সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির খবর সামনে এসেছে- যা উদ্বেগের। আর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, ব্যাংক হিসাব জব্দ হওয়ার কারণ দেখিয়ে সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধ না করায় বেশ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আরও উৎকণ্ঠার বিষয় হলো- এটা জানা যাচ্ছে যে, সময়ের সঙ্গে পালস্না দিয়ে ক্রমেই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে রূপ নিচ্ছে। এছাড়া, নতুন করে আরও শিল্পপ্রতিষ্ঠান একই সংকটের দিকে এগুচ্ছে। এতে শিল্প খাত ফের অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে- এমনটি আলোচনায় এসেছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়া। কেননা, এমন পরিস্থিতিতে সংকট নিরসন না হলে ফের অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার যে আশঙ্কা তা এড়ানো যাবে না।
এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, ব্যাংক হিসাব জব্দের অজুহাত তুলে কোনো বিশেষ মহল নতুন করে শিল্প খাত অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে কিনা তা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা। আমরা মনে করি, পর্যবেক্ষকদের এই পরামর্শকে আমলে নিতে হবে এবং পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কেননা, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, শিল্প খাত অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে এর প্রভাব অত্যন্ত নেতিবাচক। অর্থনীতি থেকে শুরু করে সামগ্রিকভাবে প্রভাব পড়ে। ফলে, পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্ট লেনদেন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় এজন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কোনো কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (জব্দ) করেনি। অথচ এ ফাঁদেই শিল্প খাতে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে, আমরা মনে করি, পর্যবেক্ষকদের এই বিষয়গুলো যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি সংশ্লিষ্টদের এটাও এড়ানো যাবে না যে, প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, কর ফাঁকিসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের আওতায় থাকা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব বিএফআইইউ জব্দ না করলেও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির হিসাবগুলোর লেনদেন স্থগিত করেছে কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া নির্দেশনার বাইরে গিয়ে তারা নিজ উদ্যোগে এ কাজ করেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। মূলত গত সোমবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তারা বিষয়টি স্পষ্ট করে। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, সংকট তৈরির প্রকৃত কারণ নির্ণয় করে সেই মোতাবেক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। কেননা, কোনোভাবেই শিল্প খাতে অস্থিরতা তৈরি হলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। শ্রমিক অসন্তোষ উৎপাদন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে, রপ্তানি কমে যাওয়া, ক্রেতা হ্রাস পাওয়াসহ নানাবিধ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
বলা দরকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, যে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হোক, তাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থানে চলবে। তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেবে। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক চায় সব প্রতিষ্ঠান সচল থাকুক। তবে কেউ কেউ এই বিষয়গুলো নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে, হতে পারে কোনো ব্যাংক নিজ থেকে অতি-উৎসাহিত হয়ে করেছে। ফলে, এটিও আমলে নিতে হবে। অন্যদিকে, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে জানা যাচ্ছে, অনেকের আশঙ্কা, এটি কোনো পরিকল্পিত নীলনকশা। কিছু কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত শিল্প মালিক ব্যাংক হিসাব জব্দের ধুঁয়ো তুলে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ রেখেছে। এর মধ্যে তারা শ্রমিকদের অসন্তোষ উসকে দিয়ে শিল্প খাত অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
সর্বোপরি বলতে চাই, শিল্প খাতে অস্থিরতা তৈরি হওয়া কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। দেশেকে এগিয়ে নিতে, অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে শিল্প খাতের স্বাভাবিকতা জরুরি। সঙ্গত কারণেই যে বিষয়গুলো উঠে আসছে তা সুষ্ঠুভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। শিল্প খাত ফের অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে যে আশঙ্কা রয়েছে তা আমলে নিয়ে শিল্পখাতের স্বাভাবিকতা ফেরাতে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।