জাতিসংঘ একটি বিশ্ব প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর ৫১টি রাষ্ট্র জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষর করার মাধ্যমে জাতিসংঘ নামক একটি বিশ্ব প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে। বিশ্বের যে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য হতে পারে। ২০১৬ সালের তথ্যানুযায়ী, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক স্বীকৃত রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৫টি হলেও, এর সদস্য সংখ্যা ১৯৩। বাকি ভ্যাটিকান সিটি ও ফিলিস্তিন, এই দুটি দেশকে পর্যবেক্ষক দেশের তালিকায় রেখেছে জাতিসংঘ। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে বিজয়ী মিত্রশক্তি পরবর্তীকালে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হয়। জাতিসংঘ গঠনের সাতটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো হলো বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা; বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন করা; অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলা; জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান গড়ে তোলা; বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিদ্যমান বিবাদ মীমাংসা করা; প্রতিটি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের স্বীকৃতি ও সেটা সমুন্নত রাখা; এসব উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের কার্যধারা অনুসরণ করা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জাতিসংঘ তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে কতটা সফল? ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ এখনো এক রক্তাক্ত কালো অধ্যায় হিসেবে ধাবমান রয়েছে। এ যুদ্ধের অবসান কবে হবে, কে করবে এবং কীভাবে করবে তা নিয়ে সন্দিহান সমগ্র বিশ্ববাসী। বলা যায়, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশ্ব। বর্তমান এই বিশ্ব সংকটে জাতিসংঘের পদক্ষেপ কি শুধু বিবৃতি দেওয়া পর্যন্তই? চলমান ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত ১৯ শতকের শেষের দিকে এবং ২০ শতকের প্রথম দিকে শুরু হয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন 'হামাস' হামলা পরিচালনা করার পর দেশটির গাজা উপত্যকায় প্রতিশোধমূলক ও সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরাইল। বার্তা সংস্থা এপি, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইসরাইলি কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও ত্রাণ সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা গত অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই যুদ্ধে হতাহত মানুষ ও অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা তৈরি করেছে। এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গাজার ৪৫ থেকে ৫৬ শতাংশ দালান ধ্বংস অথবা অন্য কোনো বড় আকারের ক্ষতির শিকার হয়েছে। ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৫টি আংশিকভাবে কার্যকর রয়েছে। বাকি ২১টির কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। ক্ষুধা ও অনাহারে ভুগছেন ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনি। ৬৯ শতাংশেরও বেশি স্কুল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪২টি মসজিদ ও ৩টি গির্জা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২১টি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে ৬ লাখ ২৫ হাজার শিক্ষার্থী। ১৮ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচু্যত হয়েছেন। ইসরায়েলের উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্ত থেকে ২ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৩ ইসরাইলি বাস্তুচু্যত হয়েছেন। পশ্চিম তীর থেকে ১ হাজার ২০৮ ফিলিস্তিনি বাস্তুচু্যত হয়েছেন। গাজায় ২৯ হাজার বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র ও শেল বর্ষণ করা হয়। ইসরাইলের উদ্দেশে ১৪ হাজার রকেট ছোড়া হয়। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ৪১ হাজার ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে ১৬ হাজার ৪৫৬ শিশু এবং ১১ হাজার নারী। মোট আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯২ হাজার। সম্প্রতি লেবাননে নিযুক্ত শান্তিরক্ষী বাহিনীর ওপর গত বৃহস্পতিবার হামলা করে ইসরাইল। এতে গত ৩ দিনে শান্তিরক্ষী বাহিনীর ৫ সদস্য আহত হন। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং বলেন, বিবদমান সব পক্ষের উচিত শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পরবর্তী সময়ে ইসরাইলি হামলার পুনরাবৃত্তি মেনে নেওয়া হবে না বলেও জানান গুতেরেস।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জানি। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, ২০২২ সালে শুরু হওয়া সংঘাতে ২০২৩ সালের ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত এক বছরে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩ লাখ সেনা হতাহত হয়েছে। সংঘাতে বহু বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বেসরকারি হিসাবমতে, বেসামরিক নিহতের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর তথ্যমতে, রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর গত ১২ মাসে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। রাশিয়ার প্রায় ৫ লাখ মানুষ দেশত্যাগ করেছে। সংঘাতে উভয় দেশের ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এক প্রতিবেদন মতে, ২০২২ সালের মধ্যেই ইউক্রেনের জিডিপি ৩০ শতাংশ সংকুচিত হয়। বিপরীতে রাশিয়ার অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে ২.১ শতাংশ। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে এসেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেমে থেমে বিরাজমান রয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ যুদ্ধের পর্দা এখনো নামেনি। ফলে, সেনা হতাহতের ঘটনা, শরণার্থীর সংখ্যা, অবকাঠামোগত ক্ষতি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
২০২১ সালের সামরিক অভু্যত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলন ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘাত চলছে। বার্মিজ সামরিক বাহিনী হত্যা, গণহত্যা, যৌন সহিংসতা, নির্যাতন, নির্বিচারে আটক, ধর্মীয় ভবনে হামলা, বেসামরিক ভবনে হামলাসহ যুদ্ধাপরাধ বাড়িয়েছে। ২০২১ সালে মিয়ানমারের ১৩টি রাজ্য ও অঞ্চলের স্কুলে ১৯০টিরও বেশি সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ৭.৮ মিলিয়ন শিশু শিক্ষার বাইরে ছিল। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১.৩ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচু্যত হয়েছিল এবং ১৩ হাজারের বেশি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চ নাগাদ ৫০ হাজার বেসামরিক ভবন ধ্বংস হয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে ১৮.৬ মিলিয়ন মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন ছিল বলে জানায় জাতিসংঘ।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, কম্বোডিয়ায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছে। সেব্রেনিকাতে বসনিয়ান মুসলমানদের গণহত্যার শিকার হতে হয়েছিল। রুয়ান্ডায় ১৯৯৪ সালের এপ্রিল-মে মাসে আট লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়- যা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম গণহত্যা। যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণ। এসব প্রতিটি ক্ষেত্রেই জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে বলা যায়, জাতিসংঘের কৌশলগত কারণেই এসব গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ চলমান রয়েছে। দীর্ঘ যুদ্ধে জর্জরিত ইয়েমেন। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
২০২৩ সালে সুদানের সামরিক এবং আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে সহিংস সংঘাত শুরু হয়- যা এখনো চলছে। ২ মে ২০২৪-এ যুদ্ধের বিষয়ে একটি মার্কিন সিনেটের শুনানিতে অনুমান করা হয়েছিল যে, ১৫ থেকে ৩০ হাজার লোক মারা গেছে। তাছাড়া, এ যুদ্ধে মানবিক কর্মীদের ওপর হতাহতের ঘটনা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে- যা এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি।
এসব যুদ্ধে ব্যাপকহারে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। নিহত ও আহত হয়েছে কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। লাখ লাখ শিশু শিক্ষা থেকে ঝরে পড়েছে, মারা গিয়েছে। কোটি কোটি মানুষ বাস্তুচু্যত হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বৈশ্বিক বাজারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের বাজার ছিল অস্থিতিশীল। খাদ্যাভাব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জাতিসংঘ যুদ্ধ বন্ধ, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখার যে মহান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তা মূলত বিশ শতক থেকে চলমান ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ এবং ২০২২ সাল থেকে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে বলা যায়। শুধু ইসরাইল-ফিলিস্তিন ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দিয়েই নয়, জাতিসংঘের ব্যর্থতার কাঠামো আরও নির্দিষ্ট করা যায় মিয়ানমারে দীর্ঘদিন থেকে চলমান সংঘাত, ইয়েমেন, সুদান ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের ঘটনার মাধ্যমে। এসব যুদ্ধ-বিগ্রহ ও সংঘাতে বিভিন্নভাবে পশ্চিমাদের সম্পৃক্ততা লক্ষ্য করা গেছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল রীতিমতো প্রভুত্ব বিরাজ করছে মার্কিন মদতে। তাছাড়া, সুদান ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধেও মার্কিনিদের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘদিন যাবত চলমান এসব যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এর জন্য জাতিসংঘের বৃহৎ শক্তিশালী দেশগুলোর প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা অন্যতম কারণ। এসব দেশের স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো সিদ্ধান্ত জাতিসংঘ আজ পর্যন্ত নিয়েছে কিনা, সেটা বলা মুশকিল। অতএব, বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘকে তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে। জাতিসংঘ সমগ্র বিশ্ব নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। ইসরাইলের দখলদারিত্ব ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও জাতিসংঘ ফিলিস্তিনিদের যৌক্তিক অধিকার আদায়ে সক্ষম হয়নি। কাশ্মীর সংকটও অমীমাংসিত, সংকট চলমান মিয়ানমার, দক্ষিণ সুদান, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনে। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের পক্ষপাতমূলক প্রভাবের কারণেই এসব সংকট দীর্ঘায়িত হয়েছে। জাতিসংঘ সেখানে নিষ্ক্রিয় দর্শক ছিল। নিরাপত্তা পরিষদের ৫ সদস্য দেশের কাছে জাতিসংঘের অসহায়ত্তের ছাপ বরাবরই স্পষ্ট।
জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব দ্যাগ হ্যামারশোল্ড বলেছিলেন, 'সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, কখন জানেন? যখন আমরা, অর্থাৎ পৃথিবীর মানুষ, জাতিসংঘকে পিকাসোর কোনো কিম্ভূতকিমাকার বিমূর্ত শিল্পকর্ম না ভেবে তাকে এমন একটা চিত্র ভাবব, যা আমরা নিজেরাই এঁকেছি।' জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ২০২২ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে বলেছিলেন, 'আজকের বিশ্ব বিপুল সংকটের সম্মুখীন। এই বিপদের কারণ অভাব, ক্ষুধা, অসাম্য ও অব্যাহত যুদ্ধ। আমাদের পৃথিবী জ্বলছে, সবচেয়ে দুর্বল যারা, তারাই এখন সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখে। জাতিসংঘ সনদে যে আদর্শের কথা বলা হয়েছে, আজ তা ব্যর্থ হতে চলেছে।'
ঐতিহাসিকভাবে জাতিসংঘের কিছু সফলতাও আছে। জাতিসংঘের মাধ্যমে পরিচালিত বিভিন্ন মানবিক সাহায্য কার্যক্রম, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শান্তি রক্ষায় অবদান এবং স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্য বিমোচনে যথেষ্ট অবদান রয়েছে জাতিসংঘের। অতীত ইতিহাস ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে বলা যায়, সত্যিই জাতিসংঘ সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এর কার্যকারিতা সম্পর্কে এখন প্রশ্ন উঠেছে। জাতিসংঘ এখন যুদ্ধ বন্ধ, মানবাধিকার ও সম্প্রীতি রক্ষার কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, বর্তমানে এর কাজ সম্পর্কে বলা যায়, বিবৃতি প্রদান, তীব্র নিন্দা জানানো, যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান করা শুধু।
জাতিসংঘের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে, নিরাপত্তা পরিষদ নামক শীর্ষ পঞ্চশক্তির বলয় থেকে সবার আগে বেরিয়ে আসতে হবে।
যুদ্ধ বন্ধ ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা তখনই সম্ভব, যখন জাতিসংঘ বিবৃতি প্রদান, নিন্দা জানানো ও যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান না করে যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ও তা বাস্তবায়ন করবে। এজন্য বিশ্ব মোড়লদের নিজস্বার্থ ও ক্ষমতার লোভ পরিহার করে বৃহত্তর স্বার্থে নিজেদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তবেই একটি সুন্দর ও শান্তির পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।
ইসতিয়াক আহমেদ হিমেল : কলাম লেখক