নিত্যপণ্যের বাজারে অস্বস্তি বাড়ছেই। দফায় দফায় দাম বেড়ে বা অনেক দিন ধরেই চড়া দাম বজায় থেকে সাধারণ মানুষের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতাকে কমিয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি যেন 'মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে এসেছে। বৃষ্টির অজুহাতে সবজির দাম আরও বাড়ানো হয়েছে। বাজারে বেশিরভাগ সবজি কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। কোনো সবজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচের বাজারে যেন আগুন লেগেছে, বাজারভেদে ৪৪০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। হুট করে এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ বলতে পারছেন না খুচরা ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। অপরদিকে, পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টিতে কাঁচামরিচের ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাজারে সরবরাহ কম। কাঁচামরিচের ঘাটতি রয়েছে। সবকিছু মিলেই কাঁচামরিচের দাম বেড়ে গেছে। অপরদিকে, শুল্ক কমলেও উল্টো বেড়েছে চিনির দাম। কোনো কারণ ছাড়াই বেড়েছে সব ধরনের চালের দামও। বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে বাকি সব নিত্যপণ্য। বিশেজ্ঞরা জানান, এই সময়ে সবজির দাম কিছুটা বাড়তি থাকে। এছাড়া বন্যায় ফসলের ক্ষতি হওয়ায় দাম বেড়েছে। তবে বাজারের এমন লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ার মূল কারণ হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। চাল, শাকসবজি, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করায় তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। বাজার বিশ্লেষকরা পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় সময়মতো পদক্ষেপ নিতে না পারার সমালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, সিন্ডিকেটগুলো পরিস্থিতির সুবিধা নিয়ে ভোক্তাদের ওপর আরও বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। চাল, শাকসবজি, ডিম এবং ব্রয়লার মুরগির দাম গত এক মাসে অস্বাভাবিক বেড়েছে। অন্যান্য পণ্যের দামও ক্রমাগতভাবে বাড়ছে লাগামহীনভাবে। বাজার পরিস্থিতি এমন যে, দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি বলেছেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার পণ্য বাজারে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আগের সরকারের আমলারাই রয়ে গেছে এবং ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের সঙ্গে তাদের যোগসাজশ আছে। তাই নিত্যপণ্যের দাম কমছে না।
এটা সত্য, ৫ আগস্টের পর পণ্যের দাম কমেছিল। কয়েকদিন পর সিন্ডিকেট দেখলো তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এই ফাঁকে তারা আবার দাম বাড়িয়ে দিল। আবার অনেক পণ্য আমদানি করা হচ্ছে তারপরও দাম কমছে না সিন্ডিকেটের কারণে। অবাক ব্যাপার হচ্ছে, বেশ ক'দিন ধরে ডিমের হালি ৬০ টাকা। ডিমের বাজার তদারকির উদ্যোগ নিতেই সিন্ডিকেট ডিম সরবরাহ বন্ধ করেছে। এর সরল অর্থ হচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সিন্ডিকেট। মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠিয়ে সারাদেশে দাম ঠিক করে দেয় সিন্ডিকেট। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার ও সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের জন্য সরকার সম্প্রতি জেলা পর্যায়ে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এর আগেও সরকার চিনি, আলু এবং পিঁয়াজের আমদানি শুল্ক হ্রাস করলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। আমরা মনে করি, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে না পারলে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।