গতি ফিরেনি অর্থনীতিতে সঠিক পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ | ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ, চাঁদাবাজি, অনেক কারখানায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের মতো ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য বন্ধ হয়ে পড়ে অনেক কারখানা। বিরূপ পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসায়ী ও শিল্পমালিক কারখানায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। এর আগে আন্দোলনের কারণে গত জুলাই মাসের পুরোটাই কাটে অস্থিরতায়। টানা তিন মাসের এই অস্থিরতার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে। অনেক শিল্পে উৎপাদন কমে গেছে। কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নতুন বিনিয়োগ না আসায় নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এর মধ্য উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকে বড় নিয়ামক ভাবছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অর্থনীতির চাকা সচল করতে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তাদের মতে প্রথমত, দেশে আইনশৃঙ্খলায় স্থিতিশীলতা দরকার। দ্বিতীয়ত, ডলারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, বাজারকে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট মুক্ত করতে হবে।
অর্থনৈতিক সংকটসহ বিভিন্ন কারণে গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর এই দুই মাসে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গ্রম্নপের বেশ কিছু কোম্পানি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলেও কর্ম হারাবেন হাজারো কর্মী। এতে নতুন করে অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে শিল্পকারখানা। যা হবে অর্থনীতির জন্য অশুভ বার্তা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার অন্যান্য খাতের মতো অর্থনীতিতেও সংস্কারে হাত দিয়েছে। এর ইতিবাচকতা স্পষ্ট হচ্ছে। তবে, এর ফল পেতে আরও সময়ের প্রয়োজন। মূলত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে থেকেই বৈশ্বিক যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ কারণে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, পণ্য বিক্রি কমে যাওয়া, সুদের উচ্চ হার, শ্রম অসন্তোষ, ডলার সংকটে শিল্পে কাঁচামালের ঘাটতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দেশের অর্থনীতিতে। এরপর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে আকস্মিক ভয়াবহ বন্যায় মড়ার ওপর খাঁড়া ঘা হয়ে দাঁড়ায় দেশের অর্থনীতির জন্য।
তবে সেপ্টেম্বর মাসে দেশের পিএমআই সূচক কিছুটা আশা জাগাচ্ছে। আগের মাসের তুলনায় এ মাসে বাংলাদেশ পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (পিএমআই) ৬.২ পয়েন্ট বেড়ে ৪৯.৭ এ পৌঁছেছে। দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা বোঝাতে পিএমআই সূচককে গুরুত্ব দিয়ে দেখেন বিনিয়োগকারীরা। সাধারণত পিএমআই সূচক ৫০ বা তার উপরে হলে দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয়।
অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে এর মধ্যেও নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিছু কিছু প্রভাবও পড়েছে। আইনশৃঙ্খলার অনেকটা উন্নতি হয়েছে, তবে স্থিতিশীলতা দরকার। এখনো মানুষ আতঙ্কে আছেন কখন কী হয়। সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমলেও বাজারে প্রভাব পড়েছে না। উল্টো নিত্যপণ্যের বাজার বেসামাল। বাজারে চাঁদাবাজি ও সাপস্নাই চেইনে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। তা না হলে পণ্যমূল্য কমবে না। মানুষ স্বস্তি পাবে না। সরকারের সঠিক পরিকল্পনাই কেবল পারে অর্থনীতিতে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং জনআস্থা বাড়াতে।