মঙ্গলবার ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যাকবলিত ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তথ্য মতে, নতুন করে দুই জেলার আট উপজেলার অন্তত ৪০ গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে আছেন আড়াই লক্ষাধিক মানুষ। তবে শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কমতে শুরু করেছে সেখানকার পানি- এমনটি খবরে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির যে চিত্র সামনে আসছে তা আমলে নিতে হবে এবং সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে।
বলা দরকার, সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালীসহ দেশের ১১ জেলার বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেশবাসী দেখেছে। আবার নালিতাবাড়ীসহ শেরপুরের কয়েকটি উপজেলা ও ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া-হালুয়াঘাটসহ কিছু এলাকা ব্যাপকভাবে পস্নাবিত হয়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখন যখন ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার পরিস্থিতির আরও অবনতির খবর জানা যাচ্ছে, তখন সামগ্রিক বিষয় পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দ্রম্নত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, নেত্রকোনার পূর্বধলার জারিয়া এলাকা কংস নদের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধের দুই স্থান। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানি ও খাদ্যের সংকট। তবে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। অন্যদিকে, লক্ষণীয়, মঙ্গলবার দুপুরে বন্যাসম্পর্কিত নিয়মিত প্রতিবেদনে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলেছে, তিন জেলার সাড়ে ৬৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া বন্যায় ৮ জনের মৃতু্যর তথ্য দিয়েছে, যাদের সবাই শেরপুর জেলার। আমলে নেওয়া দরকার, বন্যায় রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। অসংখ্য বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের জীবনে নেমে এসেছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা বলেছেন, প্রতি বছরই অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে আকস্মিক বন্যা হলেও তা বেশি স্থায়ী হয়নি। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবার পানির পরিমাণ আগের চেয়ে বেশি এবং তা বেশি স্থায়ী হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেশি হচ্ছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক। ফলে, এই বিষয়গুলো আমলে নেওয়া জরুরি।
ময়মনসিংহ জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মঙ্গলবার জানিয়েছেন, সকালের টানা বৃষ্টিতে কংস ও নেতাই নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কংস নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা ধোবাউড়া উপজেলার আইলাতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশ কয়েকটি ঘরে পানি ওঠায় দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। এছাড়া মঙ্গলবার ভোর থেকে টানা কয়েক ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় নেত্রকোনায় বেড়েছে বন্যার পানি। এতে পস্নাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্বধলার জারিয়া বাজার এলাকায় মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। উব্দাখালীর পানি কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলেও জানা যায়। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। এটাও লক্ষণীয় যে, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নেত্রকোনার ছোট-বড় সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও, শেরপুরের ভোগাই-কংসের পানি জারিয়া এলাকায় কংস নদ দিয়ে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীতে প্রবাহিত হয়। এতে দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা, বারহাট্টা ও সদর পাঁচটি উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই।
সর্বোপরি বলতে চাই, একদিকে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, আবার ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার পরিস্থিতির আরও অবনতি খবর জানা যাচ্ছে- ফলে, সার্বিক অবস্থা আমলে নিতে হবে। যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে তৎপর হতে হবে। এ ছাড়া সমাজে যারা ধনাঢ্য তাদের এগিয়ে আসতে হবে। দলমতনির্বিশেষে সবাইকে বানভাসিদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহসহ মানবিক তৎপরতা চালাতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সব ধরনের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।