প্রতারণার ফাঁদ সচেতন হতে হবে

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রতারণা হচ্ছে স্বচ্ছ পথে অগ্রসর না হয়ে অসদুপায় অবলম্বন করে বাঁকা পথে কোনো কিছু অর্জনের চেষ্টা। বর্তমান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা এমন যে মানুষ খুব সহজেই একে অপরের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে। প্রতারণার মাত্রা এখন এতটাই প্রবল যে এটা বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য। এর ফলে মানুষ যেমন একে অপরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছে, একইভাবে ব্যক্তি পরিবার ও সমাজে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দিনে দিনে বৈষম্য ও অস্থিরতা বাড়ছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, 'মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।' একুশ শতকের প্রতারণাপূর্ণ সমাজে বাস করলে তিনি কী বলতেন। হয়তো বা বলতেন 'মানুষের প্রতি বিশ্বাস রাখা পাপ।' প্রশ্ন হচ্ছে আমরা নিজেদের এই অধঃপতনের জায়গায় কীভাবে নিয়ে এলাম। এটা একদিনে গড়ে ওঠেনি। কথায় বলে দুর্জনের ছলের অভাব নেই। পোশাকের বাহার, কথার বাহার, ক্ষমতা ও টাকার জাদু এবং নানা রকম প্রলোভন সামনে এনে মানুষকে মোহগ্রস্ত করে ফেলে প্রতারকরা। এরা বিভিন্ন নামে ও পেশায় তাদের পরিচয় দেয়। প্রতারকদের পালস্নায় পড়ে এদেশের অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ঢাকার মিরপুরে চাদাঁবাজি ও প্রতারণা করে টাকা লুট করে নেয়ার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের সময় আটকদের থেকে ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ধানমন্ডির একজন বাসিন্দা একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এক নির্মাণাধীন ভবনে তিন কোটি ৭৫ লাখ টাকা মূল্যের তিনটি ফ্লোর কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকায় বায়না করেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি ২৩ লাখ টাকা প্রদান করেন। পরে ওই কোম্পানির ডিএমডি ও এমডি মোবাইল ফোনে তাকে জানায় যে, রেজিস্ট্রেশনের জন্য বাকি টাকা সঙ্গে করে আনতে হবে। তখন বাদী বকেয়া টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যেমে দিতে চাইলে তাকে নগদ টাকা নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। পরে তিনি কিছু টাকা নিয়ে ওই কোম্পানির অফিসে গেলে হঠাৎ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন ব্যক্তি মুখে মাস্ক পরা অবস্থায় পিস্তল সদৃশ্য বস্তু দিয়ে গুলি করার ভয় দেখিয়ে ভিকটিমকে মারধর করে সঙ্গে থাকা টাকা কেড়ে নেয় ও আটকে রাখে। তাছাড়া ভিকটিমের স্ত্রীর কাছে থাকা বাকি টাকা এবং তার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। পরে ভিকটিমকে তার পরিবারের সঙ্গে অফিস কক্ষের পাশের রুমে আটকে রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে চলে যায়। তাদের চিৎকারে এক ব্যক্তি দরজা খুলে দিলে তারা রুম থেকে বের হয়ে আসেন। পরে মিরপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমদের উদ্ধার করে। মনে রাখতে হবে চারদিকে প্রতারণার ফাঁদ। প্রতারক সমাজে একজন নয়, অসংখ্য। এরা নানা ধরনের মুখোশ পরে কেউ আড়ালে আবডালে আবার কেউ প্রকাশ্যে প্রতারণা করছে। মানুষকে শোষণ নির্যাতন করে নানা ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে এরা অর্থবিত্তের মালিক হয়ে ক্ষমতার নগ্ন দাপট দেখাচ্ছে। মানুষ দুটো কারণে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। কেউ পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে আবার কেউ লোভের বশবর্তী হয়ে। রাতারাতি তাকে ধনী ও ক্ষমতাবান হতে হবে, এই স্বপ্ন তাকে পেয়ে বসে, বিভোর করে ফেলে। ফলে ওই ব্যক্তি নিষ্ঠুরতা অমানবিক ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়। এর পরিণতি কী হতে পারে ভেবেও দেখে না। কেউ অফিস খুলে চাকরি দেয়ার নামে, কেউ বিদেশে পাঠানোর নামে, কেউ অনলাইনে পণ্য কেনার নামে, কেউ বা হায় হায় কোম্পানি খুলে কোটি কোটি টাকা মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অবলীলায়। এদের প্রতিহত করতে হবে যে কোনো উপায়ে। না হলে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। দ্রম্নত সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে।