শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

খাদ্য উৎপাদনে রোল মডেল বাংলাদেশ অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে হবে

  ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
খাদ্য উৎপাদনে রোল মডেল বাংলাদেশ অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে হবে

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব কতটা উদ্বেগের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লক্ষণীয় যে, সম্প্রতি বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিকে ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানছে; অন্যদিকে, বৃষ্টিনির্ভর আমন মৌসুমে বৃষ্টির দেখা মেলে না। সেচ দিয়ে আমন চাষ করতে হয়। আরও উৎকণ্ঠার বিষয় হলো- নদীভাঙনে ও উন্নয়ন কাজে প্রতিদিনই কৃষি জমি কমছে। দিনের পর দিন বৈরী হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। যার ফলে, এর প্রভাব পড়ছে খাদ্যশস্য উৎপাদনে। আর এমন পরিস্থিতিতে জানা যাচ্ছে, কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী আবহাওয়ায় খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। বিশেষ করে ধান, গম, আলু, ভুট্টা, সবজি ও মাছে বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। যার ফলে, বৈশ্বিক বৈরী প্রকৃতিতে খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বে উদাহরণ বাংলাদেশ।

আমরা মনে করি, যখন ধান, গম, আলু, ভুট্টা, সবজি ও মাছে বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ- তখন এটি ইতিবাচক এবং আশাব্যঞ্জক। কেননা, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই, বরং তা মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। ফলে যখন খাদ্য উৎপাদনে রোল মডেল বাংলাদেশ- এমনটি জানা যাচ্ছে, তখন এটি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি উৎপাদনকে এগিয়ে নিতে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার ঠিক পরে ১৯৭২ সালে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ১০ লাখ টন। সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য ওই খাদ্য পর্যাপ্ত ছিল না। এর পরের ৫৪ বছর এখানে মানুষ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি, জলবায়ুর কারণে প্রতিদিন আবাদি জমি কমেছে ২০-৩০ শতাংশ। তবু দেশে এখন খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে চার গুণের বেশি; ভুট্টাসহ এর পরিমাণ সাড়ে ছয় কোটি টন। এছাড়া দেশের খোরপোশ কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে উন্নীত হয়েছে। জিডিপিতে এখন কৃষির অবদান ৪ শতাংশ। কৃষিতে দেশের ৪০ শতাংশ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। অন্যদিকে, বছরে ২২ লাখ মানুষ যুক্ত হচ্ছে তাদের খাওয়াতে অতিরিক্ত পাঁচ লাখ টন চালের প্রয়োজন হয়। এটাও উলেস্নখ্য যে, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ছয় কোটি ৪৩ লাখ টন দানাদার খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে। আউশ, আমন ও বোরোতে উৎপাদন হয়েছে পাঁচ কোটি ৮৬ লাখ টন শুধু ধান। ভুট্টা ৪৭ লাখ টন। গম ১১ লাখ টন উৎপাদিত হয়েছে। গত ১০ বছর আগেও উৎপাদন ছিল সাড়ে চার কোটি টন। ফলে, এটা যখন জানা যাচ্ছে যে, খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ আজ খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ- তখন তা আশাব্যঞ্জক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে।

আমরা বলতে চাই, যখন খাদ্য উৎপাদনে রোল মডেল বাংলাদেশ- এমনটি জানা যাচ্ছে, তখন এই আলোচনাও সামনে আসছে যে, দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদনের পরও একটি সিন্ডিকেট দেশে খাদ্যশস্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। তথ্য মতে, বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও এখনো আমদানি নির্ভরতা কমেনি। ফলে, আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আমলে নিতে হবে। কেননা, পর্যাপ্ত উৎপাদনের পরও সিন্ডিকেটের কারণে দেশে খাদ্যশস্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি হবে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, এই বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্টদের কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যানুযায়ী, খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। বিশ্বে কৃষিতে ১১ খাতে এগিয়ে বাংলাদেশ। এছাড়া, বিশ্বে দ্রম্নত খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে- এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবার উপরে। বিশেষ করে, খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে উদাহরণ দেখছে বিশ্ব। সঙ্গত কারণেই এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। খাদ্য উৎপাদনে দেশকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে