রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

বিজয়া দশমী

শুভশক্তির জয় হোক
  ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
বিজয়া দশমী

আজ বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। প্রসঙ্গত, সনাতনী শাস্ত্র অনুযায়ী এবার দুর্গা মর্তে এসেছেন দোলায় চেপে, আর ফিরবেন ঘোড়ায় চড়ে। উলেস্নখ্য, পুরাণমতে, 'দুর্গম' মতান্তরে মহিষাসুর নামক এক অসুর ছিল। তার কাজ ছিল সৃষ্টিকুলকে দুর্গতিতে ফেলা। সেই দুর্গম অসুরকে বধ করায় দেবীর নাম হয়েছে দুর্গা। দুর্গমকে বধ করে যিনি স্বর্গ থেকে বিতাড়িত দেবতাদের হৃত রাজ্যে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং জীবজগৎকে চিরকাল দুর্গতির হাত থেকে রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। ভারতবর্ষের বাঙালি হিন্দুমানসে দুর্গা প্রতিবাদের দেবী, প্রতিরোধের দেবী। একই সঙ্গে তিনি 'মাতৃরূপেণ' ও 'শক্তিরূপেণ'। দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করে দেবকুলকে রক্ষা করায় বিজয় ঘটে শুভশক্তির। দেবীর আগমন ঘটে অন্যায়ের বিনাশ ঘটিয়ে সজ্জনদের প্রতিপালনের অঙ্গীকার নিয়ে মানুষের মধ্যে নৈতিক আদর্শ জাগ্রত করার জন্য। মানুষের চিত্ত থেকে যাবতীয় দীনতা ও কলুষতা দূরীভূত করার জন্য।

দুর্গা দেবীর মাতৃরূপ ও শক্তিরূপ বাঙালি হিন্দু মানসে সমুজ্জ্বল। তিনি কেবল সৌন্দর্য-মমতা-সৃজনের আধার হিসেবেই বিবেচিত হন না, তিনি অসহায় ও নিপীড়িতের আশ্রয় বলেও গণ্য হন। তার এক রূপ অসুরবিনাশী, আরেক রূপ মাতৃময়ী ভালোবাসার। শক্তি ও মমতার এই দুই শক্তির গুণেই তিনি দেবকুলের কাছে পরম পুজনীয় হিসেবে গণ্য হন। মানবকুলের জন্য তিনি বহন করে আনেন মঙ্গলবার্তা। যে কোনো ধর্মের পরম প্রতীকের গুরুত্ব এখানেই যে, তা সব মানুষের মধ্যেই শুভবোধের সঞ্চার ঘটাতে সক্ষম। এটাই ধর্মীয় প্রতীকের সর্বজনীন তাৎপর্য। শারদীয় দুর্গাপূজা কেবল আরাধনার উপলক্ষই নয়, তা আনন্দ-মিলনের সুযোগও। সেই আনন্দ ধর্ম সম্প্রদায়ের গন্ডি ছাপিয়ে সমাজের সবাইকে আবাহন করে। কাছে ডেকে নেয়।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, সারাদেশে এবার ৩১ হাজার ৪৬১ মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। এর মধ্যে রাজধানীতে ২৫২টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি। সংগঠন দুটির হিসাবে ঢাকা মহানগরে এবার ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর ঢাকা মহানগরে ২৪৮টি পূজার আয়োজন হয়েছিল। সে হিসেবে এবার ঢাকা মহানগরে চারটি মন্ডপ বেড়েছে। এছাড়া মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বলেছেন, যেসব ক্ষেত্রে খোলা জায়গায় অস্থায়ী প্যান্ডেলে দুর্গাপূজা করা হবে, সেসব ক্ষেত্রে সরকার নির্দেশিত বিধি-বিধান মেনে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে পূজা আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্ধারিত দিনেই বিসর্জন দিতে হবে প্রতিমা। বিসর্জনের দিন শোভাযাত্রায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে। এছাড়া, দুর্গাপূজার শেষ পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তা থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

আমরা এ কথা বলতে চাই যে, বাংলাদেশ বরাবরই ধর্মীয় সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির এক মেলবন্ধ। সবাই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার- এই অধিকার নিশ্চিত হয়েছে মানুষের। সঙ্গত কারণেই দেখা যায়, দুর্গাপূজা পালনের মধ্য দিয়ে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও কল্যাণময় অবস্থানের বিকাশ আরও বিস্তৃত এবং বিকশিত হয়। উপরন্তু অশুভ শক্তির পরাজয় ঘটিয়ে মঙ্গলদায়ক, শুভশক্তি ও ইতিবাচক চেতনার সম্প্রসারণ ঘটে। মানুষে মানুষে প্রীতি, প্রেম, সহিষ্ণুতা, ঐক্য ও শান্তির ডাক দিয়ে যায় ধর্ম। কিন্তু তারপরও অসুরের আকস্মিক উন্মত্ততা নষ্ট করে দেয় আবহমানকালের প্রীতিধন্য পারস্পরিক সহাবস্থানকে। ধ্বংস করে দেয় দীর্ঘকালীন হৃদ্যকে। সৃষ্টি হয় বৈষম্য, বিভেদ, হিংসা, অন্যায় ও অকল্যাণ। আর এজন্যই মঙ্গলদাত্রী দেবী দুর্গার আগমন ঘটে কল্যাণ ও শান্তি সংস্থাপন করার জন্য। তিনি শুভ ও ন্যায়ের উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে যান সবাইকে। ফলে, দুর্গাপূজার মধ্য দিয়ে দূর হোক সব সঙ্কীর্ণতা ও বিভেদ এমনটি কাম্য।

সর্বোপরি আমাদের প্রত্যাশা থাকবে এটাই যে, শারদীয় দুর্গাপূজার সম্প্রীতির ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা অটুট থাক। সর্বত্র সত্য, ন্যায় ও শুভশক্তির জয় হোক। আজকের দিনে সনাতন ধর্মাবলম্বী সবার প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। শুভ বিজয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে