এ আইনটি সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নিবর্তনমূলক আইন, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ সরকার সাংবাদিক ও গণমাধ্যকর্র্মীদের দমন পীড়নের জন্য ২০২৩ সালে পুনরায় সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রবর্তন করে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে সেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো বিপদজ্জনক ধারা সাংবাদিক-গণমাধ্যমকার্মীদের জন্য মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকিস্বরূপ রয়েছে। যা সাংবাদিক সমাজ কখনো মেনে নিতে পারেননি। তবে তৎকালীন আইনমন্ত্রীর (বর্তমানে জেলে) প্ররোচনায় শেখ হাসিনা এ আইনটির পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য রাখতেন। মূলত শেখ হাসিনা সরকার ছিল সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকার্মীদের বিরুদ্ধে। তার এত দম্ভ ছিল তিনি সরকারের সমালোচনা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারতেন না। সমাজে দুর্নীতিবাজ ও অপকর্মকারীরা এই আইনটি গণমাধ্যকর্র্মীদের বিরুদ্ধে মস্ত বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতেন। যা সাংবাদিকদের মুক্ত ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করা দুরূহ ছিল। সাংবাদিকতা একটি মহৎ দায়িত্বশীল পেশা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার অবাধ ক্ষেত্র। এ আইনটি সাংবাদিক পেশার পরিবেশকে সংকুচিত করেছিল। বাকস্বাধীনতা মত প্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এ বিষয়গুলো খর্ব করার মতো সাইবার সিকিউরিটি আইনে ছিল, যা অমানবিক ও দুঃখজনক। সাংবাদিকরা প্রথম থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধের জন্য বহু আকুতি-অনুরোধকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পাত্তা না দিয়ে বরং কারাগারেই মৃতু্যবরণ, অজামিনযোগ্য ধারা, ছোট অপরাধের বড় দন্ড, একই বিষয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলাসহ এই আইনের কয়েকটি অসামঞ্জস্য খুবই বেদনাদায়ক। এতে সাংবাদিক, শিল্পী, সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছে। যে কোনো আইন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া, অথচ সেই আইন যদি জনগণের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, তাহলে ব্যক্তির স্বাধীনতা ও সুরক্ষা ব্যাহত হতে বাধ্য। মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এই আইনটি একটি খড়গ। এ আইনে জেনে বা বুঝে মিথ্যা তথ্য প্রচার করলে অনধিক ৩ বছরের কারাদন্ড বা ৩ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান রেখে আইন করা হয়েছিল। সাংবাদিক সমাজ বহু সভা-সমাবেশ, মিটিং মিছিল করেও এই আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধের ব্যাপার তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে আবেদন নিবেদন করেও কিছুই করতে পারে নাই। তবে এ আইনটি প্রবর্তনের পর থেকে অনিয়মগুলো তৎকালীন সরকার সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করেনি। মনে রাখতে হবে, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। তারা যে কোনো অন্যায়-অপরাধ করবে তা কিন্তু নয়। এরপরও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা তাদের লেখনির মাধ্যমে জাতির কাছে ভুল-ত্রম্নটি তুলে ধরে। যেখানে প্রেস কাউন্সিল আছে সেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা দরকার ছিল।
তথ্য ও যোগাযোগ এবং প্রযুক্তির বিপুল সম্প্রসারণের এই যুগে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন ও বিধিবিধানের প্রয়োজনীয়তা আমরা অস্বীকার করি না। পাশাপাশি দেশে সাইবার অপরাধ ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে বড় নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনা ঘটেছে। ফেসবুক, ইন্টারনেট ইত্যাদিতে অপরাধ বেড়েছে কিন্তু তাই বলে এ ধরনের আইন, যা শুধু সাংবাদিক সমাজ নয় দেশের মানুষের পরিপূরক।
প্রশ্ন হচ্ছে স্বাধীনতার পরে এখনো সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কেন? একাত্তরের যে কটি লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তার মধ্যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্য ছিল অন্যত্তম। সংবিধানেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু দেশে সাইবার বা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি নিবর্তনমূলক আইন করা হয়েছে। এত দিন এই আইনের যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল তাদের উলেস্নখযোগ্য একটি অংশই সাংবাদিক ও লেখক ছিলেন। অনেককে গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখিও করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের জামিনও মেলেনি সহজে। কী ভয়ানক! এ আইন। আশা করি, শিঘ্রই আইনটি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাতিল করার ঘোষণা দিবে।
\হ
মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী
ঢাকা