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো, গাড়ির স্পিড সীমা অতিক্রম করা, মদ্যপান করে গাড়ি চালানো ইত্যাদি যেন আজকালকের চালকের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। মাঝে-মধ্যে চালকের বদলে অদক্ষ হেল্পারকেও চালকের আসনে বসতে দেখা যায়। চতুর্থ কারণটির কথা বলতে গেলে জনসাধারণের অসাবধানতা ও অজ্ঞতার কথা বলতেই হবে। কেননা, বাংলাদেশের সিংহভাগ সাধারণ মানুষের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। এসব কারণগুলো ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি কারণ এক্ষেত্রে প্রভাবকের কাজ করে থাকে- যার ফলে, প্রতিনিয়ত সড়কে প্রাণনাশের সংবাদ পত্রপত্রিকা থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে সব সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। সম্প্র্রতি করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর হার প্রতি ১,০০,০০০ জনে ১৫ জন। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর হার উন্নত দেশের তুলনায় অনেক বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্য চালকদের অসতর্কতা, অদক্ষতা এবং সড়কের খারাপ অবস্থাই দায়ী। তবে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সতর্কতা ও সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। এক্ষেত্রে পুলিশিং তৎপরতা বৃদ্ধি করে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সড়ক নিরাপত্তা ক্যাম্পেইনের আয়োজন করতে হবে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশিক্ষণ ও ক্যাম্পেইন চালানোর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সামাজিক মাধ্যম ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮ এই আইনে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর নিয়মাবলি প্রণয়ন করা হয়েছে। নতুন সড়ক নির্মাণ করতে হবে। শহরাঞ্চলে নতুন সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি পুরনো সড়কের সংস্কার করা হচ্ছে। লাইসেন্স ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে। লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন প্রতিকারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। সড়ক নিরাপত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দ্রম্নত মেডিকেল সহায়তা নিশ্চিত করা। দুর্ঘটনার পর দ্রম্নত মেডিকেল সহায়তা নিশ্চিত করা। জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সড়ক দুর্ঘটনা একটি গুরুতর সমস্যা- যা আমাদের সমাজকে বিপন্ন করছে। শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী আইরিনের ঘটনা আমাদের সতর্ক করে দিয়েছে যে, আমাদের আরও সচেতন হতে হবে এবং সামাজিকভাবে দায়িত্বশীলতা গ্রহণ করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি সড়ক নিরাপত্তার জন্য সাধারণ মানুষেরও সচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকেই একযোগে কাজ করতে হবে। এভাবে, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যদি আমরা যৌথভাবে কাজ করি, তাহলে আমরা আমাদের সমাজকে নিরাপদ রাখতে পারব এবং অমূল্য জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হব। মাহবুবুল ইসলাম :কলম লেখক