বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যে ৪ কোটি মানুষ কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের জনসংখ্যার উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক মানুষ যদি চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করেন তবে তা উদ্বেগের। কেননা, চরম দারিদ্র্যের কষাঘাতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। জীবন যাপনের স্বাভাবিকতা বিঘ্নিত হয়। ফলে এমন পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। আর তাদের মধ্যে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের অবস্থা গুরুতর। মূলত জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। আমরা বলতে চাই, একদিকে দেশের ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন, অন্যদিকে এর মধ্যে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের অবস্থা গুরুতর; যা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যেগাী হওয়া। তথ্য মতে, 'বৈশ্বিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক-২০২৪ : সংঘাতের মধ্যে দারিদ্র্য' শিরোনামের বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। জানা যাচ্ছে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্র অক্সফোর্ড পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে যৌথভাবে এটা প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য পরিস্থিতি বুঝতে বিশ্বের ১১২টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের ওপর গবেষণা করা হয়েছে। তাতে ২০২২-২৩ বছর পর্যন্ত এক দশকের বেশি সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এখানে মানুষের পর্যাপ্ত আবাসন, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদু্যৎ, ভোজ্যতেল ও পুষ্টির মতো অতি প্রয়োজনীয় সেবাসমূহ পাওয়ার ক্ষেত্রে কেমন ঘাটতি রয়েছে, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশুরা কী হারে স্কুলে উপস্থিত হচ্ছে, তা-ও এখানে বিবেচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, প্রতিবেদনে উঠে আসা সার্বিক বিষয় আমলে নেওয়ার পাশাপাশি এটাও লক্ষণীয়, মানুষের পর্যাপ্ত আবাসন, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদু্যৎ, ভোজ্যতেল ও পুষ্টিরমতো অতি প্রয়োজনীয় সেবাসমূহ পাওয়ার ক্ষেত্রে কেমন ঘাটতি রয়েছে, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে শিশুরা কী হারে স্কুলে উপস্থিত হচ্ছে, তা-ও এখানে বিবেচনায় এসেছে। ফলে এই দিকগুলো সম্পর্কে দেশের সংশ্লিষ্টদের মনোযোগী হতে হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উলেস্নখ্য, সূচক অনুযায়ী বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। তাদের প্রায় অর্ধেকই সংঘাতকবলিত দেশের বাসিন্দা। জানা যায়, চরম দারিদ্র্যে থাকা জনগোষ্ঠীর ৮৩ শতাংশের বেশি বসবাস করেন আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। দক্ষিণ এশিয়ায় ২৭ কোটি ২০ লাখ দরিদ্র মানুষ এমন পরিবারে আছেন, যে পরিবারের অন্তত একজন অপুষ্টিতে ভুগছেন। আমরা বলতে চাই, যখন এটাও জানা যাচ্ছে যে, বৈশ্বিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক-২০২৪ অনুযায়ী, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে মানুষের জীবনযাত্রার মান (৪৫ দশমিক ১ শতাংশ)। এরপর রয়েছে শিক্ষা (৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ) ও স্বাস্থ্য (১৭ দশমিক ৩ শতাংশ)। তখন এই বিষয়গুলো কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না। এছাড়া লক্ষণীয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর ২০২২ সালের সর্বশেষ তথ্যমতে, বাংলাদেশের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে, দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা আছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার। সে হিসাবে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ইউএনডিপি প্রকাশিত সূচকে দেখা গেছে, দারিদ্র্যের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী শিশুরা। এছাড়া চরম দারিদ্র্যে থাকা মানুষের মধ্যে প্রায় ৫৮ কোটি ৪০ লাখের বয়স ১৮ বছরের কম। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। সামিগ্রকভাবে প্রতিবেদনে উঠে আসা বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশে ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন, আর তাদের মধ্যে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের অবস্থা গুরুতর- এটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।