সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
প্রতিনিয়তই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই দুর্ঘটনার এমন চিত্র পরিলক্ষিত হয় যে, যেন সড়ক হয়ে উঠেছে মৃতু্যফাঁদ! একদিকে, একের পর এক ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ, অন্যদিকে, বাড়ছে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে গত সাড়ে ৫ বছরে ৩২ হাজারের বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। আর এসব দুর্ঘটনায় প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে হিসাব দিয়েছে রোড সেইফটি ফাউন্ডেশন। তথ্য মতে, বুধবার এক প্রতিবেদনে এ সংগঠন বলেছে, এসব মৃতু্যর অধিকাংশই ঘটেছে বাইক দুর্ঘটনায়।
আমরা বলতে চাই, যখন জানা যাচ্ছে, গত সাড়ে ৫ বছরে ৩২ হাজারের বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। আর এসব দুর্ঘটনায় প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে- তখন সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প থাকতে পারে না। উলেস্নখ্য, ২০১৯ সাল থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সারাদেশের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করেছে রোড সেইফটি ফাউন্ডেশন। তথ্য নেওয়া হয়েছে ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর থেকে। পাশাপাশি নিজস্বভাবে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলেও জানা যায়। এছাড়া দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির হিসাব নিয়ে ফাউন্ডেশন বলেছে, যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে, সে জন্য এই হিসাবের সঙ্গে আরও ৩০ শতাংশ অর্থ যোগ করতে হবে। দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ যানবাহনের ক্ষতি হয়েছে, তার তথ্য না পাওয়ায় সম্পদের আর্থিক পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি বলে সংগঠনটির ভাষ্য।
বলা দরকার, গত সাড়ে ৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে, রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে তার আর্থিক মূল্য ৮৭ হাজার ৮৮৪ কোটি ১২ লাখ ৪১ হাজার টাকার মতো। ফাউন্ডেশনটি বলছে, এ সময় ৩২ হাজার ৭৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ হাজার ৩৮৪ জন নিহত হন, আহত হন ৫৩ হাজার ১৯৬ জন। আর সবচেয়ে বেশি ১১ হাজার ৬৬৯টি দুর্ঘটনার সঙ্গে মোটর সাইকেল জড়িত- যা মোট দুর্ঘটনার ৩৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১১ হাজার ৫৯৩ জন। এসব দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৩৫৮ জন পথচারী নিহত হয়েছেন- যা ২৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। বাসের চালক ও কর্মী মারা গেছেন ৫ হাজার ২৬১ জন অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। প্রতিবেদনে এটাও উঠে আসে, ১১ হাজার ৯৪২টি দুর্ঘটনা, অর্থাৎ ৩৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে জাতীয় মহাসড়কে, ১১ হাজার ৬৯৮টি আঞ্চলিক সড়কে, ৫ হাজার ৬৩টি গ্রামীণ সড়কে, ৩ হাজার ৯৭৪টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৫৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি ১২ হাজার ১৬৭টি দুর্ঘটনা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, যা ৩৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। এছাড়া ৬ হাজার ৮৪৩টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৮ হাজার ৬৩১টি পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়া, ৪ হাজার ৩৩৬টি দুর্ঘটনা যানবাহনের পেছনে আঘাত করায় ঘটেছে।
আমরা মনে করি, একদিকে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র আমলে নিতে হবে; অন্যদিকে, একের পর এক দুর্ঘটনা কেন ঘটছে, কেন সড়ক নিরাপদ হচ্ছে না, তা বিবেচনায় নিয়ে রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কেননা, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি অর্থবহ হবে না, যদি না নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে উদ্যোগী হতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উঠে আসা সার্বিক বিষয় আমলে নেওয়া জরুরি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও বিকল্প নেই। একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে, ঘাতক চাকার নিচে পিষ্ট হচ্ছে মানুষ। ফলে, সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এবং যে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা বিবেচনায় রেখে করণীয় নির্ধারণ ও যথার্থ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। একইসঙ্গে সড়ককে নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।