বাংলাদেশে উন্নয়নের পথে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এখনো রয়ে গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং আর্থিক খাতের নাজুকতার পাশাপাশি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে এখনো বড় বাধা মনে করে বিশ্বব্যাংক। এসব চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশে অর্থনীতির গতি ধীর করে দিতে পারে- যা ডেকে আনতে পারে মন্দা। এজন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো এক বছর চাপে থাকবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কমে ৪ শতাংশ হবে। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সেটি বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে।
বিশ্বব্যাংকের এই মূল্যায়নের সঙ্গে একমত জানিয়েছেন দেশের বিশেষজ্ঞরাও। তাদের মতে, বিশ্বব্যাংক যে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করেছে; তাতে দ্বিমতের কোনো কারণ নেই। বিশ্বব্যাংকের চিহ্নিত দুর্বলতার বাইরেও আরো কিছু দুর্বলতা রয়েছে। প্রবৃদ্ধি সামনের দিকে এগিয়ে নিতে যে রোডম্যাপ দরকার- সেটা দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করেন তারা।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, গত দু'বছর ধরে আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি গড়ে ১০ শতাংশের কাছাকাছি অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক স্তরে নামিয়ে আনতে সম্ভব তো হয়ই, বরং আরো বেড়েছে। তা ছাড়া বিশ্বব্যাংক অর্থনীতির যে চাপের কথা বলছে এর বাইরেও কিছু চাপ রয়েছে। আমাদের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ- দুই খাতেই স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে। দেশে বিনিয়োগ না বাড়লে প্রবৃদ্ধি হবে না। সুতরাং, প্রবৃদ্ধি বাড়াতে কীভাবে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা যায়- এটা একটি অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। যেসব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, তাও ঠিক মতো অনুসরণ করা হচ্ছে না। ফলে, বিনিয়োগকারীদের কাছে সঠিক বার্তা যাচ্ছে না।
এটা সত্য বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এ মুহূর্তে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বহিস্থ খাতের চাপ, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এসব কারণে প্রবৃদ্ধি খুব বেশি বাড়বে না। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কেননা, এখনো ৮৪ দশমিক ৯ শতাংশ কর্মসংস্থান অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। এটি অত্যন্ত উচ্চ সংখ্যা। ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে কর্মসংস্থান কমেছে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ হারে। আর্থিক খাত নিয়ে বলতে গিয়ে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে নানা ধরনের সংকট রয়েছে বিশেষ করে খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। সরকারের অনেক প্রচেষ্টার পরও সেটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এছাড়া মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদেও হার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ গ্রহণ কমেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেনি। অথচ প্রতি বছর উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে শিক্ষিত ও শহুরে বেকার বেড়ে যাওয়া একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
আমরা মনে করি, বর্তমান সরকারকে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তা না হলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে।