একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি অন্যতম প্রতিবন্ধক। এটাও আমলে নেওয়া দরকার, দুর্নীতি সম্ভাবনাকে শুধু বাধাগ্রস্তই করে না বরং দুর্নীতি সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায়। ফলে, যে কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতির চিত্র পরিলক্ষিত হলে তা আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, বিগত ১৫ বছরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের ২৩-৪০ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়েছে। টাকার অংকে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯ হাজার কোটি টাকা থেকে ৫১ হাজার কোটি টাকা। মূলত দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই হিসাব তুলে ধরেছে। তারা বলেছে, ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে এই দুর্নীতি হয়েছে। পক্ষগুলো হলো- মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী রাজনীতিক, আমলা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ঠিকাদার। 'সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। তথ্য মতে, টিআইবির গবেষণাটিতে ঠিকাদার, সড়ক বিভাগের আমলা ও প্রকৌশলীসহ ৭৩ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় এবং ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় বলে জানা গেছে। আর এসবের ভিত্তিতে টিআইবি একটি প্রকল্পে মোট বরাদ্দের কত শতাংশ ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ব্যয় হয়, তা হিসাব করেছে।
সার্বিকভাবে যে চিত্র উঠে আসছে তা আমলে নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। একইসঙ্গে দুর্নীতির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি কতটা শঙ্কার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তথ্য মতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যে সমাপ্ত প্রকল্পগুলো গবেষণাটির আওতায় আনা হয়েছে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরুর সময় ২০১০-১১ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত। এটাও আলোচনায় এসছে যে, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে ঘুষ লেনদেনে ২৩-৪০ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়। ফলে ত্রিপক্ষীয় 'সিন্ডিকেট' (চক্র) ভাঙতে না পারলে দুর্নীতিবিরোধী কোনো কার্যক্রম সফল হবে না- এমন মতও সামনে এসেছে, যা সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া জরুরি।
আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে দুর্নীতির বিয়ষ আমলে নিতে হবে এবং পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে দুর্নীতি রোধ এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। উলেস্নখ্য, প্রকল্পের স্তরভেদে দুর্নীতির হার ভিন্ন বলেও জানা যায়। টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে হারগুলো তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারদের লাইসেন্স ভাড়া নেওয়া, কোনো ঠিকাদারের প্রাপ্ত কার্যাদেশ কিনে নেওয়া, নিয়মের বাইরে উপঠিকাদার নিয়োগ (সাবকন্ট্রাক্ট), প্রতিযোগী ঠিকাদারের সঙ্গে সমঝোতা, স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক চাঁদাবাজিসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে। এছাড়া, এটি লক্ষণীয় যে, টিআইবি বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা সরাসরি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আনুকূল্য পাওয়ায় নিম্নমানের কাজ করা বা প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতির জন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না। কয়েকজন ঠিকাদারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দৃষ্টান্ত নেই। এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুবই নিম্নমানের প্রকল্প প্রস্তাব ও ফরমায়েশি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে বলেই গবেষণায় দেখিয়েছে টিআইবি। তারা তুলে ধরেছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নের নজিরও রয়েছে! অর্থাৎ গবেষণায় নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। ফলে, সার্বিক বিষয় আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বিগত ১৫ বছরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের ২৩-৪০ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়েছে। টাকার অংকে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯ হাজার কোটি টাকা থেকে ৫১ হাজার কোটি টাকা- এই তথ্যগুলো কতটা উদ্বেগ ও শঙ্কার তা সহজেই অনুমেয়। ফলে সার্বিকভাবে দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্য আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। একইসঙ্গে দুর্নীতি রোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।