এইচএসসি-সমমান পরীক্ষার ফল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে প্রকাশিত হয়েছে। এবারে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষা ২০২৪-এ জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ শিক্ষার্থী। তথ্য মতে, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোট ৮০ হাজার ৯৩৩ জন মেয়ে ও ৬৪ হাজার ৯৭৮ জন ছেলে। সে হিসাবে ছেলেদের চেয়ে ১৫ হাজার ৯৫৫ জন বেশি মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯২ হাজার ৫৯৫ জন শিক্ষার্থী। সে তুলনায় এবার জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে ৫৩ হাজার ৩১৬ জন। এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮। গতবার এই হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪। এ বছর পাসের হার কমেছে দশমিক ৮৬ শতাংশ। এছাড়া এবারের পরীক্ষায় ছেলেদের চেয়ে চার দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি মেয়ে পাস করেছে।
এবার সবচেয়ে বেশি পাসের হার সিলেট বোর্ডে, ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এছাড়া সবচেয়ে কম পাসের হার ময়মনসিংহ বোর্ডে ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক ০৯ শতাংশ। এটাও লক্ষণীয় যে, এবারের পরীক্ষায় শতভাগ পাস করেছে এক হাজার ৩৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং ৬৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো পরীক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। আমরা উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জানাই অভিনন্দন। একইসঙ্গে বলতে চাই, ৬৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো পরীক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি এটি আমলে নিতে হবে। এরকম ফলের কারণ শনাক্ত করে উদ্যোগী হতে হবে। অন্যদিকে, বলা দরকার, করোনা মহামারির পর প্রথমবারের মতো পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছিল ২০২৩ সালে। করোনাভাইরাসের বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন খাতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে- যার মধ্যে শিক্ষা খাতও ছিল অন্যতম। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার অগ্রগতির বিষয়টিও ছিল চ্যালেঞ্জের বিষয়। এখন যখন ফলাফল প্রকাশিত হলো- এটি আমলে নিয়ে শিক্ষার সার্বিক অগ্রগতি নিশ্চিতে উদ্যোগী হতে হবে।
বলা দরকার, এবার ২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিল। এ ছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষাও বাকি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাকি পরীক্ষা পিছিয়ে ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন সরকার। ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর পরীক্ষা এক মাস পিছিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন সময়সূচিতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যদিও বাকি পরীক্ষা আর নেওয়া সম্ভব হয়নি। গত ২০ আগস্ট সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে কিছু পরীক্ষার্থী বিক্ষোভ ও ঘেরাও করলে এবারের এইচএসসি বা সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয় শিক্ষা বিভাগ। ফলে, যেসব বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর পূর্ণ নম্বরের ভিত্তিতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে মাঝপথে বাতিল করা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল তৈরি হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এবার যে ফলাফল প্রকাশিত হলো তা আমলে নিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্তব্য হওয়া দরকার, আগামী দিনে নিজেদের আরো বেশি শাণিত করে জীবনপথে অগ্রসর হওয়া। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সঠিক পথনির্দেশনার পাশাপাশি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার অগ্রগতি বজায় রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটিও কাম্য। শিক্ষা বিস্তৃত হচ্ছে, শিক্ষার অগ্রগতিতে নানা ধরনের উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে- যা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি শিক্ষার মান উন্নয়নেও জোর দিতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে যে কোনো সংকট সৃষ্টি হলে তা দ্রম্নত সমাধানের উদ্যোগী হতে হবে। এবারের প্রকাশিত ফলাফলকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আগামী দিনে আরও এগিয়ে যাবে এবং সুশিক্ষা অর্জনের মধ্য দিয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।