ক্ষুধা সূচকে অবনমন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে
প্রকাশ | ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে তিন ধাপ অবনমন হয়ে এবার ৮৪তম অবস্থানে নেমেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, দেশের ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি অপুষ্টির কারণে থমকে গেছে। আমরা মনে করি, একদিকে বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে তিন ধাপ অবনমন; অন্যদিকে, দেশের ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি অপুষ্টির কারণে থমকে গেছে- যা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ সমীচীন বলেই প্রতীয়মান হয়।
প্রসঙ্গত, সূচকের ওপর তৈরি দেশভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের এবারের স্কোর ১৯ দশমিক ৪। আর এই স্কোর নিয়ে ১২৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ঠেকেছে চুরাশিতম অবস্থানে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, গত বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১৯, ঠাঁই হয়েছিল সূচকের ৮১তম স্থানে। এবারের ক্ষুধা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ৫৬তম, নেপাল ৬৮তম, ভারত ১০৫তম ও পাকিস্তান ১০৯তম স্থানে। আমলে নেওয়া দরকার, বৈশ্বিক ক্ষুধা পরিস্থিতি তুলে ধরে শুক্রবার প্রকাশিত সূচকে অবনমনের এই তথ্যের সঙ্গে উঠে এসেছে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিশেষ করে শিশুদের ক্ষুধায় ভোগার চিত্র- যা থেকে তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থাও পাওয়া যায়। ফলে, সাবির্কভাবে যেসব তথ্য উঠে এসেছে তা যেমন আমলে নিতে হবে তেমনি এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগও নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
লক্ষণীয়, 'মধ্যম' মাত্রার ক্ষুধার দেশ হিসেবে শ্রেণিকৃত বাংলাদেশে ২০১৬ সালের চেয়ে ক্ষুধার মাত্রা কমেছে; সে বছর স্কোর ছিল ২৪ দশমিক ৭। এক্ষেত্রে এটাও বলা দরকার, ক্ষুধা সূচকে যে দেশের স্কোর যত কম, তাদের ক্ষুধার মাত্রা তত কম অর্থাৎ ক্ষুধামুক্ত বোঝায়। এছাড়া এটা উলেস্নখ্য যে, অপুষ্টির হার, ৫ বছরের কম বয়সিদের মধ্যে উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সিদের মধ্যে কম উচ্চতার শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সি শিশুমৃতু্যর হার- এই চারটি মাপকাঠিতে প্রতিটি দেশের পরিস্থিতি বিচার করে তৈরি হয় গেস্নাবাল হাঙ্গার ইনডেক্স-জিএইচআই বা বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক। যেখানে এই সূচকের সবচেয়ে ভালো স্কোর হলো শূন্য। আর সবচেয়ে খারাপ স্কোর হলো ১০০ পয়েন্ট। স্কোর বাড়লে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি, আর কমলে পরিস্থিতির উন্নতি। ফলে, সূচকের ওপর তৈরি প্রতিবেদন অনুসারে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১১.৯ শতাংশ অপুষ্টির শিকার এবং ২ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিনে পৌঁছানোর আগেই মারা যায়। সঙ্গত কারণেই এই বিষয়গুলো কতটা উদ্বেগের হতে পারে সেটি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
আমরা বলতে চাই, ক্ষুধা সূচকের অবনমনের বিষয়টি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি এটাও স্মর্তব্য, এর আগে এই আলোচনাও উঠে এসেছে যে, বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক পৃথিবীকে এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে। সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারি লাখ লাখ মানুষকে খাদ্য মূল্যবৃদ্ধির সংকটে ফেলেছে এবং এই সংকটের ঝুঁকিকে আরও বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া, ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সরবরাহ এবং খাদ্য, সার ও জ্বালানির মূল্যে আঘাত হেনেছে বলেও জানা গিয়েছিল। একটি উন্নয়নশীল ও সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়ার পেছনে অপুষ্টি গুরুতর এবং জটিল বাধা। কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করতে হলে যারা অপুষ্টির অধিক ঝুঁকিতে আছে, তাদের প্রাধান্য দিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে এমন আলোচনাও এর আগে উঠে এসেছে। ফলে, এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ফলে, যখন বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১১.৯ শতাংশ অপুষ্টির শিকার এবং ২ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিনে পৌঁছানোর আগেই মারা যায় বলে জানা যাচ্ছে, তখন এটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা অপরিহার্য।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে (জিএইচআই) বাংলাদেশের অবনমন হয়েছে- যা আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে- এমনটি কাম্য।